অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার প্রচেষ্টার প্রতি মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সমর্থন

নয়াবার্তা প্রতিবেদক : প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে তার ‘মহান বন্ধু’ হিসাবে উল্লেখ করে, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দাতো’ সেরি আনোয়ার ইব্রাহিম অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার প্রচেষ্টার প্রতি তার সমর্থন প্রকাশ করেছেন।

আনোয়ার ইব্রাহিম ৪ অক্টোবর শুক্রবার এক সরকারি সফরে বাংলাদেশে আসেন। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর এটি কোনো সরকার প্রধানের প্রথম আনুষ্ঠানিক বাংলাদেশ সফর।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বিনিয়োগ, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী, পরিবহন উপমন্ত্রী, ধর্ম বিষয়ক উপমন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং মালয়েশিয়া সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ৫৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সফররত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিমানবন্দরে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। এসময় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীকেগার্ড অব অনার ও গান স্যালুটসহ লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

দুই নেতার মধ্যে একটি একান্ত বৈঠক ও একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের মাধ্যমে সফরের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়।

বৈঠকের সময় দুই নেতা দীর্ঘস্থায়ী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে পুনরুজ্জীবিত করতে তাদের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন এবং ডেটা সায়েন্স, সেমি-কন্ডাক্টর, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, অর্থ, স্বাস্থ্য, উচ্চ শিক্ষা, কৃষি, জ্বালানি, প্রতিরক্ষা ও হালাল অর্থনীতিসহ সহযোগিতার সম্ভাব্য ক্ষেত্রগুলো নিয়ে আলোচনা করেন।

উভয় নেতা শিগগিরই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) নিয়ে পরবর্তী দফা আলোচনা করতে সম্মত হন।

আগামী বছরের শুরুতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের যৌথ কমিশনের বৈঠকে বসতেও সম্মত হন তারা।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ও বিশ্বের অন্যত্র ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বিশাল অবদানের প্রশংসা করেন।

বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল থেকে পররাষ্ট্র, বাণিজ্য ও অর্থ, প্রবাসী কল্যাণ, স্বরাষ্ট্র, সড়ক, পরিবহন ও সেতু বিষয়ক উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত, সংশ্লিষ্ট সচিব এবং বাংলাদেশ সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান উপদেষ্টা একটি গণতান্ত্রিক ও ন্যায়পরায়ণ বাংলাদেশের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত চলমান সংস্কার উদ্যোগ সম্পর্কে সফররত প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। ‘আমরা একটি নতুন বাংলাদেশে যাচ্ছি, যা আমাদের গর্বিত করবে’- বলেন অধ্যাপক ইউনূস।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক গতিপথকে ট্র্যাকে ফিরিয়ে আনতে’ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচেষ্টার প্রতি তার সমর্থন ব্যক্ত করেন।

আনুষ্ঠানিক আলোচনা চলাকালে প্রধান উপদেষ্টা নির্দিষ্ট সময়ে মালয়েশিয়া যেতে না পারা ১৮ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিকের ব্যাপারে আনোয়ার ইব্রাহিমের বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আশ^স্ত করেছেন যে তার সরকার এই বাংলাদেশি শ্রমিকদের আবেদনের বিষয়ে গুরুত্ব দেবে।
প্রফেসর ইউনূস মালয়েশিয়া সরকারের প্রতি বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য মাল্টিপল ভিসা প্রদান এবং মালয়েশিয়ায় পেশাজীবী ও কর্মী বৃদ্ধির আহ্বান জানান।

মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের অসামান্য অবদানের কথা গভীরভাবে প্রশংসা করে আনোয়ার ইব্রাহিম শালীন কাজের অবস্থা এবং অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করার গুরুত্বের ওপর জোর দেন।

তিনি আরো বলেন, মালয়েশিয়া সরকার এই সেক্টরে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া পর্যালোচনা করছে।

প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশে ১.২ মিলিয়ন রোহিঙ্গার উপস্থিতির কারণে বাংলাদেশের মুখোমুখি হওয়া অসংখ্য চ্যালেঞ্জের প্রতি তার মালয়েশিয়ার প্রতিপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

অধ্যাপক ইউনূস আশা প্রকাশ করেন যে মালয়েশিয়া আসিয়ানের সভাপতিত্ব গ্রহণ করতে যাওয়া মাউলয়েশিয়া মিয়ানমারের নাগরিকদের দ্রুত প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ বাড়ানোর জন্য তার ক্ষমতা ব্যবহার করবে।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি এ ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন। আসিয়ানের সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনারের জন্য বাংলাদেশের বিডের বিষয়ে, জনাব আনোয়ার ইব্রাহিম সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

পরে প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যৌথভাবে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেন।
গণমাধ্যমের সদস্যদের সাথে মতবিনিময়কালে উভয় নেতা একমত হন যে এই সফর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় উন্নীত করেছে।

সংবাদ সম্মেলনের পর অধ্যাপক ইউনূস সফররত প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে এক সংবর্ধনার আয়োজন করেন। এ সময় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা, মালয়েশিয়ার প্রতিনিধিদলের সদস্য, বিদেশি রাষ্ট্রদূত, সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। এসময় পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো আলোচনায় প্রাধান্য পায়।

Share