সৌদি আরবে কথিত হিজরতচেষ্টা, ১৭ জন গ্রেপ্তার

নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : এই রমজানেই ইমাম মাহাদী আসবেন । প্রথম ৩১৩ সেনার তালিকায় নাম ঢোকাতে যেতে হবে সৌদি আরব। প্রকৌশলী সৈয়দ মোস্তাক মো. আরমান খানের এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে একদল আগেই দেশ ছেড়েছিল। আরেক দল আগেই ধরা পড়েছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইমের হাতে।

পৃথিবী বিলয়ের আগে তা অনাচারে পূর্ণ হয়ে যাবে। সে সময় দাজ্জাল নামের এক ব্যক্তির আবির্ভাব হবে, যিনি নানা রকম ভেলকিবাজি দেখিয়ে মুসলিমদের ইমান নষ্ট করবেন। সমাজ যখন ধ্বংসের মুখে পতিত হবে, তখন ইমাম মাহাদীর আর্বিভাব হবে। দাজ্জালের সঙ্গে ভয়ংকর যুদ্ধ হবে এবং সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা হবে। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম এই বিশ্বাসে বিশ্বাসী বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক হারুন অর রশিদ। তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গিগোষ্ঠীর অনুসারী ও জামায়াতপন্থী বক্তারা এই কথাটা বারবার প্রচার করছেন যে ইমাম মাহাদীর আবির্ভাব ঘটেছে। এর আগেও এমন অনেক প্রচার ছিল।

কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) উপকমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, ১৭ জনের একটি দলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে এ দলে আরও দুজন ছিলেন। তাঁরা পালিয়ে গেছেন। ওই দুজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

দলটিতে ছাত্ররা ছাড়াও সরকারি হাসপাতালের একজন চিকিৎসক, চারজন প্রকৌশলী ও কৃষিবিদ রয়েছেন বলে জানান সাইফুল ইসলাম।

৪ মে কাকরাইল থেকে যে ১৭ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাঁরা হলেন মো. হায়দার আলী (৪৪), মো. মাহমুদুল হাসান ওরফে মাসুম, মো. জামিরুল ইসলাম (২৪), মো. বিল্লাল হোসেন (৩৮), মো. শেখ আরাফাত ওরফে জনি (৪৮), মো. ইমরুল হাসান ওরফে ইমন (২৫), মো. সাইফুল ইসলাম (২৫), মো. মোজাম্মেল হক (৩৩), মো. শাহজালাল(৩৪), মো. আক্তারুজ্জামান (৩০), মো. মাহমুদুল হাসান ওরফে সাব্বির (২৩), মো. আবিদ উল মাহমুদ ওরফে আবিদ (২২), মো. সোহাইল সরদার (৩৩), মো. ওবায়দুল ইসলাম ওরফে সুমন (৩০), মাহমুদ হাসান ওরফে শরীফ (১৮), মো. মাজেদুল ইসলাম ওরফে মুকুল ( ২৮) ও মো. সোহাগ হাসান (২০)।

এই সময় তাঁদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের ১৯টি মুঠোফোন, ২ লাখ ৩৪ হাজার বাংলাদেশি টাকা ও ৯২২ আমেরিকান ডলার জব্দ করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা নিজেদের জেএমবির সদস্য বলে স্বীকার করেছেন।

অভিযানে নেতৃত্ব দানকারী অঅিতিরিক্ত উপকমিশনার তহিদুুল ইসলাম জানান, প্রকৌশলী সৈয়দ মোস্তাক বিন আরমান বাংলাদেশ থেকে ২০১৭ সালে সৌদি আরবে যান এবং সেখানে অবস্থান করছেন। তিনি ইমাম মাহাদীর সৈনিক হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করেন এবং এবং গাজওয়াতুল হিন্দ নামক জায়গায় মুসলিমদের পক্ষে জিহাদ করার আহ্বান জানিয়ে অডিও–ভিডিও প্রকাশ করেন।

গ্রেপ্তারকৃতরা সৈয়দ মোস্তাক বিন আরমানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং ইমাম মাহাদীর সৈনিক হিসেবে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে সৌদি আরব যাওয়ার চেষ্টা করেন। গ্রেপ্তারকৃতরা জানান, তাঁরা সৈয়দ মোস্তাক বিন আরমানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন এবং গত মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় তাঁরা তথাকথিত হিজরতের সিদ্ধান্ত নেন।

দলটির পরিকল্পনা ছিল তাবলিগ-জামায়াত পরিচয়ের আড়ালে সাতক্ষীরা বা বেনাপল সীমান্ত দিয়ে তারা ভারত-কাশ্মীর সীমান্ত হয়ে সৌদি আরব পৌঁছাবে। তাদের বলা হয়েছিল করোনার দুর্যোগে আকাশ থেকে একধরনের গজব নেমে আসবে এবং সবকিছু ধোঁয়াছন্ন হয়ে যাবে তখন সীমান্তে কোনো পাহারা থাকবে না। ইমানদারদের শুধু হালকা কাশি হবে। এই সময় তারা যেন চলে আসেন।

এই বিশ্বাস নিয়ে গত ১৮ মার্চ তাঁরা প্রথমে সাতক্ষীরা ও পরে যশোর সীমান্তের কাছে বিভিন্ন মসজিদে অবস্থান করেন। এসব কিছুই না ঘটায় তাঁরা সাতক্ষীরা ও যশোর সীমান্ত দিয়ে পার হতে ব্যর্থ হন। পরে ঢাকা হয়ে সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু তার আগেই ধরা পড়ে যান।

তহিদুুল ইসলাম বলেন, সৈয়দ মোস্তাক বিন আরমানের প্ররোচনায় এবং তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে ইতিমধ্যে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের চার ছাত্র গত জানুয়ারি মাসে ওমরা করতে গিয়ে আর ফিরে আসেননি।

এ ছাড়া বিভিন্ন সময় সাদ, কাউসার, শরীফ, তোফাজ্জল, গিয়াসউদ্দিন, আলী আজম ও রাশেদ নামের আরও সাতজন ইমাম মাহাদির সৈনিক হিসেবে যোগদানের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব হিজরত করেছেন বলে গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছেন।

Share