গুলিস্তানে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় রুমি ও মিজান গ্রেফতার

নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল গুলিস্তানে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় ফরিদ উদ্দিন রুমি ও মিশুক খান মিজানকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।আজ মঙ্গলবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম এ কথা বলেন।

মনিরুল ইসলাম জানান, রাজধানীতে পুলিশের ওপর বোমা হামলার সঙ্গে নব্য জেএমবির পাঁচজনের একটি সেল জড়িত ছিল। তাদের পরিকল্পনায় এই হামলা হয়েছে। এদের মধ্যে দু’জনকে সোমবার নারায়ণগঞ্জের জঙ্গি আস্তানা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

তিনি জানান, সোমবার নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা তক্কার মাঠ এলাকায় জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে বিস্ফোরকসহ নব্য জেএমবির ২ সদস্য ফরিদ উদ্দিন রুমি ও মিশুক খান মিজানকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপি’র কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট।

ফরিদ উদ্দিন রুমি আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের শিক্ষক এবং মিজান নারায়ণগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এর ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শেষ বর্ষের ছাত্র।

মনিরুল ইসলাম জানান, গত এপ্রিলে গুলিস্তানে পুলিশকে টার্গেট করে আইইডি হামলা করে জঙ্গিরা। এ ঘটনায় তিনজন পুলিশ সদস্য আহত হয়। তাদের মধ্যে একজন গুরুতর আহত হন। এ ঘটনার সঙ্গে নারায়ণগঞ্জে ফতুল্লা থেকে গ্রেফতারকৃত নব্য জেএমবির সদস্যরা সরাসরি জড়িত। সম্প্রতি ঢাকায় যে সমস্ত বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে, সে ঘটনায় যে ধরনের বিস্ফোরকদ্রব্য, আইইডি ও আলামত পাওয়া গিয়েছে, তার সঙ্গে নারায়ণগঞ্জে পাওয়া বিস্ফোরক দ্রব্য, আইইডি ও আলামতের মিল রয়েছে।

তিনি বলেন, প্রত্যেকটি ঘটনার মধ্যে সাদৃশ্য রয়েছে। যেমন সম্প্রতি পুলিশের ওপর যে ৫টি হামলার ঘটনা ঘটেছে তা প্রতি মাসের শেষে ২০ তারিখের দিকে এবং রাত ৮টা থেকে ১০ টার মধ্যে সংগঠিত হয়েছে।প্রত্যেক হামলায় ব্যবহৃত আইইডিগুলো ছিল রিমোট কন্ট্রোল। এরা পুলিশকে টার্গেট করার মূল কারণ হল- নব্য জেএমবির সদস্যরা দেশের প্রচলিত সংবিধান ও আইন-কানুন মানে না। পুলিশ যেহেতু আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাই পুলিশকে টার্গেট করে তারা এ হামলা চালায়। এতে পুলিশের মনোবল ভেঙ্গে দেয়ার চেষ্টা করে তারা। এ হামলার মাধ্যমে তারা সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করে।

তিনি বলেন, নব্য জেএমবির সদস্যরা সারামাস পুলিশকে টার্গেট করে পুলিশ কোথায় থাকে তাদের কর্মপদ্ধতি কেমন এগুলো রেকি করে। রাতে যেহেতু অন্ধকার থাকে তাই তারা মাসের শেষে এবং রাতে হামলা চালায়। তারা প্রত্যেকটি ঘটনা সংঘটনের পূর্বে রেকি করে।

তিনি বলেন, পুলিশের ওপর ৫ টি হামলার ঘটনায় তাদের ৫ জনের একটি সেল কাজ করেছে। তাদের কাজ হলো আইইডি তৈরি করা। তাদের বোমা তৈরির কোন বাস্তব প্রশিক্ষণ নেই। তারা যেহেতু ইঞ্জিনিয়ারিং লাইনে পড়াশুনা করে তাই তারা আইইডি ডিভাইস তৈরি করে। গতকালের উদ্ধারকৃত ৩টি আইইডি আগেরগুলোর চেয়ে শক্তিশালী। সেখান থেকে উদ্ধারকৃত খেলনা একে-৭৪ ও পিস্তল দিয়ে তারা মূলত শ্যুটিংয়ের কাজে ব্যবহার করতো।

তিনি বলেন, এই সেলের সদস্যদের একজন আমীর রয়েছে। তিনি বাংলাদেশেই আছেন। ঘটনা ঘটিয়ে তারা আমীরের কাছে তথ্য দেয়। আইএস এর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে তিনি বলেন, জঙ্গি সংগঠনগুলো আইএস এর আইডোলজি অনুসন্ধান করে আইএস এর অর্থ সংগ্রহের জন্য। আসলে এদের সঙ্গে আইএসের কোনো সম্পৃক্ততা আমরা পাইনি।

তিনি বলেন, বাকি ৪টি মামলার তদন্ত চলছে। আমাদের সনাক্তকৃত ৫ জনের মধ্যে ইতোমধ্যে ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আজ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যান্যদের গ্রেফতার চেষ্টা অব্যাহত আছে। এ ঘটনায় রুমির স্ত্রী জান্নাতুল ফোয়ারা অনুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছে। তবে সে ঘটনার সঙ্গে জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বাসস

Share