পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের বনকর্মকর্তাদের বনদস্যু সেজে জেলেদের জিম্মি করার ঘটনা ধামাচাপা দেয়া হচ্ছে

নিজস্ব জেলা প্রতিবেদক : পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের বনকর্মকর্তা বনদস্যু সেজে জেলেদের জিম্মি করার ঘটনা ধামাচাপা দেয়া হচ্ছে। গত ৩ মার্চ সুন্দরবনে পুষ্পকাটি এলাকায় মাছ ধরার সময় ওসি মহসিন আলমের নেতৃত্বে অপর সদস্যরা মুক্তিপনের দাবিতে ৪ জেলেকে অপহরণ করে।অপহরণকারীরা জিম্মী জেলেদের স্বজনদের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকার মুক্তিপন দাবি করে ২৮ হাজার টাকা নগদ গ্রহণ করে জেলেদের মুক্তি দিলেও বাকি ২২ হাজার টাকার জন্য জেলেদের ব্যবহৃত নৌকা ও জাল আটকে রাখে মহসিন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভুক্তভোগী জেলে সোহরাব প্রতিকার চেয়ে পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারি বন সংরক্ষক (এসিএফ) রফিক আহম্মেদ এর নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এঘটনায় একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়। বিষয়টি স্থানীয় কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশের জের ধরে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ফলে উপায়ান্তর না পেয়ে ওসি মহসিন আলম মুক্তিপনের ২৮ হাজার টাকা জেলেদের ফেরত দিতে বাধ্য হয়।

এ ঘটনায় গঠিত তদন্তকারী কর্মকর্তা এসও কেএম কবীর উদ্দীন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ২৮ হাজার টাকা জেলেদের ফেরত দেওয়া হয়েছে। মহসিনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপকে সুপারিশ করা হয়েছে। পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারি বন সংরক (এসিএফ) ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। খুলনা বিভাগীয় বন সংরক্ষক (ডিএফও) বশিরুল আল মামুন বলেন, দুর্নীতি পরায়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। অথচ এই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অদ্যাবধি শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেয়া হয়ণি।তাকে  অঞ্জাত কারণে পশ্চিম সুন্দরবনের পুষ্পকাটি এলাকায় দায়িত্ব দিয়ে রাখা হয়েছে।সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারি বন সংরক্ষক (এসিএফ) রফিক আহম্মেদ মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে এ যাত্রা ওসি মহসিন আলমকে বাচানোর জন্য খুলনা বিভাগীয় বন সংরক্ষক (ডিএফও) এর নিকট দায়সারা প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন্।

সুন্দরবনের অভয়ারন্যে জেলেদের অনুপ্রবেশ
অলিখিত চুক্তিতে বন বিভাগ

সুন্দরবনের মৎস্য ও বন্য প্রাণীদের নিরাপদ প্রজনন, বিচরণ ত্রে হিসেবে সরকার সুন্দরবনের কয়েকটি সুন্দর নিরাপদ নয়নাভিরাম স্থানকে অভয়ারন্যে আওতায় এনে এ সকল স্থানে জনসাধারণের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করে। বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তারা এসব স্থানে জেলেদের সাথে অলিখিত চুক্তিতে প্রতিদিন মূল্যবান কাঠ ও মাছ ধরার সহায়তার অভিযোগ উঠেছে। সাতীরা রেঞ্জের পশ্চিম বন বিভাগের আওতায় পুষ্পকাটি, নোটাবেঁকী, নীলকোমল, মান্দার বাড়িযা, হলদীবুনিয়া সহ ১৯ টি খাল ও তৎ সংলগ্ন সুন্দরবনকে অভয়ারন্যের এলাকা হিসেবে ঘোষনা করা হয়েছে। প্রতিদিন শত শত জেলে এসব নিষিদ্ধ ঘোষিত নদ-নদীতে নেট জাল, পাটা জাল দিয়ে মাছ ধরে এবং মৌসুমে কেওড়া ফল, মূল্যবান কাঠ চোরাদের দিয়ে পাচারের সহযোগিতা করে থাকে। মুন্সিগঞ্জ জেলে পরিবারের সুধির মন্ডল জানান, ২ জন জেলে একটি ডিঙি নৌকা নিয়ে নিষিদ্ধ খালে মাছ ধরলে ৩/৪ হাজার টাকার মাছ ধরা যায়। এেেত্র বনবিভাগকে দিতে হয় মাথা পিছু ৪/৫ শ টাকা।
কালিঞ্চি গ্রামের অরবিন্দ মন্ডল, ৯ নং সোরা গ্রামের সামছুর গাজী ও ডুমুরিয়া গ্রামের নজরুল, আমিনুর জানান, বুড়িগোয়লিনী ষ্টেশন কর্মকর্তা দেলোয়ার, কদমতলার ষ্টেশন কর্মকর্তা খবির উদ্দীন ও কৈখালী ষ্টেশন কর্মকর্তা জামাল উদ্দীন জন প্রতি প্রতিদিন জেলেদের নিকট থেকে ৫ শ টাকা ও চোরাই কাঠের নৌকা প্রতি ২ হাজার টাকা নিয়ে বনে প্রবেশের মৌখিক অনুমতি দিয়ে থাকেন। শ্যামনগরের উপকূল অঞ্চলে কয়েক হাজার জেলে আছে যারা সুন্দরবন ও তৎ সংলগ্ন নদ-নদীর উপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। সম্প্রতি শ্যামনগর উপজেলা প্রশাসন খোলপেটুয়া নদী থেকে বাগদা রেনু আহরণ করা কয়েক লাখ টাকার নেট জাল পুড়িয়ে দিয়েছে। বনে বাঘ, জলে কুমির ও ডাকাতদের অত্যাচার উপো করে এসব জেলেরা মাছ ধরে থাকে। জেলেদের সাথে নৌকা নিয়ে বনবিভাগকে তুষ্ট করে জেলে সেজে অনেকেই হরিণ শিকারী অভয়ারন্যে প্রবেশ করে কখনো ফাঁদ পেতে আবার কখনো বন্দুক দিয়ে হরিণ শিকার করে। এলাকায় এসব হরিণের মাংস ৪/৫ শ টাকা দরে বিক্রি করে থাকে।
উল্লেখিত অভয়ারন্যের মধ্যে সাধারণের প্রবেশের ফলে বনের গাছ কেটে উজাড় করছে, ফলে সুন্দরবনের ভারসম্য হারিয়ে যাওয়ার বন্যপ্রাণী, পাখ-পাখালী তাদের নিরাপদ স্থান থেকে বিড়াড়িত হচ্ছে। অধিক মুনাফা লাভের আশায় অসাধু জেলেরা ছোট বড় খালের মুখে জোয়ারের পানিতে ঢেলে দিচ্ছে বিষ। এই বিষ মিশ্রিত পানি খাল দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ফলে সকল প্রজাতির মাছ যখন বিষের তেজে ছট ফট করে তখন অসাধু জেলেরা জাল দিয়ে মাছ গুলোকে সহজে ধরে ফেলে। অসাধু বন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দূর্নীতি তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা সহ অপসারনের জন্য বনমন্ত্রীর জরুরী হস্তপে কামনা করেছেন উপকূলীয় বাসীরা। এবিষয়ে সাতক্ষীরা রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকতার সাথে যোগাযোগ করিলে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

Share