‘করোনা শনাক্তের কিট নিয়ে গণস্বাস্থ্যের বক্তব্য মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ : ঔষধ প্রশাসন

নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেছেন, সব কিছু ফয়সালা হয়ে যাওয়ার পর গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র সংবাদ সম্মেলন করে অযাচিত ও কটু মন্তব্য করেছে। যদিও শুরু থেকেই অধিদপ্তর গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে আসছে।

গণস্বাস্থ্য উদ্ভাবিত করোনা নির্ণায়ক জিআর কোভিড-১৯ ডট ব্লট র‌্যাপিড টেস্টিং কিট নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আজ সোমবার স্বাস্থ্য মিডিয়া সেল সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাহবুবুর রহমান অসহযোগিতার অভিযোগ অস্বীকার করেন।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র এখন পর্যন্ত ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে সহযোগিতা করার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে যে তিনটি চিঠি দিয়েছে, সেগুলোও উপস্থাপন করেন মাহবুবুর রহমান। এর মধ্যে সবশেষ চিঠিটি গত ২২ এপ্রিল পাঠানো। গতকাল তাঁদের বৈঠকটিও ‘সৌহার্দ্যপূর্ণ’ ছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি।

অনুমোদনের শর্ত হিসেবে একটি ফার্মের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে। এর মাধ্যমে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ঘুষ খাওয়ার সুযোগ আছে বলে গতকাল রোববার সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এই মন্তব্যকে অত্যন্ত আপত্তিকর (অবজেকশনেবল) বলে উল্লেখ করেন মাহবুবুর রহমান।

রোববার জরুরি সংবাদ সম্মেলনে জাফরুল্লাহ চৌধুরী অভিযোগ করেন, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে গিয়েও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র কিট জমা দিতে পারেনি। অনুমোদনের শর্ত হিসেবে তাদের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে বলা হচ্ছে। অধিদপ্তরের উচিত ছিল কিটগুলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) পাঠিয়ে পরীক্ষা করে দেখা।

আজ পাল্টা সম্মেলনে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, গতকাল বিকেল ৩টার দিকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের তিনজন প্রতিনিধি এসেছিলেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা থেকে তাঁদের একজনকে বাইরে অবস্থান করতে বলা হয়।

অধিদপ্তর প্রতিনিধিদলকে অনুমোদন পাওয়ার স্তরগুলো জানায়। নিয়ম অনুযায়ী, একটি কন্ট্র্যাক্ট রিসার্চ ফার্মের (সিআরও) সঙ্গে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে চুক্তিবদ্ধ হয়ে প্রটোকল তৈরি করতে হয়। প্রটোকলে কিটটি কার্যকর কি না, সেটির ট্রায়াল কীভাবে হবে, কতজনের ওপর হবে, কত সময়ের মধ্যে হবে, সে বিষয়গুলোর উল্লেখ থাকে। বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ সেন্টার (বিএমআরসি) থেকে উৎপাদন প্রক্রিয়া যথাযথ ছিল কি না, সে সম্পর্কিত মূল্যায়ন হওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ট্রায়ালের কাগজপত্র ও বিএআরসির মূল্যায়নপত্র খতিয়ে দেখে বিপণন বা বাজারজাতকরণের অনুমতি দেবে।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, অধিদপ্তরের যে কমিটি অনুমোদন করে থাকে, সে কমিটির সদস্যরা বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানী ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দক্ষ।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র সিআরও হিসেবে কার সঙ্গে কাজ করতে পারে, জানতে চাইলে মহাপরিচালক আইসিডিআর,বি, আইইডিসিআর ও আইপিএইচ এর কথা বলেন। জোর দেন আইসিডিডিআর’বির ওপর।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, পরে প্রতিনিধিদল বলে, আইসিডিডিআর,বি লকডডাউন। যদিও আইসিডিডিআর,বির আংশিক লকডাউন এবং গবেষণাকাজ চলছে। পরে তাঁদের নয়টি প্রতিষ্ঠানের কথা বলা হয়। চিঠি চাইলে হাতে হাতে চিঠিও দেওয়া হয়। বেসরকারি সংস্থা এমিনেন্সের কথাও তিনি বলেছেন বলে উল্লেখ করেন।

মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে মিটিং হবার পর বিকেল ৪টায় উনি (জাফরুল্লাহ চৌধুরী) জরুরি সংবাদ সম্মেলন করলেন।’

মহাপরিচালক বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা র‌্যাপিড টেস্ট সুপারিশ করে না। তারপরও বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা করছেন বলে তাঁরা সহযোগিতা করেছেন। রিএজেন্ট আনার অনুমতি ১৮ মার্চ চান, ২০ তারিখে অনুমতি দেওয়া হয়। অধিদপ্তর ২২ মার্চ অনুমোদন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গবেষণাগার দেখতে চায়। গবেষণাগার দেখে এসে কিছু সংশোধনের পরামর্শ দেয়। ৬ এপ্রিল তাঁরা আবারও পরিদর্শনে যান এবং দেখেন সুপারিশ অনুসারে গবেষণাগারে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এনেছেন।

হস্তান্তর অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে মহাপরিচালক বলেন, তাঁরা অনুমোদনের পর অনুষ্ঠান করার অনুরোধ করেছিলেন।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, কিট ভালো কি মন্দ, তা নিয়ে পরীক্ষার আগে তিনি কোনো মন্তব্য করবেন না। তিনি জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে সম্মান করেন। আশা প্রকাশ করেন, তিনি বিজ্ঞানভিত্তিক ও সৌজন্যমূলক আচরণ করবেন।

Share