পদ্মায় নৌকা ডুবি: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২, কনেসহ নিখোঁজ ৭

নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক :  রাজশাহীর শ্রীরামপুর এলাকার পদ্মায় বর-কনে ও যাত্রীসহ দুইটি নৌকাডুবির ঘটনায় শনিবার সকালে আরেক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তার নাম মনি খাতুন (৪০), তিনি সম্পর্কে কনের চাচি।

আজ শনিবার সকালে ঘটনাস্থল থেকে অনুমান ১০/১২ কিলোমিটার ভাটিতে চারঘাট এলাকায় ভাসমান অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ৫ নারী-শিশুকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা এক শিশুকে (৬) মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় সৌভাগ্যক্রমে বর আসাদুজ্জামান রুমন (২৫) সাঁতরে তীরে উঠতে পারায় প্রাণে বেঁচে গেছেন। তিনি চরখিদিরপুর এলাকার মৃত ইনছার আলীর ছেলে। তবে কনে পূর্ণিমাসহ এখনো সাতজন নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের ভাগ্যে কি ঘটেছে তা জানা যায়নি।

উল্লেখ্য, শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে চরখিদিরপুর এলাকায় বৌভাতের অনুষ্ঠান শেষে বর কনে নিয়ে নৌকায় করে পবা উপজেলার ডাইংপাড়ায় যাচ্ছিল। পথিমধ্যে শ্রীরামপুর এলাকার পদ্মার বাক ঘুরতে গিয়ে দুইটি নৌকা পরস্পরের সংঘর্ষে ডুবে যায়। দুটি নৌকায় ১৭ নারী ও ৬ শিশুসহ অন্তত ৪২ যাত্রী ছিল।

খবর পেয়ে দ্রুত উদ্ধার কাজ শুরু করে রাজশাহী সদর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ডুবুরি দল। রাজশাহী ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আব্দুর রউফ জানান, শুক্রবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে জাতীয় জরুরি সেবা ‘৯৯৯’ থেকে এই নৌকাডুবির ঘটনা জানানো হয়। দ্রুত সময়ের মধ্যেই তারা বেরিয়ে পড়েন। তবে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত তারা কাউকে উদ্ধার করতে পারেননি। বেঁচে আসাদের কেউ সাঁতরে উঠেছেন আবার কেউ বালুবাহী ট্রলারে উঠেছেন।

ভুক্তভোগীরা জানান, চরখিদিরপুরে বৌভাত অনুষ্ঠান শেষে সন্ধ্যায় বর-কনসহ ৪২ যাত্রী নিয়ে পবা উপজেলার ডাইংপাড়ায় যাচ্ছিল। সন্ধ্যা ৭টায় শ্রীরামপুর এলাকায় নদীর বাকে দুই নৌকা ধাক্কা পরস্পরের সাথে খেয়ে ডুবে যায়। এদের মধ্যে দু’টি লাশ ও ১২ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন কনে সুইটি খাতুন পূর্ণিমা (২০) সহ সাতজন। কনে রাজশাহীর উপকণ্ঠ পবা উপজেলার ডাঙেরহাট গ্রামের শাহীন আলীর মেয়ে। গত বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) রুমন-সুইটির বিয়ে হয়। ঘটনার পরপরই রতন ও তার স্ত্রী বৃষ্টি খাতুন জীবিত উদ্ধার হলেও তাদের ছয় বছরের মেয়ে মরিয়ম খাতুন মারা গেছে। রামেক হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে আজ শনিবার সকালে নিখোঁজদের স্বজনরা শ্রীরামপুর এলাকায় ভিড় জমায়। রাত থকেই ঘটনাস্থলে রাজশাহী জেলা প্রশাসন, নৌ-পুলিশ, মহানগর পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তারা উদ্ধার অভিযান মনিটর করছেন। ভারতীয় সীমান্ত এলাকা হওয়ায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরাও স্পিডবোট নিয়ে নদীতে নিখোঁজদের খুঁজছেন। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স রাজশাহীর উপ-পরিচালক আবদুর রশীদ বলেন, তাদের ডুবুরি ইউনিটের তিন সদস্য নৌবাহিনীর ট্রেনিংয়ে রয়েছেন। আরেকজন ছুটিতে। দুই সদস্য পদ্মায় নিখোঁজদের উদ্ধার অভিযানে রয়েছেন। বিআইডব্লিউটিএ’র একটি ডুবুরি ইউনিট আজ শনিবার সকালে রাজশাহী পৌঁছেছেন।

অন্যদিকে রাতেই ঘটনাস্থলে উদ্ধার অভিযান মনিটর এবং শোকার্তদের শান্তনা দেন রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, পবা-মোহনপুরের এমপি আয়েন উদ্দিন, রাজশাহী জেলা প্রশাসক হামিদুল হক। এ সময় জেলা প্রশাসক নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা এবং আহতদের চিকিৎসার ব্যয় বহনের ঘোষণা দেন।

Share