কোটি টাকাসহ আটক একজন ‘হাওয়া ভবনের’: বেনজীর

নিজস্ব প্রতিবেদক : বেনজীর আহমেদবেনজীর আহমেদর‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেছেন নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে একটি চক্র কোটি টাকার লেনদেন করছে। গত দুই মাসে প্রায় দেড় শ কোটি টাকা বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়েছে। এর কথিত মালিক মাহমুদের অ্যাকাউন্টে এক মাসে ৭৩ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। কালো টাকার মাধ্যমে নির্বাচনকে প্রভাবিত করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর মতিঝিলের সিটি সেন্টারে এক ব্রিফিংয়ে বেনজীর আহমেদ এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, এই টাকার একটি অংশ গতকাল শরীয়তপুর-৩ আসনের বিএনপির প্রার্থী মিয়া নুরুদ্দিন আহমেদের (অপু) কাছে পাঠানোর পরপর সেখানে নির্বাচনী সহিংসতা হয়েছে। কোটি টাকাসহ আটক তিনজনের একজন হাওয়া ভবনে কাজ করতেন।

কোটি টাকা ছড়িয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টার অভিযোগে রাজধানীর মতিঝিল থেকে এক ব্যবসায়ীসহ তিনজনকে আটক করেছে র‌্যাব। তিনজন হলেন, আলী হায়দার (২৪), আলমগীর হোসেন (৩৮) ও জয়নাল আবেদীন (৪৫)।

বেনজীর আহমেদের দাবি, আমরা গতকাল রাত থেকে অভিযান চালিয়ে ১০ কোটি টাকা নগদ ও আট কোটি টাকার চেক উদ্ধার করেছি। নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্য ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন জায়গায় টাকা ছড়ানো হয়েছে। মতিঝিলে ইউনাইটেড করপোরেশন ও ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ নামে অফিস খোলা হয়েছে। এই অফিসের বয়স দুই মাসের মতো। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কালো টাকা বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়ানোর জন্য মূলত এই অফিস ভাড়া নেওয়া হয়েছে। এই অফিসটি দুই মাস আগে মতিঝিলে একটি বড় রাজনৈতিক দলের অফিসের পাশে ছিল। নিরাপত্তার কারণে সেই অফিস সরিয়ে এখানে আসেন এবং এখানে এসে কাজ শুরু করেন।

বেনজীর বলেন, দুই মাসে প্রায় দেড় শ কোটি টাকা বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়েছে। এর কথিত মালিক মাহমুদের অ্যাকাউন্টে এক মাসে ৭৩ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। কালো টাকার মাধ্যমে নির্বাচনকে প্রভাবিত করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। পেশি শক্তির ব্যবহার, আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটানো, একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা এসব উদ্দেশ্য ছিল তাদের। আমরা এখানে একজন রাজনৈতিক দলের কাগজপত্র পেয়েছি। তিনি হলেন শরীয়তপুর-৩ আসনের বিএনপির প্রার্থী মিয়া নুরুদ্দিন আহমেদ (অপু)। তাঁকে গতকাল ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা পাঠানো হয়েছে। পাঠানোর পরপরই গতকাল সেখানে নির্বাচনী সহিংসতা হয়েছে। যেখানে যেখানে টাকা গেছে সেখানেই নির্বাচনী সহিংসতা ঘটেছে। তার মানে আমরা বলতে পারি এখন পর্যন্ত যেসব জায়গায় নির্বাচনী সহিংসতা হয়েছে সেখানে এই টাকার একটা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। এখানে বিভিন্ন ক্যাশ বই আছে। সেখানে বিভিন্ন জায়গায় টাকা পাঠানোর স্লিপ আছে। দিনে কখনো ১১ কোটি, কখনো ২০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে।

টাকার উৎস সম্পর্কে বলতে গিয়ে বেনজীর বলেন, টাকা এসেছে দুবাই থেকে হুন্ডি ও ব্যাংকের মাধ্যমে। এ ছাড়া স্থানীয় পর্যায় থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। দুই মাসে আমরা ১৫০ কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য পেয়েছি। তবে এ অফিসের লোকজন টাকার রেকর্ড লম্বা দিন রাখে না। তাই আমরা সব তথ্য পাইনি। জব্দ করা যন্ত্রাংশ, রেজিস্ট্রার পরীক্ষার পর লেনদেনের বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে। এর মাধ্যমে ভয়াবহ অপচেষ্টাকে বানচাল করতে পেরেছি। এ তদন্ত অব্যাহত থাকবে। জড়িতদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করব। এত টাকা কোনো স্বাভাবিক টাকা হতে পারে না, এটা ‘ ইল গটেন মানি’ (খারাপ উদ্দেশ বাস্তবায়নের জন্য পাওয়া)। আমরাও হুমকি ধামকি শুনে আসছি। এই হুমকির অন্যতম কারণ এই টাকা। হুমকি ধমকি যে অসত্য না তা এই লেনদেনের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। হুমকি-ধমকির উৎস শত শত কোটি টাকা।

র‌্যাবের মহাপরিচালক বলেন, ঢাকার একটি আসনের সব ভোটারের নাম-ঠিকানা সংবলিত একটি তালিকাও আলী হায়দারের অফিসে পাওয়া গেছে। এর মানে কি? এর মাধ্যমে বিশাল সংখ্যার ভোটারকে কেনার পরিকল্পনা করেছিল। কালো টাকা দিয়ে ভোট কিনে যদি কেউ এ দেশের ক্ষমতায় আসে তাহলে দেশের অর্থনীতির কি অবস্থা হবে তা সহজেই অনুমেয়। আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করব ৩০ তারিখ যেন একটা শান্তিপূর্ণ ভোট অনুষ্ঠিত হয়। আটককৃতদের রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চাইলে বেনজীর বলেন, আটক একজন বিশেষ ভবন তথা হাওয়া ভবনে কাজ করতেন।

Share