জাল নিলাম বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়েছে জালিয়াত চক্র

নিজস্ব ডেস্ক প্রতিবেদক : গত ২২ এবং ২৩ মে বেসরকারি টেলিভিশন জিটিভি’র সান্ধ্যকালীন জাতীয় সংবাদে দু’পর্বে প্রচারিত হয় এক অভিনব জালিয়াতির খবর।খবর দু’টি নয়াবার্তার পাঠকদের জন্য ভিডিও সহ উপস্থাপন করা হলো।

জাল নিলাম বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়েছে জালিয়াত চক্র। জমি বিক্রি করেই খ্যান্ত হয়নি দখল করেছে ৬ তলা ভবনও।

রাজধানীর কাকরাইলের এই ঘঁটনায় নিলামটি সাময়িক স্থগিত করেছে উচ্চ আদালত।এতে ক্ষুব্ধ হয়ে জালিয়াত চক্রটি বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার। আহমদ অনিকের দুই পর্বের রিপের্টের প্রথমটি দেখুন আজ। ছবি তুলেছেন জুয়েল রহমান।

আহমদ অনিক-জিটিভি রিপোর্টার : রাজধানীর কাকরাইলের জমিসহ এই ভবনটির মালিক নিহত মুক্তিযোদ্ধা এবং সাবেক সেনা কর্মকর্তার স্ত্রী রোকসানা পারভীন। মুক্তিযোদ্ধা দম্পত্তিসহ অন্য দুই মালিক কচুক্ষেতের একটি জমি বন্ধক রেখে গার্মেন্টসের জন্য বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। ঋণটি পরিশোধ করতে না পারায় শুধু কাকরাইলের এই সম্পত্তিটি নিলামে বিক্রি করে দেয় আদালত। দেউলিয়া আদালতে ন্যায় বিচার পায়নি বলে দাবি পরিবারটির।

রোকসানা পারভীন-বাড়ির মালিক : মানে আমার হাসবেন্ডতো মারা গেছে, আরো দুজন ছিলো। তাদেরটাও কোন কিছু ধরে নাই বা আবার যে জমিটা কচুক্ষেত এলাকার জমি মটগেজ দিয়ে ওরা শিল্প ব্যাংক থেকে লোন নিছিলো তো সেই জমিও কিছু করে নাই। মানে আমার বাড়িটা যাষ্ট ব্যক্তিগত সম্পত্তি উল্লেখ দেখানো হইছিলো। এইটা এসে এ্যাটাক করেছে। এইটা তারা বিক্রি করেছে। ডেট আসতেছে কোর্টে আমি প্রথম দিক ১০ হাজার, ১০ লাখ পরে ৫ লাখ পরে ২ লাখ দিচ্ছি জমা। কিন্তু আমিতো জানি আমি জমা দিচ্ছি টাকা। মাঝখানে ব্যাস কিভাবে এখানেও কিন্তু জালিয়াতি সম্পূর্ণ।

আহমদ অনিক-জিটিভি রিপোর্টার : এদিকে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারটির সাথে অন্যায় করা হয়েছে বলে স্বীকার করেন বি,ডি,বি,এল,এর অবসরপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা।

মোঃ আশরাফুল হক-সাবেক ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার বিডিবিএল : যারা আসলে টাকা পয়সা ভাগ বাটোয়ারা করে নিলো তারা কেউই ভিকটিম হলো না। আর এই মহিলার জমি ছিলো বলেই তারটা নিলাম হলো।

আহমদ অনিক-জিটিভি রিপোর্টার : আইনজীবি জানান, জাল বিজ্ঞাপনে নিলাম করার পাশাপাশি বেশ কিছু অনিয়ম করেছে আদালতে নিযুক্ত নিলামকারী রিসিভার ।

মোঃ আমিমুল মালিক পক্ষের আইনজীবি : তারা দেখাচ্ছে যে এটা ২০১৫ সালে দুইটা পত্রিকায় আসছে এটা। যুগান্তর এবং দৈনিক খবর। এই দুইটা পত্রিকার কোনো পত্রিকাতেই এই বিজ্ঞাপনটাই পাবলিশ হয়নি। ফেক বিজ্ঞপ্তিতেও বিল্ডিংয়ের কোনো কথা বলা নেই। শুধু ল্যান্ডের কথা বলা আছে। সাড়ে চার শতক জমি এইডা অকশনে যাবে। তো বিল্ডিংয়েরতো আলাদা একটা ভ্যালু আছে।

