মিথিলার বলিউডযাত্রা

নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : এর আগে শুধুই মডেল ছিলেন তানজিয়া জামান মিথিলা। চলচ্চিত্রে অভিষেক হতে যাচ্ছে তাঁর। তা–ও আবার বলিউডের ছবি দিয়ে। ‘রোহিঙ্গা’ নামে বলিউডের ছবিতে অভিনয় করলেন বাংলাদেশের এই মডেল। ভারতের বিভিন্ন লোকেশনে তাঁর অংশের শুটিং শেষ হয়েছে। গত ২৮ জানুয়ারি আবার ভারতে গিয়েছিলেন। মুম্বাইতে টানা পাঁচ দিন ছবির ডাবিং শেষ করে সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন তিনি। কথা হচ্ছে বলিউডের আরও কিছু ছবিতে কাজের ব্যাপারে। এ কারণে নৃত্য ও অভিনয়ের ওপর প্রশিক্ষণ নিতে দুই মাসের জন্য মুম্বাইতে যাবেন এই মডেল। আজ সন্ধ্যা ৭টায় প্রথম আলো ফেসবুক পেজে মিথিলা তাঁর সাম্প্রতিক কাজের অভিজ্ঞতা বিনিময় করবেন দর্শকের সঙ্গে। তাঁর আগে আজ রোববার বিকেলে প্রথম আলো বিনোদন বিভাগের সঙ্গে আলাপ হলো তাঁর।
‘রোহিঙ্গা’ ছবিতে কীভাবে সুযোগ পেলেন?
গত বছরের শুরুর দিকের কথা। ইনস্টাগ্রামে ছবি দেখে পরিচালক হায়দার খান আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি একজন ভালো ফটোগ্রাফারও। তিনি প্রথমে আমাকে দিয়ে ক্যালেন্ডারের জন্য একটি ফটোশুট করাতে চেয়েছিলেন। ভুটানে গিয়ে শুট করার কথা ছিল, কিন্তু সে সময় আমি যেতে পারিনি। এরপরও কয়েকবার তাঁর সঙ্গে ফটোশুটের পরিকল্পনা হয়, কিন্তু সময় ঠিকঠাক মিলছিল না। একদিন হঠাৎ করেই তিনি সিনেমাতে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। আমি ২০ দিন সময় নিই। এরই মধ্যে তাঁর সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিই। দেখলাম, ভারতের প্রায় সব তারকার সঙ্গেই তাঁর কাজ হয়েছে। ‘দঙ্গল’, ‘দাবাং’, ‘দাবাং ২’, ‘দাবাং ৩’, ‘কমান্ডো’সহ অনেক ছবিতে সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন। এ ছাড়া ভারতের বিভিন্ন সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায়ও তিনি কাজ করেছেন। সবকিছু জেনে নিয়েই কাজটি করতে রাজি হই। মুম্বাইতে অডিশনের জন্য ডাকা হয়, কিন্তু আমি ঢাকাতে অডিশন দিতে রাজি হই। এরপর চিত্রনাট্যটি পাঠিয়ে চরিত্রের কিছু অংশ অভিনয় করে ভিডিও পাঠাতে বলেন। আমি অভিনয় করে তিন মিনিটের একটি ভিডিও ফুটেজ পাঠাই। আমি ভাবিনি যে সুযোগ পাব। ভিডিওটি দেখার পর হায়দার খান নিজেই ফোন করে কাজটিতে আমাকে চূড়ান্ত করেন। এর দুই মাস পর শুটিং শুরু হয়।

ছবির গল্প কেমন?
একজন রোহিঙ্গা মেয়ের জীবনের ভালোবাসার গল্প। তবে অ্যাকশনও আছে। গল্পের কিছু অংশে রোহিঙ্গাদের নিয়ে বিশ্বরাজনীতির ব্যাপারটিও এসেছে।

