মুলতবি ছাড়াই নিষ্পত্তি করতে হবে ধর্ষণ মামলা

নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : বেড়েই চলেছে ধর্ষণসহ নারী নির্যাতনের ঘটনা। বাদ যাচ্ছে না শিশুসহ নানা বয়সের নারীরা। ধর্ষণ ও ধর্ষণ শেষে হত্যার ঘটনায় মামলা হলেও তা দ্রুত নিষ্পত্তি হচ্ছে না। বিলম্বিত এই বিচারের বিষয়টি নজরে আসায় হাইকোর্ট মুলতুবি ছাড়াই ধর্ষণ মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারকদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে সাক্ষী সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, সাক্ষীর উপস্থিতি নিশ্চিতে মনিটরিং টিম গঠন, অফিসিয়াল সাক্ষীর গরহাজিরে বিভাগীয় ব্যবস্থা, ছয় মাসের মধ্যে বিচার শেষ করাসহ সাত দফা নির্দেশনা দিয়ে এ রায় দিয়েছে আদালত।

তিন শিশু ধর্ষণ মামলার আসামিদের পৃথক জামিন আবেদন নিষ্পত্তি করে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এই রায় দেন।

আদালত বলেন, ৩/৪ বছরের শিশুরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে অথচ বিচার দ্রুত শেষ হচ্ছে না এটা দুঃখজনক। ঢাকার শনির আখড়া, বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও নোয়াখারীতে পৃথক তিন শিশু ধর্ষণের মামলায় চার আসামি হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করে। শুনানি শেষে হাইকোর্ট আসামি রাহেল ওরফে রায়হান, সেকান্দার আলীকে জামিন দেয়নি। জামিন পেয়েছেন আসামি রুবেল ও ইমরান।

রায়ে সাত দফা নির্দেশনাসমূহ : সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদ মোতাবেক হাইকোর্টের নির্দেশনাসূমহ: এক. দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন ধর্ষণ ও ধর্ষণ শেষে হত্যা মামলাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আইনে নির্ধারিত সময়সীমার (বিচারের জন্য মামলা পাওয়ার দিন থেকে ১৮০ দিন) মধ্যে যাতে দ্রুত বিচারকাজ সম্পন্ন করা যায়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের বিচারকরা সব ধরনের আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। দুই. ট্রাইব্যুনালগুলোকে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২০ ধারার বিধান অনুসারে মামলার শুনানি শুরু হলে তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি কর্মদিবসে একটানা মামলা পরিচালনা করতে হবে। তিন. ধার্য তারিখে সাক্ষীর উপস্থিতি ও সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জেলায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন), সিভিল সার্জনের একজন প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটরের সমন্বয়ে একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করতে হবে। পাবলিক প্রসিকিউটর কমিটির সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকবেন এবং কমিটির কার্যক্রম সম্পর্কে প্রতি মাসে সুপ্রিমকোর্ট, স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠাবেন। যে সব জেলায় একাধিক ট্রাইব্যুনাল রয়েছে সেসব জেলায় সব ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটররা মনিটরিং কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হবেন। তাদের মধ্যে যিনি জ্যেষ্ঠ তিনি সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবেন। চার. ধার্য তারিখে রাষ্ট্রপক্ষ সঙ্গত কারণ ছাড়া সাক্ষীকে আদালতে উপস্থিত করতে ব্যর্থ হলে মনিটরিং কমিটিকে জবাবদিহি করতে হবে। পাঁচ. মনিটরিং কমিটি সাক্ষীদের ওপর দ্রুত সময়ে যাতে সমন জারি করা যায় সে বিষয়টিও তদারকি করবেন। ছয়. ধার্য তারিখে সমন পাওয়ার পর অফিশিয়াল সাক্ষী (ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, চিকিৎসক বা অন্যান্য বিশেষজ্ঞ) সন্তোষজনক কারণ ছাড়া সাক্ষ্য প্রদানে উপস্থিত না হলে ট্রাইব্যুনাল ওই সাক্ষীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ এবং প্রয়োজনে বেতন বন্ধের আদেশ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় রাখবেন। সাত. অবিলম্বে সাক্ষী সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা দরকার। সরকার অতি অল্প সময়ে ওই বিষয়ে আইন প্রণয়ন করবে বলে প্রত্যাশা করে আদালত।
এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ের সচিবগণ ও সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর রায়ের অনুলিপি পাঠাতে বলা হয়েছে।

Share