গণতন্ত্র নাকি সমৃদ্ধি বেছে নেওয়ার ভোট : ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের নিবন্ধ

নিজস্ব ডেস্ক : বাংলাদেশের আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে গণতন্ত্র অথবা সমৃদ্ধি—এর যেকোনো একটিকে বেছে নেওয়ার ভোট হবে বলে মন্তব্য করেছে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস। গতকাল সোমবার প্রকাশিত একটি নিবন্ধে এই মন্তব্য করে যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রভাবশালী এই সাময়িকীটি।

নিবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশে সাধারণত ভালোবাসার গল্পকেন্দ্রিক চলচ্চিত্রগুলোই জনপ্রিয়তা পায়। কিন্তু এ মাসে দেশটিতে যে তথ্যচিত্রটি বিপুল সাড়া ফেলেছে, সেটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে তৈরি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে মুক্তি দেওয়া হয়েছে তথ্যচিত্রটি। এতে প্রধানমন্ত্রীকে একজন আত্ম–উৎসর্গকারী ও যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে।

৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ শেখ হাসিনা ও তাঁর দল আওয়ামী লীগকে আরেক মেয়াদে ক্ষমতায় রাখবে কি না, সে সিদ্ধান্ত নেবে। দলটি ২০০৮ সাল থেকে ক্ষমতায় আছে। বাংলাদেশকে এশিয়ার দ্রুত বর্ধমান অর্থনীতির দেশের একটিতে পরিণত করার জন্য শেখ হাসিনার সমর্থকেরা তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করেন। কিন্তু তাঁর সমালোচকেরা বলেন, শেখ হাসিনা দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল করেছেন। একই সঙ্গে ‘বিপজ্জনক ইসলামপন্থীদের’ ক্ষমতায়ন করেছেন তিনি।

১৯৯১ সাল থেকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দুই প্রতিদ্বন্দ্বী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন দুই দলের মধ্যে পালাবদল হচ্ছিল। কিন্তু ২০০৮ সালে শেখ হাসিনার অভূতপূর্ব বিজয় নিয়মিত এই পালাবদলের অবসান ঘটিয়েছে। এ ১০ বছরে তাঁর সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদকদের একজন হুমায়ুন কবির। তাঁর কথায়, ‘বাংলাদেশ খুব খারাপ অবস্থার মধ্যে রয়েছে। সরকার পুরোমাত্রায় দুর্নীতিগ্রস্ত; সাধারণ মানুষ দুর্দশাগ্রস্ত।’

নিবন্ধে অভিযোগ করা হয়, শেখ হাসিনা তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দলের ওপর দমন–পীড়ন চালিয়েছেন। ২০১৩ সালে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়। এরপর গত ফেব্রুয়ারিতে দুর্নীতির মামলায় তাঁর পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়। ৩৪টি মামলায় বিচারের মুখোমুখি কয়েকবারের এই প্রধানমন্ত্রী। তাঁর ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও লন্ডনে ‘নির্বাসিত’। ২০০৪ সালের গ্রেনেড হামলা মামলায় তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। নির্বাচন সামনে রেখে বিরোধী দলের নেতা–কর্মী ও সমর্থকদের গ্রেপ্তারের ঘটনাও বেড়েছে। বিএনপির দাবি, শুধু সেপ্টেম্বরে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সাড়ে ৪ হাজারেরও বেশি লোককে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, এমন দৃষ্টান্তও আছে, যেখানে বিএনপির একজন প্রার্থীর বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা দেওয়া
হয়েছে। এসব মামলার অধিকাংশই ভুয়া। তিনি বলেন, নির্বাচন করা নিয়ে দলটির অনেক প্রার্থীই খুব আতঙ্কে রয়েছেন। তাঁদের অনেক কর্মী–সমর্থকও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) মিনাক্ষী গাঙ্গুলীর মতে, শেখ হাসিনা এ নির্বাচনে জয়ী হতে পারেন। তাঁর অর্জন অনেক। তাঁর শাসনামলে গত এক দশকে দেশের অর্থনীতিতে গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। তাঁর সাফল্য সত্ত্বেও ‘তিনি এতটাই কর্তৃত্বপরায়ণ হয়ে উঠেছেন যে, জনগণ তাঁর বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে বাধ্য হয়েছে। (আওয়ামী লীগের) ক্ষমতা ছাড়া উচিত। এখন তাদের তর্জন–গর্জনই সার।’

Share