দুর্নীতিবাজের দুর্নীতির চাক্ষুষ স্বাক্ষীকে দূরবর্তী জেলায় শাস্তিমুলক বদলী!

নিজস্ব জেলা প্রতিবেদক : খাদ্য অধিদপ্তর এক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার দুর্নীতি ঢাকতে ঘটনার চাুস স্বাীদের দূরবর্তী জেলায় হয়রাণী মূলক বদলীর নির্দেশ জারি করেছে। এই দুই কর্মচারির অপরাধ তারা মহাপরিচালকের নিকট তাদের নিয়ন্ত্রনকারি সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার নকিপুর খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার এক অভিনব দুর্নীতির বিস্তারিত অভিযোগ জানিয়েছিলো। ফলে ঘটনাটি জনসমক্ষে প্রকাশ হয়ে যায়। এমনকি দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা গড়ায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এই কর্মকর্তার দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা জেলা জজ আদালতে মামলা দায়ের হযয়েছে। শ্যামনগর উপজেলার মানিকখালী গ্রামের হাজী আবুল হোসেনের পুত্র হুমায়ুন কবির সাতক্ষীরা জেলা জজ আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। মামলা নং ২ তারিখ ২১-০৪-২০১৯। মামলাটি আমলে নিয়ে আদলত দুদককে আইনগত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ প্রদান করেন।
দূর্নীতির এই মামলার চাক্ষুস স্বাক্ষী ভেটখালী খাদ্য গুদামের নিরাপত্তা প্রহরী জিয়াউর রহমান ও মশিউর রহমান। এই দুই নিরাপত্তা প্রহরী নকিপুর ও ভেটখালী খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুর রহমানের অধীনে দায়িত্ব পালন করছেন। সে কারনে এই দুই নিরাপত্তা প্রহরীকে নকিপুর খাদ্য গুদামে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে ভেটখালী খাদ্য গুদামে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছিলো। এমতাবস্থায় তারা নকিপুর খাদ্য গুদামে মেয়াদ উত্তির্ন ভেজাল চালের বিষয়ে জানতে পেরে ঘটনাটির বিষয়ে মহা পরিচালক খাদ্য অধিদপ্তর বরাবর গত ১৫ এপ্রিল ডাক যোগে লিখিত অভিযোগ প্রেরন করেন। এই ভেজাল খাদ্যের গুদামজাত রেখে দূর্নীতি করার ব্যপারে জড়িত দূর্নীতিবাজকে দূর্নীতিবাজ বলার খেসরত হিসাবে তাদেরকে সিলেট এবং বরিশালে বদলী করা হয়েছে যাতে দূর্নীতি ধামা চাপা দেওয়া যায়। গত ৭ মে খাদ্য অধিদপ্তরের প্রশাসন বিভাগ থেকে উপ পরিচালক (সংস্থাপন) আল মামুন মোরশেদ স্বাক্ষরিত ১৩.০১.০০০০.০৩১.১২.০১৫১৪(অংশ) ৮৩২(১৬) তারিখ ০৭-০৫-১৯ স্বারকের এক পত্রে দূর্নীতির এই চাক্ষুষ স্বাক্ষী দুজনকে বদলীর আদেশ প্রদান করা হয়। কিছু দিন আগে মহামন্য হাইকোর্টের এক ডিভিশন বেঞ্চ চোরকে চোর, দূর্নীতবাজকে দূর্নীতিবাজ বলতে উৎসাহিত করেছেন। আর নকিপুর খাদ্য গুদামের খাদ্য কর্মকর্তার দূর্নীতির বিষয়ে অভিযোগ করায় এই দুজন নিরাপত্তা প্রহরীকে গত ২রা মে থেকে নকিপুর খাদ্য গুদামের বাইরে হাজিরা খাতা এনে তাদের স্বাক্ষর নিয়েছে যাতে করে ভেতরে কি হচ্ছে তা তারা দেখতে না পায়। এতেও ক্ষ্যান্ত না হয়ে দূর্নীতির স্বাক্ষী হওয়ায় তাদেরকে দূরবর্তী জেলায় বদলী করে দেওয়া হয়েছে।

