নয়াবার্তা প্রতিবেদক : অনির্বাচিত সরকারের দুঃস্বপ্ন থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এটা পূরণ হবে না, জীবনে হবে না। ক্ষমতায় যাওয়ার ইচ্ছা থাকলে জনগণের কাছে যান, নির্বাচন করেন। জনগণ যাকে মেনে নেবে সেই ক্ষমতায় যাবে। এখানে আওয়ামী লীগ কোনো দিন হস্তক্ষেপ করবে না এবং করেও না। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয় সেটা প্রমাণ দিয়েছি।
আজ বৃহস্পতিবার চলতি একাদশ জাতীয় সংসদের ২১তম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দেশের কিছু লোক বিদেশে গিয়ে নালিশ করে। দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করে। এ দেশে নাকি কিছুই হচ্ছে না। পরিবর্তন তাদের চোখে পড়ে না। এখন তারা আনতে চায় অনির্বাচিত সরকার। আমরা দেখেছি অনির্বাচিত সরকারের সময় ব্যবসা বাণিজ্য উন্নয়ন ধ্বংস হয়েছে। ভয়ঙ্কর অবস্থা হয়েছিল। সারা দেশের মানুষ আতঙ্কের মধ্যে থেকেছে। আবার কি এ দেশের মানুষকে আতঙ্কের মধ্যে নিয়ে যেতে চায়? আবার কি এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে তারা ছিনিমিনি খেলতে চায়?
অনির্বাচিত সরকার যারা চায় তাদের সম্পর্কে দেশবাসীকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরা কোথা থেকে কি পয়সা পাবে সে লোভে অন্যের কাছ থেকে পয়সা খেয়ে আমার দেশে অরাজক অবস্থা সৃষ্টি করতে চায়। আমার দেশের মানুষের ওপর বিশ্বাস আছে, আস্থা আছে। বাংলাদেশের মানুষ আজকে যে জীবনে একটা স্থিতিশীলতা পেয়েছে, নিশ্চয় তারা তা ধ্বংস হতে দেবে না। এটা হালে পানি পাবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু কিছু লোক বলে আসছে, দুই তিন বছর অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় থাকলে ক্ষতিটা কী, মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না। এটা কোন ধরনের কথা? আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার আসবে। যার জন্য এত সংগ্রাম, আত্মত্যাগ, জেল-জুলুম সহ্য করেছি। যারা বলে অনির্বাচিত সরকার আসলে মহাভারত অশুদ্ধ হবে না, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন কিন্তু আমাদের সংবিধান? যে সংবিধান জনগণের অধিকার সুরক্ষিত করেছে। সেই সংবিধানকে বাদ দিয়ে অনির্বাচিত সরকার যারা আনতে চায় তারা কী স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে? তারা কী গণতন্ত্র, জনগণের অধিকারে বিশ্বাস করে? তাদের কষ্টটা কোথায়? জনগণ ভালো থাকলে তাদের কষ্ট লাগে কেন?
সংসদ নেতা বলেন, অনেকেই বলেন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না, এখানে অনির্বাচিত সরকার আনতে হবে। ছয়টি উপনির্বাচন হলো। আমার প্রশ্ন এই নির্বাচন সম্পর্কে তো কেউ একটা কথাও বলতে পারেনি। এই নির্বাচন যে স্বচ্ছ, অবাধ, নিরপেক্ষ হয়েছে… এটা কী প্রমাণ করে না আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আছে বলেই নির্বাচন কমিশন স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন করার সক্ষমতা রাখে। সেখানে সরকার কোনো রকম হস্তক্ষেপ করেনি এবং করবেও না।
বাংলাদেশের একটি মানুষও ছয়টি উপনির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেনি দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, তবে কিছু লোক আছে তাদের সবসময় উল্টো কথা বলতেই হবে।
ফোনে আড়িপাতার সমালোচনাকারীদের জবাব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি এটা ঠিক। কিন্তু বিভিন্ন এপসের মাধ্যমে দেখায় কীভাবে জঙ্গি বানানো যায়, কীভাবে বোমা বানানো যায় সেগুলো শেখানো হয়। সেগুলো যদি আড়ি নাই পাতা যায় তাহলে কীভাবে এই জঙ্গি ও সন্ত্রাস মোকাবিলা করব? তথ্য পাব কীভাবে। আড়িপাতা নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেন। কারণটা কী। কোন রহস্যের কথা বলবেন যেটা সরকার শুনে ফেলবে? এটা সরকার শুনে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসব কর্মকাণ্ড রোধ করার জন্য যেটুকু করার সেটি করে। এটা আইনসিদ্ধ। সব দেশেই আছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচার। এতে দেশবাসী যেন বিভ্রান্ত না হয় সেটাই আমার অনুরোধ।
