নিজস্ব ডেস্ক প্রতিবেদক : যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ করা নিয়ে নতুন চাল চেলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অনেকটা আগাম ঘোষণা দিয়ে ২২ এপ্রিল এ–সংক্রান্ত এক নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন তিনি। আদেশে ৬০ দিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী অভিবাসন বন্ধ রাখা হয়েছে। নির্বাহী আদেশে পারিবারিক অভিবাসনকেই মূল লক্ষ্যবস্তু করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের স্বামী-স্ত্রী বা অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানসহ অভিবাসের বেশ কিছু ক্ষেত্র এ নির্দেশের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী নির্বাহী আদেশটি প্রকাশিত হওয়ার পরপরই প্রথম আলো উত্তর আমেরিকাকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, পুরো নির্বাহী আদেশটি খুবই চতুরভাবে করা হয়েছে। পারিবারিক অভিবাসন বন্ধ করার যে প্রচারণা ডোনাল্ড ট্রাম্প চালিয়ে এসেছেন, এ নির্বাহী আদেশে সেটাকেই তিনি টার্গেট করেছেন।
নির্বাহী আদেশে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে অ্যাডজাস্টমেন্টের জন্য অপেক্ষমাণদের কোনো অসুবিধা হবে না। যাঁরা এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে আসার ভিসা পেয়েছেন, তাঁদের ভিসা হালনাগাদ থাকলে তাঁদেরও কোনো অসুবিধা হবে না।
মঈন চৌধুরী বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে অ্যাসাইলাম ও বিনিয়োগে ভিসায় আসা লোকজনকেও নির্বাহী আদেশে বন্ধ রাখার কথা বলা হয়নি। স্টেট ডিপার্টমেন্ট এমনিতেই এখন সব অভিবাসন আবেদনপ্রক্রিয়া বন্ধ রেখেছে লকডাউনের কারণে। যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের কনস্যুলেট অফিসে অভিবাসন–সংক্রান্ত কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে। মেক্সিকো ও কানাডা স্থলসীমান্ত বন্ধ রয়েছে। ১৯৪৪ সালের একটি আইনের আওতায় আগে থেকেই মহামারি ছড়িয়ে দেওয়ার আশঙ্কায় সীমান্তে সব অ্যাসাইলাম আবেদন বন্ধ রাখা হয়েছে।
৬০ দিনের জন্য নির্বাহী আদেশ জারি করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, আদেশটি তিনি আবার মূল্যায়ন করবেন। প্রয়োজনে আরও শক্ত বা শিথিলও করা হতে পারে। তবে কত দিন পর তা মূল্যায়ন করবেন, এ নিয়ে স্পষ্ট কিছু বলেননি তিনি।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মজীবীদের আগে দেখভাল করতে হবে। বাইরের দেশ থেকে আসা কর্মীদের সঙ্গে করোনাভাইরাসের কারণে বেকার হওয়া কর্মীদের প্রতিযোগিতায় যেন পড়তে না হয়, এ কারণে প্রেসিডেন্ট এ উদ্যোগ নিচ্ছেন বলে তিনি জানান।
প্রেসিডেন্ট তাঁর যেকোনো রাজনৈতিক বিপর্যয়ে ইমিগ্রেশন ইস্যুকেই সামনে নিয়ে এসেছেন। ক্ষমতায় এসেই তিনি ট্রাভেল নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেন কিছু দেশ থেকে আসা মানুষের ওপর। তাঁর একের পর এক ইমিগ্রেশনবিরোধী পদক্ষেপ আদালতে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। আদালতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইতিবাচক আদেশও পেয়েছেন। কংগ্রেসের স্থায়ী আইন প্রণয়ন ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের পারিবারিক ইমিগ্রেশন বন্ধ করতে পারছিলেন না প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। দ্বিতীয় দফা নির্বাচনের জন্য নিজের শ্বেতাঙ্গ সমর্থকদের চাঙা রাখার জন্য আবারও এ উদ্যোগ নিয়েছেন এ নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে। করোনাভাইরাস ও জরুরি অবস্থার সুযোগ নিয়ে আগামী দুই মাসের জন্য ইমিগ্রেশন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন।