আহমদ অনিক-জিটিভি রিপোর্টার : জালিয়াতি বিষয়ে রিট পিটিশন করা হলে নিলামটি ৬মাসের জন্য স্থগিত করে দেয় উচ্চ আদালত।

মোঃ আমিমুল মালিক পক্ষের আইনজীবি : অকশন প্রক্রিয়াটাকে আদালত অনুমোদন দিয়ে দিয়েছে। সে অর্ডারটা কোর্ট স্টে করে দিয়েছে। যে, এই অনুমোদনটি টিকতে পারেনা। যেহেতু অকশন প্রক্রিয়াটি ইনলিগ্যাল।

আহমদ অনিক-জিটিভি রিপোর্টার : মুক্তিযোদ্ধা পরিবারটি জানায়, ভবনের দখল না ছেড়ে উল্টো হুমকি দিচ্ছে নিলামের ক্রেতা রিয়াজ আহমেদ।

কাজী নিয়াজ রহমান-রোকসানা পারভীনের ছেলে : এখানে তালা ভাঙার চেষ্টা করছে একবার। তারপর আমাদের এসে রাস্তায় দাঁড়াইয়া হুমকি ধামকি দিছে।

রোকসানা পারভীন-বাড়ির মালিক : আমি যদি কোন কিছু করতে যাই তাহলে আমাকে সাথে সাথে বের করে দেবে। ঘর থেকে বের করে দেবে। এরকম একটা থ্রেটের উপর রাখছে আমাকে।

আহমদ অনিক-জিটিভি রিপোর্টার : আর ক্রেতার দাবি নিলাম সঠিক হয়েছে। তাই জমি ও ভবনের মালিকও তিনি।

রিয়াজ আহমেদ-নিলাম ক্রেতা : আমি তো লোকজন নিয়া একক্ষুনে যাইতে পারবানে ওইখানে। নিলাম সঠিক হইছে। কোর্টের যা অর্ডার দিয়ে দিছে। …

আহমদ অনিক-জিটিভি রিপোর্টার : জালিয়াত চক্রটি বেশ প্রভাবশালী জানিয়ে নিরাপত্তায় সরকারের সহযোগিতা চান পরিবারটি।

আহমদ অনিক। জিটিভি নিউজ। ঢাকা।

কারসাজির মাধ্যমে ব্যাংকের নিলাম সম্পত্তি
        হাতিয়ে নিচ্ছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র

কারসাজির মাধ্যমে ব্যাংকের নিলাম সম্পত্তি হাতিয়ে নিচ্ছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। নিলামের ক্ষেত্রে প্রকাশ্য বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে গোপনে কম দামে বন্ধকি সম্পক্তি কিনে নিচ্ছে চক্রটি। ভুক্তভোগী এবং আইনজীবিদের অভিযোগ ব্যাংক এবং আদালতের গুটিকয়ের অসাধু ব্যক্তির যোগসাজসে ভুয়া নিলাম বাণিজ্য করছে এই প্রতারকরা। আহমেদ অনিকের দুই পর্বের রিপোর্টের আজ দেখুন শেষ পর্ব।

আহমদ অনিক-জিটিভি রিপোর্টার : বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট ব্যাংকের ৫৩ লাখ ২৩ হাজার টাকা ঋণ আদায়ে ২০১৫ সালের ১৩ মে নিলাম বিজ্ঞপ্তির এই ফটোকপি দেউলিয়া আদালতে পেশ করা হয়। যা দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত বলে জানান হয়। এর ভিত্তিতে একটি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সম্পত্তি বিক্রির অনুমতি দেয় আদালত। অথচ ঐ তারিখের পত্রিকায় এ বিজ্ঞাপনটি ছিলই না। বিজ্ঞপ্তির সত্যতাও যাচাই করেনি আদালত।

মোঃ আমিমুল মালিক পক্ষের আইনজীবি : প্রতারণা কোর্টের উপরও করছে , আমাদের উপরেও করছে। এটা বিচারকের জানার কথা না । তো বিচারক হয়তো অরিজিনালটা দাবি করতে পারতন। ফটোকপি কেন দিছে।