আপনার চরিত্রের গল্প কেমন?
আমার চরিত্রের নাম হুসনে আরা। রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের একজন মেয়ে। পাহাড়ের সমতলে জঙ্গলের ধারে বসবাস। একদিন বাজার করতে গিয়ে ভারতের এক সৈনিকের সঙ্গে দেখা হয়। সেখান থেকেই দুজনের সম্পর্কের সূত্রপাত। ওই সৈনিকের চরিত্রটি করেছেন মিস্টার ভুটান। নাম স্যাঙ্গে। হুসনে আরাকে নিয়েই ছবির গল্প।
ছবির শুটিং কবে শেষ করলেন?
ছবির শুটিং এখনো চলছে। তবে আমার অংশের কাজ গত বছরের ১ ডিসেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বর করে ফেলেছি। টানা এক মাস কাজ করেছি। গুয়াহাটি ও আসামে শুটিং করেছি। ভারতের আসামের একদম শেষ সীমানা চানডুবি নামক এলাকাতে শুটিং বেশি হয়েছে। চারদিকে পাহাড়। নিচে জঙ্গল ও পাহাড়ি নদী। দারুণ একটি জায়গা।
শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা কেমন?
মজার ও ভয়ংকর—দুটোই। কারণ, চানডুবিতে একটি সরকারি পিকনিক স্পটে আমরা তাঁবু গেড়ে থাকতাম। পাশেই জঙ্গল, পাহাড় ও নদী। রাত ১২টার পর বের হওয়া যেত না। বুনো হাতির দল আসত। একদিন হাতির তাড়া খেয়ে আমাদের একজন সদস্য আহতও হয়েছিলেন। কোনো মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই সেখানে। চার–পাঁচ দিন পরপর প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে মোবাইলে কথা বলতে যেতে হতো। সেখানে গিয়ে পরিবার বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে ফোনে কথা বলতাম। শুটিংয়ের ও নিজের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দিতাম। প্রায় এক শ জনের একটি টিম নিয়ে এভাবে শুটিং করেছি। খুব কষ্ট হয়েছে। শুটিং করতে গিয়ে প্রতিদিনই এক ঘণ্টা করে ওই নদীতে নৌকা চালাতে হয়েছে।

চরিত্রটি করতে কেমন লেগেছে?
সিনেমায় প্রথম কাজ। আগে অভিজ্ঞতা ছিল না। চরিত্রটিতে মেয়েটি কম কথা বলে। শুটিংয়ে পরিচালক হায়দার খান সহযোগিতা করেছেন। তবে শুটিং করতে করতে একটা পর্যায়ে নিজেকে আর মিথিলা মনে হতো না, মনে হতো আমিই হুসনে আরা। শুটিংয়ের পরিবেশই চরিত্রের মধ্যে ঢুকে যেতে বাধ্য করেছিল। কারণ, কোনো নেটওয়ার্ক না থাকায় লোকেশন থেকে কারও সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ ছিল না। ফলে চরিত্রটি ধারণ করে কাজ করাটা সহজ হয়েছে।

শুটিং করতে করতে একটা পর্যায়ে নিজেকে আর মিথিলা মনে হতো না। ছবি: সংগৃহীত
শুটিং করতে করতে একটা পর্যায়ে নিজেকে আর মিথিলা মনে হতো না। ছবি: সংগৃহীত
ছবিটি তো রোহিঙ্গা ও হিন্দি ভাষাতে হয়েছে। সমস্যা হয়নি?
হিন্দিটা আমি ভালোই পারি। শুটিং শুরুর আগে ইংরেজিতে চিত্রনাট্যটি আমাকে পাঠানো হয়েছিল। রোহিঙ্গাদের ভাষাটি অনুশীলন করেছি। তা ছাড়া শুটিংয়ে রোহিঙ্গা ভাষার জন্য একজন অনুবাদক ছিলেন। পরে আর সমস্যা হয়নি।

শুটিংয়ে প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
ওই সময় আমি মাকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য ভারতে ছিলাম। ওখান থেকেই সরাসরি শুটিংয়ে গিয়েছিলাম। বিশ্রাম নেওয়া হয়নি। বিমান থেকে নেমেই শুটিং করতে হয়েছে। আমাকে আগেই জানানো হয়েছিল কোন দৃশ্যটি প্রথমে ধারণ করা হবে। বিমানে বসে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম, কিন্তু প্রথম শট দিতে গিয়ে কিছুটা ঝামেলা হয়েছিল। পরে অবশ্য আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যায়।

চরিত্রটি করে নিজে কতটুকু সন্তুষ্ট?
মোটামুটি সন্তুষ্ট। যেহেতু এটি আমার প্রথম ছবি, তাই ভুলত্রুটি থাকতেই পারে; কিন্তু আমি সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেছি। তবে আগে থেকে অভিজ্ঞতা থাকলে চরিত্রটি আরও এগিয়ে নেওয়া সম্ভব ছিল। পরিচালকও আমার কাজে সন্তুষ্ট।

‘রোহিঙ্গা’ মুক্তি পাবে কবে?
পরিচালকের কাছ থেকে শুনেছি এ বছরই মুক্তি পাবে। তবে মুক্তির তারিখ ঠিক হয়নি। ভারতজুড়ে মুক্তির পাশাপাশি পৃথিবীর বিভিন্ন বড় চলচ্চিত্র উৎসবেও অংশ নেবে ছবিটি।

র‌্যাম্প মডেলিংয়ের কাজ কেমন চলছে?
সিনেমায় শুটিং করার পর থেকে আর র‌্যাম্পে কাজ করছি না। এখন সিনেমা নিয়েই ভাবছি। বলিউডে আরও একটি কাজ হতে পারে। কথাবার্তা চলছে। এ জন্য আগামী মাসে মুম্বাইতে যাচ্ছি। সেখানে দুই মাসের অভিনয় ও নাচের ওপর একটি কোর্স করব। কিছুদিন আগে মুম্বাইতে গিয়ে আমার অংশের ডাবিংও শেষ করে এলাম।

Share