সরকারবিরোধী আন্দোলনের কথা তুলে তিনি বলেন, আজকে কোনো কোনো দল জোট করছে, আন্দোলন করছে, মিছিল করছে, মিটিং করছে। কই আমরা যখন বিরোধি দলে ছিলাম আমরা তো করতে পারিনি। কিন্তু আমাদের মাঝে গণতান্ত্রিক সহনশীলতা আছে। আমরা সেই সুযোগ দিয়েছি। তবে জনগণের নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের কর্তব্য। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। সেজন্য শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করলে কেউ কিছু বলবে না। তবে আন্দোলনের নামে জ্বালাও পোড়াও, অরাজকতা, ভাঙচুর, অগ্নিসন্ত্রাস, নাশকতা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সরকারপ্রধান বলেন, জঙ্গিবাদ দমন, সন্ত্রাস দমন, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রেই আমরা যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা সফল হয়েছি। আর্থ-সামজিক ক্ষেত্রে উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছি। ২০০৮ এর নির্বাচনে ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষণা দিয়েছি। আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে। এই ডিজিটাল বাংলাদেশের মাধ্যমেই আমরা কোভিড-১৯ মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি।
সরকারের নানা উন্নয়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জাতির পিতাকে নৃশংসভাবে হত্যার পর দুর্নীতিকে নীতিমালা হিসেবে গ্রহণ করে ব্যাপকভাবে লুটপাট করে বলেই দেশের উন্নয়নটা সেভাবে হতে পারেনি। অনেকেই দাবি করেন, বাংলাদেশের আজকের উন্নয়নটা নাকি কোনো কোনো এনজিও থেকে শুরু করে যারা আঁতেল তারা দাবি করে ফেলেন তাদের কারণেই নাকি হয়েছে। এটা ঠিক নয়। একমাত্র রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এবং যথাযথ পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের ফলেই এটা সম্ভব হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে পরপর তিনবার আমরা সরকারে আছি বলেই সেটা সম্ভব হয়েছে। আমার প্রশ্ন, রাজনৈতিক নেতৃত্বের কারণে এটা না হলে আগে এত উন্নয়ন হয়নি কেন? অনেক গালভরা কথা আমরা শুনেছি। কিন্তু সেটার ফল তারা দেখাতে পারেনি। ফল আমরা দেখাতে পেরেছি, আওয়ামী লীগ দেখাতে পেরেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের একটি মানুষও কী এই ৬টি উপনির্বাচনের ব্যাপারে প্রশ্ন তুলতে পেরেছে? তবে কিছু লোক আছে তাদের সবসময় উল্টো কথা বলতেই হবে। ’৭৫ সালের পর থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত আপনারা দেখেন একমাত্র আমরাই ২০০১ এ শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছি। বারবার কোনো না কোনো কিছু ঘটনা ঘটেছে।
তিনি বলেন, অনির্বাচিত সরকারের ফলটা কি হয়েছিল সেটাও আমরা দেখেছি। ’৯৬ এ খালেদা জিয়া ভোটারবিহীন নির্বাচন করেছিল। কিন্তু এ দেশের মানুষ তো মেনে নেয়নি। তাকে দেড় মাসের মাথায় নামতে হয়েছিল। কারণ সে জনগণের ভোট চুরি করেছিল। ‘৭৫ এর পরে মার্শাল ল জারি করে সেনাপ্রধান ঘোষণা দিল আজকে থেকে আমিই রাষ্ট্রপতি। তার ফল কী। বারবার ক্যু। কত মানুষকে গুম খুন করা হয়েছে।
রমজান পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামনে রমজান। অনেক পত্রিকা অনেক কথা লিখছে। আমাদের রমজানের পণ্যের কোনো অভাব নাই।
প্রধানমন্ত্রীর সমাপনী ভাষণের পর ১৯৭১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুর প্রদত্ত ৮ মিনিট ৫৭ সেকেন্ডের ভাষণ প্রচার করা হয়। এরপর অধিবেশন সমাপ্ত ঘোষণা করেন স্পিকার।