নিজস্ব ডেস্ক প্রতিবেদক : ঘণ্টায় ১৭০ কিলোমিটার গতির বাতাসের শক্তি নিয়ে ভারতের ওড়িশা উপকূলের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে হারিকেনের তীব্রতাসম্পন্ন অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণী। ভারতের আবহাওয়া অফিস বলছে, চার দিন আগে দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়া ফণী আগামী শুক্রবার পুরির দক্ষিণে গোপালপুর ও চাঁদবালির মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
তখন বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১৭৫ থেকে ১৮৫ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়োহাওয়ার আকারে ২০৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে।
অবশ্য ধীর গতিতে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে অতি প্রবল হয়ে ওঠা এ ঝড় গতিপথ বদল করলে বদলে যেতে পারে উপকূল অতিক্রম করার সময় ও স্থান।
উপকূল পার হওয়ার পর ধীরে ধীরে কমে আসবে ফণীর দাপট। তবে তার আগে বিস্তীর্ণ এলাকায় ঝরাবে বৃষ্টি, এর আওতায় থাকছে বাংলাদেশও।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর।
সেই সঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করার এবং গভীর সাগরে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার রাত ৯টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১২১০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১১৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১১৪০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল ফণী।
আর ভারতের আবহাওয়া অফিসের হিসাবে মঙ্গলবার রাত ১১টায় ফনীর অবস্থান ছিল ওড়িশার পুরি থেকে ৭২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিম এবং অন্ধ্রের বিশাখাপত্তম থেকে ৪৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে।
ওই সময় ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৬৫ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়োহাওয়ার আকারে ১৯৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল।
ফণীর গতিপথ বিশ্লেষণ করে জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার জানিয়েছে, বুধবার পর্যন্ত এ ঝড় অন্ধ্র উপকূলের দিয়ে অগ্রসর হয়ে তারপর উত্তরে বাঁক নিয়ে ওড়িশা উপকূলের দিকে অগ্রসর হতে পারে হারিকেনের তীব্রতাসম্পন্ন অতি প্রবল এ ঘূর্ণিঝড়।
ফণী স্থলভাগে উঠে আসার সময় উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হতে পারে স্বাভাবিকের বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে।
এক প্রতিবেদনে একুওয়েদার জানিয়েছে, যে বিস্তীর্ণ অঞ্চল ফণীর তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে, সেখানে দশ কোটির বেশি মানুষের বসবাস।
এই ঝুঁকির কথা মাথায় রেখে ভারত সরকার ইতোমধ্যে অন্ধ্র, ওড়িশা, তামিল নাড়ু ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জন্য জরুরি সহায়তার বরাদ্দ দিয়েছে। পাশাপাশি জরুরি ত্রাণ সহায়তা ও উদ্ধার কাজে অংশ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে সেনা, নৌ, বিমান বাহিনী ও কোস্ট গার্ডের সদস্যদের।
ভারতীয় আবহাওয়া অফিসের রেকর্ড অনুযায়ী, ১৮৯১ সাল থেকে ২০১৭ পর্যন্ত এপ্রিল মাসে বঙ্গোপসারে সৃষ্টি হয়েছে মাত্র ১৪টি ঘূর্ণিঝড়। তার মধ্যে ২০০৮ সালের নার্গিসই কেবল উপকূল অতিক্রম করেছে।
ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ আশপাশের আকাশ থেকে নিজের কেন্দ্রের দিকে মেঘ টেনে নেওয়ায় বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকায় গত চার দিন বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। আগের দিনের মতই মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে রাজশাহীতে, ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
দেশের বেশিরভাগ এলাকা তাপদাহে পুড়লেও সিলেটে ৬৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। দিনের সর্বনিম্ন ২০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে সিলেটেই।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ফরিদপুর, রাজশাহী, ঈশ্বরদী, মোংলা, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলের ওপর দিয়ে যে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে তা কিছুটা প্রশমিত হতে পারে বুধবার।
রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।