নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, বাংলাদেশে করোনাভাইরাস আগামী দুই থেকে তিন বছর বা তারও বেশি দিন থাকবে। তবে এই সময়ে সংক্রমণের মাত্রা উচ্চহারে নাও থাকতে পারে।
করোনা মোকাবিলায় সরকারের নেওয়া পরিকল্পনা সম্পর্কে জানাতে গিয়ে বৃহস্পতিবার এ কথা বলেন তিনি। এদিন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন বুলেটিনে অংশ নেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক।
ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি জনবহুল ও অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। করোনাভাইরাসও অত্যন্ত ছোঁয়াচে ভাইরাস। এ কারণে অসতর্ক চলাফেরা ও স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে না চললে সংক্রমণের হার মোকাবিলা করা কঠিন। এদিকে দীর্ঘদিন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখলে কর্মহীনতা, আয় রোজগারের পথ বন্ধ হওয়াসহ অন্যান্য সামাজিক-অর্থনৈতিক কারণেও ব্যাপক অপুষ্টিজনিক রোগবালাইয়ে অনেক মৃত্যু ঘটতে পারে। সে কারণে জীবন ও জীবিকার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষায় সরকারকে কাজ করতে হচ্ছে।’
এ সময় করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ ও গুণীজনের মৃত্যু জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণের কথা জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, ‘কিছুদিন পরে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের উচ্চহার কমে আসতে পারে। কিন্তু করোনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানো হলে অনেক উপসর্গহীন ও মৃদু উপসর্গের রোগীও শনাক্ত হবেন। সেক্ষেত্রে সংক্রমণ সংখ্যার পরিবর্তন দৃষ্টিগোচর নাও হতে পারে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি এক দুই বা তিন মাসে শেষ হচ্ছে না। আগামী দুই থেকে তিন বছর বা তারও বেশি দিন থাকবে। আর করোনা শুধু স্বাস্থ্যগত বিষয় নয়। সামাজিক, অর্থনৈতিক, যোগাযোগ, ধর্ম, বাণিজ্য- সবকিছুর ওপর এর প্রভাব রয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাস্থ্যগত বিষয়ে জোরালো নজর দিয়েছেন। তিনি দুই হাজার চিকিৎসক ও পাঁচ হাজার নার্স নিয়োগ দিয়েছেন। মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টসহ অন্যান্য নিয়োগ প্রক্রিয়াও চলছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি ব্যবস্থাপনায় জেলা পর্যায় পর্যন্ত আরটিপিসিআর পরীক্ষা যত দ্রুত সম্ভব সম্প্রসারিত হবে। এছাড়া করোনার সহজ পরীক্ষা ব্যবস্থাও চালু করা হবে। একই সঙ্গে উপজেলাতে পরীক্ষা চালুর প্রচেষ্টা নেওয়া হবে।’
ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘সব জেলা হাসপাতালে আইসিইউ, হাই ফ্লো নোজাল কেনোলা, অক্সিজেন কনসেনট্রেটরসহ অন্যান্য সুবিধা দ্রুত সরবরাহের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পরীক্ষার কিট ও পিপিইর যেন কোনো অভাব না হয় সেজন্যও পরিকল্পিতভাবে সংগ্রহ ও সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারি সব হাসপাতাল কোভিড এও নন-কোভিড রোগীর যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে মূল্য নির্ধারণ, তদারকি ও প্রয়োজনীয় সব সরকারি সহায়তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারি ও বেসরকারি সব খাত যেন তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে সে বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যতদিন কোভিড থাকবে ততদিন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেই হবে। অবহেলা বা অসাবধানতা নিজেরই ক্ষতি করবে। লক্ষণ থাকলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। যাদের বয়স বেশি ও অন্যান্য রোগ (উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, শ্বাসতন্ত্রের রোগ) রয়েছে তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি। তাই তাদের বেশি সাবধান থাকতে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।’
চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, ‘করোনা সন্দেহ হলে পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা না করে দ্রুত চিকিৎসা দিতে হবে। যে কোনো মূল্যে মৃত্যুর সংখ্যা কমানোর জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিতে হবে।’