করোনা এখনও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব, উদাহরণ ধারাবী বস্তি: ডব্লিউএইচও

নিজস্ব ডেস্ক প্রতিবেদক : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান টেড্রোস আধানম ঘ্রেবেইয়েসাস বলেছেন, বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া মহামারি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) এখনও নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। সেক্ষেত্রে উদাহরণ হতে পারে এশিয়ার সবচেয়ে বড় ও ঘনবসতিপূর্ণ বস্তি মুম্বাইয়ের ধারাবী। শুক্রবার জেনেভা থেকে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি। খবর এনডিটিভির।

করোনা আক্রান্ত ও প্রাণহানির নিয়মিত তথ্য প্রকাশ করা ওয়ার্ল্ডোমিটারের হিসেবে, শুক্রবার পর্যন্ত বিশ্বে সংক্রমিত হয়েছে ১ কোটি ২৬ লাখ ৩০ হাজার ৬৩৪ জন। আর প্রাণ গেছে ৫ লাখ ৬২ হাজার ৮৮৮ জনের। জুন থেকে সংক্রমণের মাত্রা বাড়ছে হুহু করে।

ডব্লিউএইচও মহাপরিচালক টেড্রোস হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, গত দেড় মাসে বিশ্বব্যাপী করোনার সংক্রমণ তার আগের সময়ের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। তবে বিশ্বে এমন একাধিক জায়গার উদাহরণ রয়েছে, যেখানে করোনা পরিস্থিতি বেড়ে যাওয়ার পরও নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।

উদাহরণ হিসেবে ট্রেডোস বলেন, ইতালি, স্পেন ও দক্ষিণ কোরিয়া এমনই দেশ, যারা কৌশলী পন্থা অবলম্বন করে নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে। এমনকি মুম্বাইয়ের ঘিঞ্জি বস্তি ধারাবীও এক্ষেত্রে সফল।

ধারাবীকে বলা হয় এশিয়ার সবচেয়ে বড় ও ঘিঞ্জি বস্তি। মুম্বাই শহরের মধ্যে আড়াই বর্গকিলোমিটার জুড়ে এ বস্তিতে সাড়ে ৬ লাখ মানুষের বাস। ৪৭ হাজার বস্তিঘর একটি আরেকটির সঙ্গে লাগানো। অথচ এমন ঘিঞ্জি বস্তিতে করোনার সংক্রমণ ঘটলেও মারা গেছেন একজন মাত্র মানুষ। মুম্বাই শহরেই যেখানে প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ, সেখানে বস্তির ভেতরে মোট আক্রান্ত হয়েছে ২ হাজার ৩৩৫ জন। শুধু তাই নয়, সর্বশেষ আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে গত ৫ এপ্রিল একজন। এরপর আর কেউ শনাক্ত হয়নি।

প্রশ্ন হলো, এমন বস্তিতে যেখানে সামাজিক দূরত্বের কথা বলাটাই হাস্যকর এবং সেখানে একজন আক্রান্ত হলে, পুরো বাসিন্দারাই সংক্রমণের শিকার হওয়াটাই স্বাভাবিক, সেখানে কীভাবে মহামারির নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হলো?

মুম্বাইয়ের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বাস্তবতা মেনে নিয়েই করোনা মোকাবেলার কর্মকৌশল সাজিয়েছে ধারাবী বস্তিতে। করোনার প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকে ধারাবী বস্তির প্রায় প্রতিটির দরজায় গিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। সবার শরীরের তাপমাত্রা ও অক্সিজেনের মাত্রা পরীক্ষা করেছেন তারা। যাদের শরীরের তাপমাত্রা বেশি, তাদের জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয় ফিভার ক্লিনিক। আর যাদের উপসর্গ করোনার লক্ষণের সঙ্গে মিলে যায়, তাদের দ্রুত কোয়ারেন্টিন সেন্টার বানানো স্কুল ও স্পোর্টস ক্লাবে স্থানান্তর করা হয়। যার কারণে মহামারির হটস্পট থেকে ধারাবী আজ করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধজয়ের উদাহরণ হয়েছে।

এ বিষয়টিকেই তুলে ধরে ডব্লিউএইচও প্রধান বলেন, যেসব জায়গায় করোনা সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি, সেখানে বেশি মাত্রায় টেস্ট করতে হবে। জাতীয় ঐক্যের সঙ্গে জোরালো পরীক্ষা, শনাক্ত ও কোয়ারেন্টিন ও যারা অসুস্থ তাদের চিকিৎসার মাধ্যমে এই মহামারি সংক্রমণের শিকল ভাঙা ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

Share