রেমিট্যান্স প্রেরণে খরচ বাড়ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : দক্ষিণ এশিয়ায় রেমিট্যান্স প্রেরণের খরচ এখনও বিশ্বের যে কোনো জায়গার চেয়ে কম। কিন্তু ২০১৭ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে রেমিট্যান্স প্রেরণে গড়ে ৫ দশমিক ২ ভাগ খরচ হয়েছে, চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে এই খরচ বৃদ্ধি পেয়ে ৫ দশমিক ৪ ভাগে দাঁড়িয়েছে। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জনের জন্য রেমিট্যান্স প্রেরণের খরচ কমিয়ে আনতে হবে। বিশ্বব্যাংক এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে চলতিবছর ৫২৮ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসতে পারে। ২০১৭ সালের তুলনায় যা ১০ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। রেমিট্যান্স বিশ্বের প্রধান ৬টি অঞ্চলেই বেড়েছে। ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ায় বেড়েছে প্রায় ২০ ভাগ। দক্ষিণ এশিয়ায় ১৪ ভাগ। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, উপসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টা বিশ্বব্যাপী রেমিট্যান্স প্রবাহে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

চলতি মাসে প্রকাশিত অভিবাসন এবং রেমিট্যান্সে অগ্রগতি ও পূর্বাভাস প্রতিবেদনে এমনটি উল্লেখ করেছে বিশ্বব্যাংক। তবে অনেক দেশে অভিবাসন নীতি পরিবর্তনের প্রভাবে সামনের দিনগুলোতে রেমিট্যান্স প্রবাহে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করা হয়েছে। চলতি বছর দক্ষিণ এশিয়ায় সাড়ে ১৩ ভাগ রেমিট্যান্স বাড়ার পূর্বাভাস দিলেও উপসাগরীয় অঞ্চলে নিয়োগ কমে যাওয়ায় ২০১৯ সাল নাগাদ রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বিশ্বব্যাপী রেমিট্যান্স পাঠানোয় গড় খরচ ছিল ৬ দশমিক ৯ ভাগ। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অনুযায়ী এই খরচ তিন শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য রয়েছে। অর্থাত্ বর্তমানে রেমিট্যান্স পাঠাতে এসডিজির লক্ষ্যের চেয়েও প্রায় তিনগুণ বেশি খরচ হচ্ছে। স্বল্প বা নিম্ন দক্ষ হওয়ায় কর্মীদের নিয়োগে খরচ তুলনামূলক বেশি। তুলনামূলক দক্ষিণ এশিয়া থেকে রেমিট্যান্স আহরণকারী দেশগুলোতে নিয়োগ কমেছে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছর সর্বোচ্চ ৭৯.৮ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আহরণ করে শীর্ষে থাকবে ভারত। এর পরে রেমিট্যান্স আহরণে শীর্ষে থাকবে চীন ৬৭.৪ বিলিয়ন ডলার, ফিলিপাইন ৩৩.৭ বিলিয়ন ডলার, মেক্সিকো ৩৩.৭ বিলিয়ন ডলার, মিশর ২৫.৭ বিলিয়ন ডলার, নাইজেরিয়া ২৫.১ বিলিয়ন ডলার, পাকিস্তান ২০.৯ বিলিয়ন ডলার, ইউক্রেন ১৬.৫ বিলিয়ন ডলার, ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশ আহরণ করবে ১৫.৯ বিলিয়ন ডলার।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৭ সালের পর বিশ্বে উদ্বাস্তুর সংখ্যা ১ কোটি ৯৯ লাখে পৌঁছেছে। বাংলাদেশে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা দশ লাখ ছাড়িয়েছে। এদিকে ভেনেজুয়েলাসহ দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো হতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অবৈধ অভিবাসী ফেরত পাঠানোর সংখ্যাও বেড়েছে।

ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমার পরও প্রবাসী আয়ের গতিও নিম্নমুখী লক্ষ্য করা গেছে। নভেম্বর মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় রেমিট্যান্স আয় ৩ শতাংশ কমেছে। সর্বশেষ নভেম্বর মাসে ১১৭ কোটি ৮৩ লাখ ডলার প্রবাসী আয় দেশে এসেছে। যা গত বছর একই সময় ছিল ১২১ কোটি ৪৮ লাখ ডলার। বাংলাদেশে ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার পরও রেমিট্যান্স আয়ের পরিমাণ কমেছে। এতে রিজার্ভের ওপর চাপ পড়ছে। রিজার্ভ এখন আবার ৩০ বিলিয়নের ঘরে নেমে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ৬২৮ কোটি ৬৩ লাখ (৬ দশমিক ২৯ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছে। গত বছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে বাংলাদেশে ৫৭৬ কোটি ৮৪ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল। এই হিসাবে পাঁচ মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৯ শতাংশ। উল্লেখ্য, গত কয়েক বছর ধরেই রেমিট্যান্স ১৩ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। গত অর্থবছর ১৭ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হলেও রেমিট্যান্স ১৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়নি, কারণ তার আগের বছর রেমিট্যান্স অনেক কম এসেছিল।

Share