অভিবাসন আইনজীবীরা বলছেন, দুই মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবস্থা ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে লাখো মানুষ বেকার ভাতার জন্য আবেদন করেছেন। বেকার ভাতা চার মাস করে দেওয়া হবে বলে আগেই কংগ্রেস আইন প্রণয়ন করে। প্রথম দফা ৬০ দিনের পর বা এর আগেই ট্রাম্প আবারও এ নির্বাহী আদেশের মেয়াদ বাড়াবেন বলেই অভিবাসী আইনজীবীরা মনে করেন।
গেস্ট ওয়ার্কার, স্বাস্থ্যকর্মীসহ বেশ কিছু ক্ষেত্র আওতার বাইরে রেখে নির্বাহী আদেশ জারি করা হয়েছে। এ বিষয়ে অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী বলেন, এর মধ্যে যাঁদের ভিসা দেওয়া হয়েছে, তাঁরা আসতে পারবেন। পারিবারিক অভিবাসনের জের ধরে যাঁদের ইন্টারভিউর জন্য ডাকা হয়েছিল, তা আপাতত বন্ধ থাকবে। গ্রিন কার্ডধারী নিকটাত্মীয়ের জন্য অভিবাসনের আবেদন করাটাও বন্ধ থাকবে। গ্রিন কার্ডধারীদের স্বামী, স্ত্রী বা স্বজনের জন্য আবেদনপ্রক্রিয়া বন্ধ থাকবে এ আদেশের ফলে। এ ক্ষেত্রে মার্কিন নাগরিকদের স্বামী, স্ত্রী বা ২১ বছরের নিচের সন্তানদের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ নির্বাহী আদেশকে টেনে নিয়ে নির্বাচন পর্যন্ত যাবেন বলে অন্য আইনজীবীদের মতো আশঙ্কা করছেন মঈন চৌধুরী। তিনি আরও বলেন, নির্বাহী আদেশটি কৌশলে আরোপ করা হয়েছে। আদালতে চ্যালেঞ্জ হবে, তা জানেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। মার্কিন নাগরিকদের স্বামী, স্ত্রী, অপ্রাপ্ত সন্তানদের এ আদেশের বিধিনিষেধ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। যাতে সুপ্রিম কোর্টে পারিবারিক সম্পর্কের মামলা নিয়ে দাঁড়ালে তা সহজেই ঠেকানো যায়। কোনো মার্কিন নাগরিক তাঁর স্বামী, স্ত্রী বা অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের জন্য নয়, পারিবারিক সম্পর্কের অভিবাসনের জন্য আদালতে গেলে তা দুর্বল হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৪৬ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ৮ লাখ ৪৯ হাজার করোনা সংক্রমিত মানুষ শনাক্ত করা হয়েছে। প্রতিদিনই মৃত্যুর তালিকা বাড়ছে। লাখো মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। এক মাসের বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসা–বাণিজ্যও বন্ধ রয়েছে।
এদিকে ভার্জিনিয়া থেকে নির্বাচিত ডেমোক্রেট কংগ্রেসম্যান ডেন বোয়ার বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের ব্যর্থতার জন্য সব সময় শত্রুর অন্বেষণ করে আসছেন। ইমিগ্রেশন এমনিতেই বন্ধ আছে। এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে সারা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ এ ভাইরাসে আক্রান্ত। সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যুও ঘটেছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এ নির্বাহী আদেশকে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ব্যর্থতার দায় অভিবাসীদের ওপর চাপানোর হীন চেষ্টা বলে উল্লেখ করেছেন ক্যালিফোর্নিয়া থেকে নির্বাচিত অপর কংগ্রেসম্যান এরিখ সোয়ালোয়েল।