ছয় মাসে ৩১১ প্রতিষ্ঠানের বন্ড লাইসেন্স স্থগিত

নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট গত ছয় মাসে বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্স সুবিধার অপব্যবহার করায় ৩১১ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স স্থগিত (সাসপেন্ড) করেছে ও। একই সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট নিবন্ধন নম্বরও (বিআইএন) লক করা হয়েছে। একই কারণে পাঁচ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স চূড়ান্তভাবে বাতিল এবং ১৭ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স চূড়ান্তভাবে বাতিলের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্স হচ্ছে শতভাগ রফতানিমুখী প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে দেওয়া এক ধরনের লাইসেন্স, যা লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান শুল্ক্কমুক্ত আমদানি সুবিধা পেয়ে থাকে। তবে শর্ত থাকে, যেসব পণ্য বা পণ্যের কাঁচামাল শুল্ক্কমুক্তভাবে আমদানি করা হবে, সেগুলোতে মূল্য সংযোজন করে রফতানি করতে হবে। আমদানি করা পণ্য দেশীয় বাজারে বিক্রি করা যাবে না। আন্তর্জাতিক বাজারে স্থানীয় শিল্পের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে সরকার এ সুবিধা দিয়ে আসছে। তবে অভিযোগ রয়েছে, কোনো কোনো অসাধু ব্যবসায়ী বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্স সুবিধায় পণ্য আমদানি করে, তাতে কোনো ধরনের মূল্য সংযোজন ছাড়াই দেশের খোলাবাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। এতে স্থানীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি সরকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

সূত্র জানায়, বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্স সুবিধার অপব্যবহার বন্ধে এনবিআর কঠোর অবস্থান নিয়েছে। রফতানি আয় বৃদ্ধি ও স্থানীয় শিল্পের উন্নয়নের পাশাপাশি রাজস্ব আয় বাড়ানো এর লক্ষ্য। বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্সের অপব্যবহার বন্ধ করতে বছরের শুরু থেকেই এনবিআরের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার নির্দেশনায় ঢাকা কাস্টমসের কমিশনার এস এম হুমায়ুন কবিরের নেতৃত্বে ঢাকা বন্ড কমিশনারেটের প্রিভেনটিভ টিম অভিযান পরিচালনা করে আসছে। গত ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ছয় মাসে মোট ১৪২টি প্রিভেনটিভ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে। এসব অভিযানে প্রিভেনটিভ টিম পুলিশের সহায়তায় বিভিন্ন বন্ডেড ওয়্যারহাউসে আকস্মিক পরিদর্শন, রাত্রিকালীন টহল, অবৈধ বিক্রয়স্থলে হানা, বিশেষ অনুসন্ধান প্রভৃতি কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।

সূত্র জানায়, গত ছয় মাসের অভিযানে বন্ড সুবিধায় আমদানি করা পণ্য চোরাপথে খোলাবাজারে বিক্রির অভিযোগে ৬৪টি পণ্যবাহী যানবাহন আটক করা হয়েছে। পাঁচটি গুদাম সিলগালা করা হয়েছে। আটক করা পণ্যের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন প্রকার কাপড়, কাগজ, বিওপিপি ফিল্ম, পিপি দানা, ডুপ্লেক্স বোর্ড, আর্ট কার্ড, সুতা ইত্যাদি। এ ছাড়া ১৮০ কোটি টাকা শুল্ক্ককর ফাঁকির অভিযোগে ১০৩টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এসব ঘটনায় ছয় কোটি ৩২ লাখ টাকার রাজস্ব আয় হয়েছে।

সূত্র জানায়, এসব অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে চোরাকারবারি ও সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হয়েছেন কাস্টমস কর্মকর্তারা। গত ১৮ এপ্রিল ভোররাতে পুরান ঢাকার নয়াবাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনাকালে চোরাকারবারিরা লাঠিসোটা নিয়ে অতর্কিতে আক্রমণ চালায়। আক্রমণে কাস্টমসের ছয়জন কর্মকর্তা গুরুতর আহত হন। এ সময় দুটি সরকারি গাড়িও ভাংচুর করে হামলাকারীরা। এ বিষয়ে ওই দিনই কোতোয়ালি থানায় সরকারি কাজে বাধা দেওয়া এবং হামলার অভিযোগে মামলা করা হয়। মামলায় এরই মধ্যে কয়েকজন আসামিকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। মূল হোতাদের ধরতে পুলিশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে মামলাটি সম্প্রতি কোতোয়ালি থানা থেকে ডিবিতে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

সংশ্নিষ্টরা জানান, এলাকাভিত্তিক নিবিড় জরিপ ও তদন্ত করছে কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট। বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানের আমদানি-রফতানি তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। এসব তদন্ত ও যাচাইয়ের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করা হচ্ছে। অনিয়ম ধরা পড়লে আইনগত ব্যবস্থা নেবে কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ। দেশীয় শিল্পের সুরক্ষায় বন্ড কমিশনারের এ প্রতিরোধমূলক কার্যক্রমের প্রশংসা করে অর্থমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)। অন্যদিকে, ব্যবসা-বাণিজ্যে গতিশীলতা সৃষ্টি করতে বিভিন্ন দপ্তরের কার্যক্রম দ্রুত শেষ করার জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারী পর্যায়ে কে সর্বোচ্চ কত সময় নিতে পারবেন, তা নির্ধারণ করে দিয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ই-মেইল, ওয়েবসাইটসহ ডিজিটাল মাধ্যমে যোগাযোগ বাড়ানো হয়েছে। এতে ব্যবসায়ীরা সহজে ও কম সময়ে সেবা পাচ্ছেন। কাস্টমস কর্তৃপক্ষের এ ধরনের উদ্যোগের প্রশংসা করেছে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন।

Share