নচিকেতার গান, বাধ্যতামূলক পদত্যাগ, এবং…

শামীমুল হক : ডিজি কালাম সবই ওপেন করেছেন। কোন কিছুতেই রাখ ঢাক করেননি। দুই নম্বরি মাস্ক নিয়ে কথা বলায় বদলি করেছেন প্রকাশ্যে। এজন্য মুগদা হাসপাতালের পরিচালক মনে কস্ট পেলেও আজাদ হেসেছেন তৃপ্তির হাসি। কাজ দিয়েছেন ডা. শাবরিনাকে। মিতালী করেছেন রিজেন্ট শাহেদের সঙ্গে। টেস্টের দরকার কি? রিপোর্ট হাতে পেলেইতো হলো। দেশে মাস্ক তৈরি করে বিদেশি সিল মেরে দিয়েছেন হাসপাতালে হাসপাতালে।

এ জন্য হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স বা সংশ্লিষ্টরা করোনায় আক্রান্ত হলে তার কি? তিনিতো দিব্যি এসি রুমে বসে অফিস করেছেন। করোনাকালে আরও কি করা যায় তা নিয়ে ভেবেছেন। ভাবতে ভাবতেই টিভিতে প্রকাশ্যে বলেছেন, করোনা দুই তিন বছর স্থায়ী হতে পারে। এর পেছনেও নিশ্চয় কোন দুই নম্বরি কারণ ছিল। সাম্প্রতিক সময়ের এসব কাহিনীই শেষ নয়। কত ডাক্তার হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রেস থেকে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন দিয়ে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রেস থেকে মেডিকেল কলেজে ভর্তির প্রশ্ন ফাঁস চক্র এখন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। স্বাস্থ্যের ডিজি হিসাবে এর দায় কি তিনি এড়াতে পারেন? এমন একজন ডিজি বাংলাদেশের জন্য বড্ড প্রয়োজন ছিল। ফাঁস হওয়া প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়ে যারা ডাক্তার হয়েছেন, কিংবা হবেন তারা কি সত্যিই মেধাবী? ডাক্তার হওয়ার যোগ্য? তাহলে জাতি কি পাচ্ছে? একটি প্রজন্ম মেধাবিহীন ডাক্তারের কব্জায় বন্দি হয়ে পড়ছে। এরা মানব সেবার বদলে দানব রুপে হাজির হবে। এখনই এর লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। করোনা না এলে হয়তো এসব কাহিনী অজানাই থেকে যেতো। বিশ্বাস করা যায়, নেগেটিভ রোগীকে পজেটিভ দেখিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে অর্থ আদায়? আবার পরীক্ষা না করেই ইচ্ছেমতো নেগেটিভ, পজেটিভ রিপোর্ট দেয়া। এটা কল্পনায়ও আনা পাপ। সেই কাজটিই করেছেন রিজেন্ট, জেকিজি। শাহাবুদ্দিন হাসপাতালতো আরও একধাপ উপরে। নেগেটিভ রোগীকে পজেটিভ দেখিয়ে রোগী ভর্তি করে হাতিযে নিয়েছে টাকা। আবার একই কিট দিয়ে একাধিক লোককে করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। গোটা বিশ্ব এখন জানে করোনা রিপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে কি হচ্ছে। দেশের মানুষ এখন আর এই পরীক্ষাকে বিশ্বাস করেনা। ওরা ঘরে বসেই করোনার চিকিৎসা নিচ্ছে। উপসর্গ দেখা দিলেই মনে করছে করোনা হয়েছে। নিজে নিজেই নিতে থাকে ভাপ, গরম পানি খাওয়া, লাল চা। সঙ্গে ওষুধ। এতেই ভাল হচ্ছেন তারা। করোনার শুরু থেকে বহু ডাক্তার তার চেম্বার বন্ধ করে দিয়েছেন। সরকারি হাসপাতালে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। ব্যতিক্রম যে নেই তা নয়। যারা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেছেন। অন্যদের মতো পালিয়ে যাননি। তারা রয়েছেন মানুষের হৃদয়ে। অন্তরে। বেশিরভাগ ডাক্তার ছিলেন আড়ালে। ফোনটি ফর্যন্ত ধরেননি।

