নয়াবার্তা প্রতিবেদক : আড়াই বছরে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে ২২ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২১ সালের আগস্ট মাসের আগেও দেশের বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ ছিল ৪৮ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত ২৪ এপ্রিল তা নেমে এসেছে ২ হাজার ৫৩৮ কোটি ২৯ লাখ ১০ হাজার বা ২৫ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। আর বর্তমানে দেশে বিপিএম-৬ হিসাবানুযায়ী দায়হীন তাৎক্ষনিক ব্যবহারযোগ্য নিট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে ১ হাজার ৯৯৭ কোটি ৩০ লাখ বা ১৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন , বর্তমানে দেশের প্রকৃত যে পরিমাণ রিজার্ভ রয়েছে তা দিয়ে তিন মাসের আমদানি দায় মেটানো কষ্টকর। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, কোন দেশের রিজার্ভ দিয়ে কমপক্ষে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সক্ষমতা থাকা জরুরি। রিজার্ভের এমন পরিস্থিতিতে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে আমদানিকারকদের মাঝে। অপরদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফের ৪ দশমিক ৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণের তৃতীয় কিস্তি ছাড়ে রিজার্ভের বেধে দেওয়া লক্ষ্য পূরণেও বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যর্থ হচ্ছে। সংকটময় পরিস্থিতির মধ্যেই আইএমএফের সফররত বিশেষ দল ঋণের শর্তসমূহ নিয়ে সরকারের সাথে আলোচনা করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র বলছে, আড়াই বছর আগে রিজার্ভ ছিল ৪৮ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন। ২৪ এপ্রিল বুধবার দেশের গ্রস রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার। আর আইএমএফের পরামর্শে বিপিএম-৬ অনুযায়ী, ছিল ১৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার। তবে এটি প্রকৃত রিজার্ভ নয়, এর বাইরে আরও একটি হিসাব হয় যা শুধু আইএমএফকে দেওয়া হয়। সে হিসাবে আড়াই বছরেরই রিজার্ভ কমেছে প্রায় ২২ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ওই হিসাবে প্রকৃত ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ বের করতে বিপিএম ম্যানুয়াল থেকে চলতি দায় বাবদ আকু বিল, বৈদেশিক পাওনা, প্রকল্প বকেয়া বিল, এবং বিশেষ পরিপূরক মুদ্রার (এসডিআর) বকেয়া হিসাবে ৫ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার বাদ দিতে হবে। সেই হিসাবে এগুলো বাদ দিয়ে ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ দাঁড়ায় ১৪ দশমিক শূন্য ৭ বিলিয়ন ডলার। ব্যাংকখাত সংশ্লিষ্টদের মতে, আইএমএফ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ নেওয়া হচ্ছে। তবে তা দিয়ে তেল-গ্যাস আমদানির খরচ মেটাতেই তা শেষ হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে রিজার্ভ আর বাড়ছে না। জরুরি এলসি নিষ্পত্তির জন্য বাধ্য হয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ডলারের সরবরাহ বাড়াতে পদক্ষেপ যে টুকু কার্যকর হচ্ছে তা দৃশমান না। এদিকে, রিজার্ভ কমায় উদ্বেগ দেখা দিয়েছে আমদানিকারকদের মাঝে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, গত জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ মাসের গড় আমদানি ব্যয় ছিল যথাক্রমে ৫ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার, ৫ দশমিক ২০ বিলিয়ন এবং ৫ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার। চলতি বছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট আট মাসে পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছে ৪৪ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার। যা গড় হিসাবে প্রতি মাসে ৫ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার। চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিক্রি করা হয়েছে। আলোচিত সময়ে বাণিজ্যিক কিছু ব্যাংক থেকে ১ বিলিয়ন ডলারের মতো কেনা হয়েছে। আরও ২ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার সোয়াপ পদ্ধতির মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে বন্ধক রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ১৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছিল।
এদিকে, আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের দুই কিস্তির অর্থ পেয়েছে দেশ। এখন তৃতীয় কিস্তির অর্থ পাওয়ার কথা। অথচ তাদের দেওয়া শর্ত অনুযায়ী, বাংলাদেশের নিট রিজার্ভের উন্নতি হয়নি। এমন বাস্তবতা সামনে রেখে ঋণের শর্ত পর্যালোচনা করতে আইএমএফের একটি বিশেষ দল বর্তমানে ঢাকায় রয়েছেন। আগামী ৮ মে পর্যন্ত তাদের সাথে সরকারের বৈঠক চলবে। ৪৭০ মিলিয়ন ডলারের ঋণের শর্ত হিসাবে রিজার্ভ সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা কমাতে আইএমএফের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে যে অব্যাহতি চেয়েছিল বাংলাদেশ, তা অনুমোদন করেই দ্বিতীয় কিস্তি ছাড় করেছিল সংস্থাটি। আইএমএফর শর্ত অনুযায়ী, ডিসেম্বর শেষে রিজার্ভ সংরক্ষণের নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৭ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার। ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকৃত রিজার্ভ ছিল ১৬ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার। আর মার্চ শেষে প্রকৃত রিজার্ভ থাকার কথা ১৯ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার, বাস্তবে তা ছিল প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার। আবার গত বছরের জুনে ২৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও তখনও প্রকৃত রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তা বলেন, দেশের রিজার্ভ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের চেয়ে অতিরিক্ত রিজার্ভ রয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।