আহমদ অনিক-জিটিভি রিপোর্টার : অনুসন্ধানে বের হয়ে আসে নিলাম ক্রেতার সঙ্গে আদালতের কয়েকজন অসাধু ব্যক্তির যোগসাজোস ছিলো।

রিয়াজ আমহেদ-নিলাম ক্রেতা : আমরা কোর্ট থেকে আজন্ম নিলাম কিনি। পত্রিকাতে আসছে। পত্রিকা দেখে আসছি। কোর্টে পত্রিকার সিল দেওয়া আছে। কোর্টে…………হইছে। নিলাম হইছে। ওখানে গিয়া পাওয়ার সামমিট করেছি। আমর তো এটা ব্যবসায়ই এটা।

আহমদ অনিক-জিটিভি রিপোর্টার : দেউলিয়া আদালত থেকে জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সম্পত্তিটি বিক্রি, মুল্য আদায় এবং ক্রেতাকে দখল বুঝিয়ে দেয়াসহ সব দায়িত্ব পালন করেন সরকারি রিসিভার সুলতান আহমেদ মিয়া।

সেরেস্তাদার-অতিরিক্ত জেলা জজ, দেউলিয়া বিষয়ক আদালত, ঢাকা : রিসিভারের কাছে যান। উনি একজন রিটায়ার্ড জেলা জজ সুলতান আহমেদ মিঞা। ওনার কাছে গেলে সবকিছু পাইবেন। তথ্য দেয়া যাবে।

আহমদ অনিক-জিটিভি রিপোর্টার : নাম জানালেও তার ঠিকানা দেননি কেউ। তবে একটি সুত্র ধরে বাড্ডার সাতারকুলে অনেক খোঁজাখুজির পর মেলে সুলতানের দেখা।

আহমদ অনিক-জিটিভি রিপোর্টার : আপনি কি সুলতান আহমেদ মিঞা ? কাকরাইলের সম্পত্তি নিলামে কোন অনিয়ম হয়নি। শুরুতে এমন দাবি করলেও ভুয়া বিজ্ঞপ্তি দেখানোর পর সুর বদলান তিনি। অসুস্থতার দোহাই দিয়ে দায় চাপান সহকারি আহসান হাবিবের উপর।

সুলতান আহমেদ মিয়া-সরকারি রিসিভার : আমার যা করার আমি করেছি। এখন যদি কিছু অনিয়ম হয়ে থাকে ………. যা করার-করবে। আমিতো অসুস্থ। ৭/৮ বছর ধরে ঘরে আছি। আমার সহকারি সব করে নিয়ে আসে আমি সই করে দেই।

আহমদ অনিক-জিটিভি রিপোর্টার : অবশ্য আহসান হাবিবের দাবি সুলতান আহমেদের নির্দেশ ও স্বাক্ষরেই হয়েছে সব।

আহসান হাবিব-সরকারি রিসিভারের সহকারি : আমি যা জানি আমার চেয়ে তিনগুন বেশি জানেন উনি। এখানে দায়ীর কোন বিষয় না। বিষয়টা হচ্ছে যে, আমার সইয়ে, বা স্বাক্ষরে একটা নিলাম বা একটা কোন কিছু হবার বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই।

আহমদ অনিক-জিটিভি রিপোর্টার : চাঞ্চল্যকর তথ্য হলো, প্রায় ২ বছর আগে নিলামের টাকা বুঝে পেলেও বিডিবিএল ব্যাংকে ঋণের টাকা ফেরত দেননি এই রিসিভার। এই টাকা কার একাউন্টে আছে?

সুলতান আহমেদ মিয়া-সরকারি রিসিভার : এটা ব্যাংকে আছে।

আহমদ অনিক-জিটিভি রিপোর্টার : আপনার নামে আছে?

সুলতান আহমেদ মিয়া-সরকারি রিসিভার : আমার নামে আছে। আমার টাকার হিসাব আছে। কোন একাউন্টে কয় টাকা । —–একটা পয়সা আমার বাইরে পাবেননা ।

আহমদ অনিক-জিটিভি রিপোর্টার : এই ঘটনায় বিডিবিএল কর্মকর্তারাও দায়ি বলে অভিযোগ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের। বারবার যোগাযোগের পরেও এনিয়ে ব্যাংকের কেউ কথা বলতে রাজি হয়নি। আহমদ অনিক। জিটিভি নিউজ। ঢাকা।

Share