হায়রে ডাক্তার! দুই বাংলার ব্যাপক পরিচিত কণ্ঠ শিল্পী নচিকেতা অনেক আগেই ডাক্তারদের নিয়ে গান গেয়েছেন। তার এ গান ব্যাপক জনপ্রিয়তাও পায়। বর্তমান সময়ে এসে সেই গানটি এখন ফের বাজছে ফেসবুকে, ইউটিউবে। দোকানে, বাড়িতে, গাড়িতে। গানে গানে নচিকেতা বলেছেন, ও ডাক্তার/ ও ডাক্তার/ তুমি কত শত পাশ করে/ এসেছ বিলেত ঘুরে/ মানুষের যন্ত্রণা ভুলাতে/ ও ডাক্তার/ ও ডাক্তার/ তোমার এমবিবিএস মানা / বোধহয় এফআরসিএস ডিগ্রি ঝুলাতে/ও ডাক্তার/ ও ডাক্তার/ ডাক্তার মানে সেতো মানুষ নয়/ আমাদের চোখে সে তো ভগবান/ কসাই আর ডাক্তার একইতো নয়/ কিন্তু দুটোই আজ প্রফেসন/ কসাই জবাই করে প্রকাশ্যে দিবালোকে/ তোমার আছে ক্লিনিক আর চেম্বার/ ও ডাক্তার/ ও ডাক্তার/ ডাক্তার চাইবেন রক্ত রিপোর্ট/ক্লিনিকের সন্ধানও তিনিই দেবেন/একশত টাকা যদি ক্লিনিকের বিল হয়/ অর্ধেক দালালি তিনিই নেবেন/ রোগীরাতো রোগী নয়/ খদ্দের এখন…।

নচিকেতার বাস্তবধর্মী এ গানটি এখন বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য। গানে গানে নচিকেতা আরো বলেছেন, সরকারি হাসপাতালগুলোতে এমন অবস্থা করে রাখা হয় যেন রোগীরা সব ক্লিনিকে দৌঁড়ায়। মাথা ব্যথা হলে ডাক্তার বলেন, আগে দেখতে হবে হিমোগ্লোবিন কম না বেশি। এ জন্য প্রয়োজন পরীক্ষা। আর এই ডাক্তারদের যিনি পরিচালনা করবেন সেই ডিজি যদি অন্ধ হয় তাহলেতো কথাই নেই। ডিজি কালাম পদত্যাগ করেছেন ঠিকই। কিন্তু এমন এক সময় করেছেন যখন আর কোন উপায় ছিলনা। তিনি যদি সত্যিকার অর্থেই এসব অনিয়মকে সমর্থন না করতেন তাহলে আরো আগেই পদত্যাগ করতেন। মুগ্ধা হাসপতালের পরিচালককে বদলি না করে নিজে পদত্যাগ করে ইতিহাস সৃষ্টি করতেন। তখন এ দেশের জনতার সমর্থন পেতেন। তার উপর যদি অন্য কোন রাহুর প্রভাব থেকে থাকে তাহলে সেটিও ওপেন করে দিতেন। যেমনটি করেছেন করোনাকালে। রিজেন্ট, জেকেজি তো প্রকাশ্যে এসেছে না জানি গোপনে আরও কত কিছু আছে। ডাক্তার হিসাবে আবুল কালাম আজাদ তার বিবেকের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। দেশের মানুষের সঙ্গে বেঈমানি করেছেন। ডাক্তার হিসাবে শপথ ভঙ্গ করেছেন। তাইতো নচিকেতার সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলতে চাই-কসাই জবাই করে প্রকাশ্যে দিবালোকে/ তোমার আছে ক্লিনিক আর চেম্বার/ ও ডাক্তার/ ও ডাক্তার…।

Share