ক্ষতিগ্রস্তকেই আদালতে এসে ক্ষতিপূরণ চাইতে হবে: হাইকোর্ট

নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : হাইকোর্ট বলেছে, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকেই ক্ষতিপূরণ চেয়ে আদালতে মামলা করতে হবে। যদি তিনি আহত হন তাহলে নিজে আবেদন করবেন। আর যদি মারা যান তাহলে তার আত্মীয়-স্বজন সংক্ষুদ্ধ হয়ে এ ধরনের মামলা করতে পারেন। ক্ষতিপূরণ চেয়ে অন্যদের মামলা করার কোন সুযোগ নেই।

গণপিটুনিতে নিহত তাসলিমা বেগম রেনুর ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট মামলায় বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ সোমবার এই অভিমত দেন। রিটকারী আইনজীবীর উদ্দেশে হাইকোর্ট বলেন, অপারেশন ক্লিনহার্ট এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট করা হয়। এই আদালত ওই মামলায় অপারেশন ক্লিনহার্ট দায়মুক্তি আইনকে বাতিল করে রায় দিয়েছে। এছাড়া রিটকারী আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক একশত কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য নির্দেশনা চেয়েছিল। কিন্তু আমরা তা দেয়নি। আমরা রায়ে বলেছি, অপারেশন ক্লিনহার্টের সময় ভিকটিম বা ভিকটিমের পরিবারের কোনো সদস্য প্রতিকার বা ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করতে পারবেন। এমনকি ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট আবেদন করলে হাইকোর্ট এ বিষয়ে আদেশ দিতে পারবে।

হাইকোর্ট বলেন, ওই রিট মামলায় দেয়া এই অভিমত থেকে সরে আসার কারণ দেখছি না। এ কারণেই বলছি কেউ আঘাতপ্রাপ্ত হলে সে নিজে আদালতে আবেদন নিয়ে আসবে। আর যদি মারা যান তাহলে তার ছেলে-মেয়ে, ভাই-বোন বা আত্মীয়-স্বজনকে আসতে হবে। আপনি (আইনজীবী) ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করতে পারবেন না।

ঢাকার বাড্ডায় গণপিটুনিতে নিহত তাসলিমা বেগম রেণুর পরিবারকে পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদানের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান বাদী হয়ে এ রিট করেন। রিটে তাৎক্ষণিক ক্ষতিপূরণ হিসেবে তার পরিবারকে ১৫ দিনের মধ্যে ১০ লাখ টাকা দেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

সোমবার এ রিটের শুনানিতে ইশরাত হাসান বলেন, গত ছয় মাসে ৩১টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে রেণু নামে এক নারী তার সন্তানকে স্কুলে ভর্তির বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত হন।

আদালত বলেন, এ ধরনের অনেক ঘটনা ঘটছে। যা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। আর আপনি ক্ষতিপূরণ চেয়েছেন। ক্ষতিপূরণ চাইতে হলে পরিবারের সদস্যদের আসতে হবে।

আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, রিট মামলার উদ্দেশ্য হতে হবে যাতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে। আর সেখানে রেনুর ঘটনাটিকে আপনি উদাহরণ হিসেবে আনবেন।

আদালত বলেন, আপনারা আইনজীবী হিসেবে যত ভালো আবেদন ও সাবমিশন করবেন আমরা তত ভালো রায় দেব।

গত ২০ জুলাই বাড্ডা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সন্তানের ভর্তির বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে তাসলিমা বেগম রেনু ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত হন। তার এক ছেলে ও মেয়ে রয়েছে। ওই ঘটনায় অজ্ঞাত ৪০০-৫০০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন নিহতের ভাগনে সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু। ইতোমধ্যে এই মামলায় মূল অভিযুক্ত হৃদয়সহ বেশ কয়েকজন গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ। ইতোমধ্যে তাদেরকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। জড়িতরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে।

Share