ওসি’র নির্দেশেও এক মুক্তিযোদ্ধা’র বিধবা স্ত্রীর অভিযোগ নিলোনা পল্টন থানা

হুমায়ুন কবির : ওসি’র নির্দেশেও এক মুক্তিযোদ্ধা’র বিধবা স্ত্রীর অভিযোগ নিলোনা পল্টন থানা । ঢাকার দেউলিয়া আদালতের ৪/৯৯ নং মামলার নিলাম কার্যক্রম এবং দখল হস্তান্তরের আদেশ কেন বাতিল করা হবেনা তা জানতে চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ গতকাল সোমবার এক রুল জারি করেন। একই সঙ্গে দেউলিয়া আদালত কর্তৃক অনুমোদিত নিলামের কার্যক্রম স্থগিত আদেশ সহ বিবাদীদের বিরুদ্ধে নিষেধাঙ্গা জারি করেন।

রিট আবেদনকারী প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সেনা বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজরের স্ত্রী রোখসানা পারভীন জানান, ইতোপূর্বে তার ৩৬/২ কাকরাইলস্থ বাড়ীটি ঢাকার দেউলিয়া আদালতের ৪/৯৯ নং মামলার ১১-০৬-২০১৭ তারিখের ১৯৩ নং আদেশে পল্টন থানার ওসিকে শুধুমাত্র আড়াই কাঠা ভুমি বাবদ নিলাম গ্রহিতাকে দখল বুঝে দেয়ার কাজে সহায়তা করার আদেশ প্রদান করা হয়। এই আদেশবলে গত ২১-০৬-২০১৭ তারিখে আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে আড়াই কাঠা ভুমির বদলে অসহয় এই মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের নিলাম বহির্ভূত ৬ তলা ভবন বে আইনী ভাবে নিলাম গ্রহিতার অনুকুলে দখল বুঝে দেয়া হয়। এই বে আইনী কর্মকান্ডের ফলে দীর্ঘ দিন আইন আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে ঘুরতে অবশেষে হাইকোর্ট জাল চক্রের জাল নিলাম্ও দখলকার্যক্রম স্থগিত করে নিলাম গ্রহিতাসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রদান সহ রুল জারী করেন। রোখষানা পারভীন হাইকোর্টের আদেশের আইনজীবি সনদ ও আনুসাঙ্গিক কাগজ সংযুক্ত করে আদেশ অবগত ও তার বাড়ীতে শান্তি ভংগের আশঙ্কায় এক লিখিত আবেদনসহ গতকাল বিকাল ৫ টায় পল্টন থানায় যান। থানার কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তা তাকে দীর্ঘক্ষন বসিয়ে রেখে অবশেষে বলেন ওসি সাহেব না বললে আমরা এই অভিযোগটি নিতে পারবো না । তখন তার পক্ষ থেকে পল্টন থানার ওসির নাম্বারে কল করে অভিযোগের বিষয়ে অবগত করা হলে ওসি ঐ নাম্বারেই কর্তব্যরত পুরিশ কর্মকর্তাকে অভিযোগটি নিতে বলেন। ওসির এই নির্দেশর পরে ও কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তা রোখসানা পারভীনের অভিযোগটি গ্রহন না করে বলেন আদালতের মাধ্যমে আদেশ না আসলে অভিযোগ নিতে পারবো না। শত অনুরোধেও তার অভিযোগটি গ্রহন করা হয়নি।

ঘটনার বিষয়ে রোখসানা পারভীন বলেন, আমার বাড়ী বে আইনী ভাবে দখল বুঝিয়ে দিতে পল্টন থানার পুলিশের অসুবিধা হয়নি।অথচ আমার আইন সঙ্গত অভিযোগ পল্টন থানা গ্রহণ না করে আমার সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুন্ন করেছে। আমি সারাদিন রোজা রেখে ক্লান্ত অপার বেলায় আমাকে ১ ঘন্টা বসিয়ে রেখে ওসির নির্দেশেও অভিযোগ নেয়া হলো না। তাহলে নিরাপত্তা ও শান্তি শৃঙ্খলার বিষয়ে আবেদন জানাতে কোথায় যাবো?

