উহানের যে লেখকের ভাইরাস ডায়েরিতে ক্ষেপেছে চীন

নিজস্ব ডেস্ক প্রতিবেদক : চীনের উহানের লেখক ফ্যাং ফ্যাং জানুয়ারিতে করোনা সময়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে যখন অনলাইনে লিখতে শুরু করেন তখন পর্যন্ত এটাকে স্থানীয় সংকট মনে করা হচ্ছিল।

৬৫ বছর বয়সী ফ্যাং ফ্যাংয়ের সেই ডায়েরি গোটা বিশ্বে ব্যাপকভাবে পড়া হয়। উহান শহরে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাবের চিত্রও প্রথম প্রকাশ পেয়েছিল সেই ডায়েরিতে।

এই বছরের শুরুর দিকে, বিশ্বের প্রথম শহর হিসেবে উহানে সবার প্রবেশে নিষেধাষজ্ঞা জারি করা হয়। বর্তমানে যা গোটা বিশ্বে চলছে। শহরটি ওই সময় শুধু চীন নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল।

লকডাউন চলাকালী সময়ে ডায়েরি লেখার কারণে ফ্যাং ফ্যাংয়ের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। প্রকাশকরা ওই তার লেখা বই আকারে ছাপার ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে তা কয়েকটি ভাষায় ছাপা ও হয়।

তবে ফ্যাং ফ্যাংয়ের এই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি চীনে অনেকেই ভালো চোখে দেখছেন না। অনেকেই তার লেখায় ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। কেউ কেউ তাকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবেও আখ্যা দিয়েছেন।

জানুয়ারির শেষের দিকে চীনের উহানে যখন লকডাউন জারি করা হয় তখন ফ্যাং ফ্যাং যার আসল নাম ওয়াং ফ্যাং শহরের বিভিন্ন ঘটনা দেশটির সামাজিক মাধ্যম ওয়েবোতে তুলে ধরেন।

ফ্যাং ফ্যাংয়ের সেই ডায়েরিতে তার দৈনন্দিন জীবনের চ্যালেঞ্জ থেকে শুরু করে জোর করে এভাবে বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে যে মানসিক প্রভাব হয়েছিল তা নিয়েও লিখেছেন।

প্রকাশক হার্পারকোলিনস বলেছেন ফ্যাং ফ্যাংয়ের লেখায় লকডাউনে আটকে থাকা মানুষের হতাশা, ক্ষোভের কথা উঠে এসেছে। একই সঙ্গে লাখ লাখ মানুষকে তিনি আশার বাণীও শুনিয়েছেন।

তিনি আরও বলেছেন, ফ্যাং ফ্যাং সামাজিক অবিচার, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অন্যান্য সমস্যার বিরুদ্ধেও কথা বলেছেন যা মহামারির প্রতিক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেছে। তিনি বলেন, এসব লেখার কারণেই অনলাইনে ফ্যাং ফ্যাং নিজেকে বিতর্কিত করেছেন।

যেই সময়ে চীনে সব ধরনের সংবাদ যাচাই করে হতো এবং স্বাধীন সংবাদ প্রচারের সংখ্যা খুবই কম ছিল সেই সময় ফ্যাং ফ্যাংয়ের মতো পরিচিত লেখকের লেখা অনেকের কাছেই বিশ্বাসযোগ্য খবরের উৎস হয়ে উঠেছিল।

সামাজিক মাধ্যম ওয়েইবোতে অনেকেই তার প্রশংসা করেন। সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টের জানায়, একজন ওয়েইবোর ব্যবহারকারী লিখেছেন, এই দেশে আপনার মতো বিবেকের অধিকারী লেখক দরকার। দেশের জনগণ অফিসিয়াল মিডিয়া থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলেছে।

চীনের সামাজিক মাধ্যমে সাইবার-জাতীয়তাবাদ প্রচলিত একটি বিষয়। যখনই চীনের সমালোচনা করা হয়, অপমান করা হয় বা কোনওরকম বিদেশি অবমাননার শিকার করা হয় তখন হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ নেটিজেন নিজেদের এগিয়ে দিতে প্রস্তুত থাকে। ফ্যাং ফ্যাং প্রথম চীনের প্রথম লেখক যিনি অনলাইনে নেতিবাচক সমালোচনার মুখোমুখি হননি।

তবে ভাইরাসটি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে মানুষজন এর প্রাদুর্ভাব নিয়ে চীনের আরও সমারোচনা শুরু করে। ঠিক এই সময়ে ফ্যাং ফ্যাংয়ের লেখা পশ্চিমে ভালো বিক্রি হওয়ার কথা জানা যায়।

অনেক ওয়েইবো ব্যবহারকারী বলছেন, উহানে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ে লেখা ফ্যাংয়ের সমালোচনামুলক অনুবাদটি চীন বিরোধীদের জন্য আরও সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

এরপর দ্রুতই তাকে সত্যের বাহক নয়, চীনের একজন প্রতারক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অনেকেই বলতে থাকেন, নিজের খ্যাতিকে তিনি পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করছেন।

গ্লোবাল টাইমসে বলা হয়েছে, ফ্যাং ফ্যাংয়ের লেখায় শুধুমাত্র উহানের খারাপ দিকটা তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু গোটা দেশকে বাঁচাতে সেখানকার মানুষজনের যে চেষ্টা সেটা উপেক্ষিত হয়েছে। সূত্র: বিবিসি

Share