করোনার শিক্ষাটা যেন আমরা ভুলে না যাই : শাবনুর

করোনায় আতঙ্কের কিছু নেই, সতর্কতাই বেশি জরুরি

নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : আমি আছি এখন অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। আমার সন্তান, মা, ভাইবোনসহ পরিবারের সবাই এখানেই আছি। এখানে করোনা পরিস্থিতি অতটা ভয়াবহ নয়। সবাই নিয়ম মানছেন। রাস্তায় অকারণে বের হলে বড় অঙ্কের জরিমানার বিধানও চালু করেছে সরকার। তবে আমার প্রাণের দেশ বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি দিন দিন জটিল আকার ধারণ করছে। দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে উদ্বেগ বাড়ছে, মনটা বিষণ্ন। খবর দেখে জানতে পারি, অনেকে এখনো অকারণে বাসার বাইরে যান, যা মোটেও ঠিক নয়। তবে এটা ঠিক, শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষ কষ্টে আছেন। সরকার নানা ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে। সামনে আরও ভালো ভালো উদ্যোগ নেবে, এমনটাই আশা করছি।

দেশের মানুষ সবাইকে বলতে চাই, করোনার এই সময়ে আপনারা ঘরে থাকুন, প্লিজ। ঘরে থেকে পরিবারের সবার সঙ্গে সম্পর্কগুলো ঝালিয়ে নিন, যা এত দিন কর্মব্যস্ততার দোহাই দিয়ে করতে পারেননি। অকারণে প্লিজ বাইরে বের হবেন না। বাইরে যাওয়ার অনেক সময় পাবেন। কারণ, করোনার সংকট একদিন কেটে যাবে।

অনেকে হয়তো বলবেন, দিনের পর দিন এভাবে ঘরবন্দী থাকতে ভালো লাগে না। কিন্তু এখন যে কিছুই করার নেই। করোনাভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য ঘরে থাকাটাই সবচেয়ে নিরাপদ। আর কাউকে যদি নিতান্তই বাইরে বের হতেই হয়, তাহলে অবশ্যই হাত, মুখ ও চোখের প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিয়ে বের হবেন। মাস্ক, গ্লাভস পরবেন। আর বাইরে থেকে ঘরে এসে কাপড়চোপড় ভালো করে ধুয়ে গোসল করে ঘরে ঢুকবেন। মনে রাখবেন, আপনার একজনের অসতর্কতার কারণে পরিবারের অন্যদেরও ভুগতে হতে পারে।

ঘরে থাকা মানুষগুলো সময় কাটাতে চাইলে বই পড়তে পারেন, দেখতে পারেন সিনেমা, শুনতে পারেন গান। ঘরের বাইরে কিংবা দেশের বাইরে থাকা প্রিয়জনদের সঙ্গে কথা বলুন, অনলাইনে আড্ডাও দিতে পারেন। মনে রাখবেন, এটা এমন একটা রোগ, চাইলে সেই মানুষটার সেবা আপনি করতে পারবেন না, অন্য রোগ হলে যেখানে করতে পারতেন। একই সঙ্গে নিজের মনের ভেতরে পরিবর্তনটাও নিয়ে আসেন।

করোনায় আতঙ্কের কিছু নেই। সতর্কতাই সবচেয়ে বেশি জরুরি। পরিস্থিতি যা–ই আসুক, কোনোভাবে ভয় পাওয়া যাবে না। চিন্তা হবে, সেই সঙ্গে সতর্ক এবং সাবধানও থাকতে হবে। ঘরে বসে সবার জন্য প্রার্থনা করব। সারা পৃথিবীর মানুষের জন্য শুভকামনা করব।

বিশ্বব্যাপী সবাইকে করোনা একটা সুন্দর শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে। কোনোভাবেই এই শিক্ষাটা যেন আমরা ভুলে না যাই। নিয়মিত হাত ধোঁয়া, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, মানবতাবোধ, হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে ভালোবাসার পৃথিবী গড়া—এ মানসিকতা যেন আমরা তৈরি করতে পারি। ‘একা বাঁচব’—এই মনোভাব নিয়ে যেন না চলি। তবে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে, আমরা যেন এই সময়টায় সবাই সবার পাশে থাকি। আশপাশের অসহায় ও অসচ্ছল মানুষের জন্য ভাবি। নিজেরাই যদি নিজেদের আশপাশের মানুষকে দেখে রাখি, তাহলে কিন্তু এই মানুষগুলোর সমস্যা কেটে যায়। সবাইকে মনে রাখতে হবে, এ ধরনের সংকট সব সময় আমাদের সামনে আসে না। এটা মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রমাণেরও সুযোগ। তাই আমরা যেন ভালোবাসা নিয়ে সবার পাশে থাকি। সাহায্য করি এমনভাবে, যেন সাহায্যপ্রাপ্ত মানুষটি অসম্মানিত বা অপমানিত না হন।

Share