অফিস করছেন ‘বরখাস্ত’ সেই কাস্টমস কর্মকর্তা

নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : রাজশাহী কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা আইয়ুব আলীকে ঘুষের অভিযোগে বরখাস্ত করা হলেও তিনি পুরোদস্তুর অফিস করছেন। বাসায় ঘুষের টাকা ভাগাভাগির সময় আইয়ুবসহ সাতজনকে আটকের পর গত ১৯ আগস্ট জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে তাকে বরখাস্তের আদেশ দেওয়া হয়। বিষয়টি তদন্ত করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রথম সচিব মোহাম্মদ ফাইজুর রহমানকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

গত সোমবার দুপুরে রাজশাহী বিভাগীয় কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কার্যালয়ে গিয়ে আইয়ুব আলীকে কর্মরত দেখা গেছে। অভিযোগ রয়েছে, কাস্টমস কমিশনার মজিবুর রহমানের প্রশ্রয়ে তিনি এখনও নিজ কার্যালয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। আর আইয়ুব আলীর মাধ্যমেই সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে আসা মালামালের রাজস্ব ফাঁকির অর্থ বুঝে নিতেন মজিবুর। পরে এই অর্থ আইয়ুব আলীর উপশহর এলাকার বাসভবনে ভাগাভাগি হতো। সেখানে চলত মদের আসরও। আইয়ুব আলীর মাধ্যমে কাস্টমস কমিশনার অবৈধ অর্থ আদায় করতেন বলে তাদের মধ্যে রয়েছে বিশেষ সখ্য।

কাস্টমস কমিশনারের কার্যালয়ে ঢুকতেই দেখা যায়, তিনতলা থেকে সিঁড়ি বেয়ে নামছেন আইয়ুব আলী। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্যারের কাজে বাইরে যাচ্ছি।’ বরখাস্ত হওয়ার পরও কেন স্যারের কাজে যাচ্ছেন- জানতে চাইলে তিনি তখনই কথা উল্টে বলেন, ‘নিজের কাজে বাইরে যাচ্ছি। আমি তো বরখাস্ত, অফিসে হাজিরা দিচ্ছি, কাজ করছি না। আপনি কমিশনার স্যারের সঙ্গে কথা বলেন।’ এ কথা বলেই তিনি সেখান থেকে সটকে পড়েন।

গত ২৪ জুলাই গভীর রাতে আইয়ুব আলীর বাসা থেকে ঘুষের আট লাখ ৩০ হাজার টাকা, সাত হাজার ডলার, একটি পিস্তলসহ গোয়েন্দা পুলিশ সাতজনকে আটক করে। পরে ছয়জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। বাসায় মদের আসর বসানোর অভিযোগও ছিল আইয়ুব আলীর বিরুদ্ধে। গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানের সময় মদ্যপ ছিলেন আইয়ুব আলী।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইয়ুব আলী বলেন, ‘মদ খাওয়ার লাইসেন্স আছে আমার। তাই বাসায় মদপান করছিলাম। এটা দোষের কিছু নয়।’ তবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ রাজশাহীর অতিরিক্ত পরিচালক জাফরউল্লাহ কাজল বলেন, তাদের রেজিস্ট্রারে আইয়ুব আলীর মদপানের লাইসেন্স নেই। আইয়ুব আলীর নামে তারা লাইসেন্স ইস্যু করেননি।

বরখাস্তের পরও আইয়ুব আলীকে স্বপদে বহাল রেখে অফিসে কাজ করানোর বিষয়ে জানতে চাইলে কাস্টমস কমিশনার মজিবুর বলেন, বরখাস্তের কাগজেই লেখা আছে, অফিসে নিয়মিত হাজিরা দিতে হবে। সে হাজিরা দিতে আসে। তাকে অফিসের দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া হচ্ছে না।

তবে অফিসের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, বরখাস্তের পরও তিনি আগের মতোই দাপট নিয়ে কাজকর্ম চালাচ্ছেন। তাই তারা বরখাস্তের খবর বিশ্বাস করতে পারছেন না। আইয়ুব আলী নিয়মিত অফিস করছেন, নিজের চেয়ারেই বসছেন।

আরেক কর্মকর্তা বলেন, আইয়ুব আলী যত অবৈধ কাজ করেছেন, তার সবই হয়েছে মজিবুরের নির্দেশেই। তাই মজিবুর তাকে বাঁচাতে সব চেষ্টাই করছেন। অনেক ফাইলপত্রে আগের তারিখে স্বাক্ষর করে প্রস্তুত করে দিচ্ছেন।

Share