সাতক্ষীরার আদালতে দূর্নীতির মামলার বিবরণে জানা যায় নকিপুর খাদ্য গুদামে আমন মৌসুমী ৮০০ মেট্রিক টন চাউল সংগ্রহ করা হয়। এই আমন সংগ্রহ কাজে স্থানীয় রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত মিলাদের নিকট থেকে চাল সংগ্রহ না করে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে কুষ্টিয়ার খাদ্যগুদামের পুরাতন চাউল ইস্যুকৃত ডি ও ক্রয় করে নকিপুর খাদ্য গুদামজাত করা হয়। অপরদিকে চলতি মৌসুমে শ্যামনগর উপজেলায় কাজের বিনিময়ে খাদ্য প্রকল্পে সাধারণ কোটায় ২৬০ মেট্রিক টন ও বিশেষ কোটায় ১০১ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওইচাল গুলো উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা কার্যালয় থেকে ডি ও ইস্যু করা হয়। ইস্যুকৃত ডি ও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ওসি নকিপুর খাদ্য গুদাম ১৮ টাকা কেজি দরে ক্রয় করে ৩৮ টাকা কেজি দরে সরকারের কাছে বিক্রয় দেখিয়ে পুনরায় গুদামজাত করে রাখেন। এই চাউল বিতরনের মাস্টাররোল জালিয়াতি করা হয় এ ধরনের কোন প্রকল্পে কোন লেবার কে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি চাউল দেওয়া হয়নি। তা ছাড়া গুদাম থেকে প্রকল্পের সভাপতির কাছে চাল হস্তন্তরের কাগজে জাল সই করে বিতরন দেখানো হয়। এ সমস্ত অভিযোগ স্থানীয় দৈনিক সাতনদী তে প্রকাশিত হয় গত ৩১শে মার্চ। তাছাড়া বাদী মহাপরিচালক খাদ্য অধিদপ্তর লিখিত অভিযোগ করেন এবং দুদকের হটলাইন ১০৬ অভিযোগ করেন। এছাড়াও শ্যামনগরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেন কিন্তু কোনভাবেই কোন ব্যবস্থা না হলে পাল্টা খাদ্য গুদাম ওই পুরাতন চাল গুলো নতুন বস্তায় ভরে পুনরায় গুদামজাত রাখেন। বাদী তার মামলায় আরো বলেন চলতি মৌসুমে ত্রাণের চাল হিসেবে গরীব অসহায়দের মাঝে এই পুরাতন খারাপ চাউল বিতরণ করা হবে। এগুলো খাওয়ার অনুপযোগী হওয়ায় এলাকার লোকজন এই চাল খেয়ে অসুস্থ হতে পারে তাই জনস্বার্থে বাদি এই মামলাটি দায়ের করেছেন। বাদী তার মামলায় শ্যামনগরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, খাদ্য গুদামের দুইজন নিরাপত্তা প্রহরীসহ ৬ জনকে স্বাক্ষী করেছেন। বাদীর দায়েরকৃত মামলা আমলে নিয়ে আদালত দুদককে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। বাদী পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন সাতক্ষীরা জজ কোর্টের এ্যাডঃ শেখ ত্বোহা কামাল।ঘটনার বিষয়ে জানার জন্য খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বারবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

মামলার বাদী হুমায়ুন কবির বলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দূর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেছেন তাই তিনি তার একজন সৈনিক হিসাবে দূর্নীতির বিরুদ্ধে এই অবস্থান নিয়েছেন। তাছাড়া পচা চাল খেয়ে এলাকার মানুষ মহামারিতে আক্রান্ত হতে পারে। তিনি আর ও বলেন নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ এর বিধান মতে মেয়াদ উত্তির্ন চাল গুদাম জাত রাখায় এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে খাদ্য আদালতে মামলা করে এলাকাবাসীকে রক্ষা করা দরকার। এতবড় দূর্নীতির পরেও খাদ্য প্রশাসন এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আজও কোন ব্যাবস্থা না নেয়ায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ ছাড়া দূর্নীতির স্বাক্ষী হওয়ার খেসরত হিসাবে দুজন নিরাপত্তা প্রহরীকে দূরবর্তী জেলায় বদলী করায় দূর্নীতির বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস পাবেনা বলে তিনি মন্তব্য করেন।

Share