রোখসানা পারভীন জানান, ৩৬/২ কাকরাইলস্থ ভবনটির মালিক তিনি। মেসার্স নিয়াজ গার্মেন্টস এর অনুকুলে ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক ৩৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকার ঋণ প্রদান করে। এই ঋনের বিপরীতে কোম্পানী কাফরুল থানার এক জমি ব্যাংকের অনুকুলে মটগেজ প্রদান করেন। পরবর্তীতে কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে যায়। ফলে সময় মত ঋন পরিশোধ না করায় ব্যাংক অনাদায়ী ঋণের সুদাসল ৫৩ লাখ ২২ হাজার টাকার খেলাপি ঋণ আদায়ে ১৯৯৯ সালে কোম্পানির বন্দককৃত জমি নিলাম করে টাকা আদায়ের চেষ্টা না, করে কোম্পানী ও তার পরিচালকদের দেউলিয়া ঘোষনা করতে ঢাকার দেউলিয়া আদালতে ৪/৯৯ নং মামলা দায়ের করেন। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাদের মামলায় ঐ কোম্পানির ৪০% শেয়ার হোল্ডার রোকসানা পারভীনের বসত বাড়ীটিই শুধু দেউলিয়া আদালতের বি তপশিল দেখান। কিন্তু অন্য পরিচালকদের কোন সম্পত্তির বিবরণ দেননি। অবশেষে ২০০৮ সালে কোম্পানি ও তার ৪ জন পরিচালককে দেউলিয়া ঘোষনা করা হয় এবং অসহায় ঐ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার রোকসানা পারভীনের বি তপসিল বর্ণিত সম্পত্তি বিক্রয় করে ব্যাংকের টাকা আদায়ে অবসর প্রাপ্ত জেলা জজ সুলতান আহম্মেদ মিঞাকে রিসিভার নিয়োগ করা হয়। রোকসানা পারভীনের স্বামী বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সেনা বাহিনীর অবসর প্রাপ্ত মেজর, কাজী মাজেদুর রহমান ২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর মারা যাওয়ার পর রিসিভার অসহয় ঐ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের বি তপসিল বর্ণিত সম্পত্তি নিলামে বিক্রয় করার জন্য ১৩ মে ২০১৫ তারিখের জাতীয় দৈনিক যুগান্তর ও দৈনিক খবর পত্রিকায় নিলাম দরপত্র আহবানের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হবার কথা আদালতে উল্লেখ করেন। অথচ বর্ণিত তারিখের উল্লেখিত দু’টি পত্রিকায় এ ধরনের কোন নিলাম দরপত্রের বিজ্ঞপ্তিই প্রকাশিত হয়নি। উপরন্ত এই জাল জালিয়াতির নিলামে ঐ আড়াই কাঠা সম্পত্তির উপরে থাকা ভবনের কথা গোপন করে কারসাজির মাধ্যমে ১০ কোটি টাকার সম্পদ ১ কোটি ২০ লাখ টাকায় নিলাম বিক্রয় আদালতের মাধ্যমে সম্পন্ন করে নিলাম গ্রহিতার অনুকুলে ঐ আড়াই কাঠা জমি হস্তান্তর বাবদ ঢাকা সাব রেজিঃ অফিসে ১৮১৩/১৬ নং দলিল সম্পাদন করেন। ঐ দলিলেও ৬ তলা ভবনের কথা গোপন করা হয়। রিসিভার পল্টন থানার পুলিশসহ শত শত লাঠিয়াল নিয়ে গত ২০১৭ সালের ২১ জুন তারিখে নিলামকৃত জমির দখল নিলাম গ্রহিতার অনুকুলে বুঝিয়ে দিতে এসে ৬ তলা ভবনটিসহ দখল বুঝিয়ে দেন। ফলে এই মুক্তযেোদ্ধা পরিবারটি পথে বসে।
এ বিষয়ে জানার জন্য পল্টন থানার ওসির কাছে ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।

Share