নিজস্ব জেলা প্রতিবেদক : পোশাকশ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে ঈদের ছুটি বাড়িয়ে দিচ্ছেন কারখানার মালিকেরা। অধিকাংশ কারখানাই ৫ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত ছুটি দিচ্ছে। যদিও করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারের তিন দিনের ছুটি ও কর্মস্থলে অবস্থান করার নির্দেশনা ছিল। পোশাকশিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ তাদের সদস্যদের সেটি মেনে চলতে বলেছিল।
ঈদের ছুটি বাড়াতে গত শনিবার মিরপুরের বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা আন্দোলনে নামেন। পরে সেটি বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। আজ সোমবার মিরপুরের কালশীতে স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের একটি কারখানার শ্রমিকেরা ১০ দিনের ছুটির দাবিতে আন্দোলনে নামেন। পরে মালিকপক্ষ সেটি মেনে নেয়। আন্দোলনের কারণে কারখানাটিতে আজ কোনো উৎপাদন হয়নি। এদিকে ঈদে ছুটি বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলন করেছেন হা-মীম গ্রুপের শ্রমিকেরা। এ সময় বিনা উসকানিতে পুলিশের বিরুদ্ধে টঙ্গীর মিলগেটে শ্রমিকদের ওপর গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে। এতে কমপক্ষে ১২ জন আহত হয়েছেন, তাঁদের সবাই হা-মীমের কর্মী।
জানতে চাইলে বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার থেকে তিন দিন ছুটি দেওয়ার নির্দেশনা ছিল। আমরাও সেটিকে স্বাগত জানিয়েছিলাম। তবে শ্রমিকেরা কেউ তিন দিনের ছুটি মানতে চাচ্ছে না। তাদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। সে কারণেই ৫-৭ দিন ছুটি দিচ্ছে। অনেক কারখানা ঈদের ছুটিকে হিসাবে নিয়ে আগেই ৪-৫ দিন অতিরিক্ত কাজ করিয়েছে। তারা সেটিকে সমন্বয় করছে।’
অন্যদিকে বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কারখানার মালিকদের “শ্রমিক-মালিক” সম্পর্কের ভিত্তিতে আলোচনা করে ছুটি দিতে বলেছি। অনেক কারখানা ঈদের পর কাজ না থাকায় ১০ দিন ছুটি দিচ্ছে।’ কাজ থাকলে কোনো কারখানা ৪-৫ দিন দিচ্ছে। ছুটি নিয়ে বিকেএমইএর কারখানাগুলোতে সমস্যা হচ্ছে না বলে জানান তিনি।
ঈদের ছুটি ও বেতন-ভাতা নিয়ে গতকাল রোববার বিজয়নগরের শ্রম ভবনের সম্মেলনকক্ষে তৈরি পোশাক খাতবিষয়ক ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদের (টিসিসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। তিনি বলেন, ঈদের সরকারি ছুটি তিন দিন। তবে ছুটি যে কদিনই দেন, ছুটিতে তৈরি পোশাকসহ সব খাতের শ্রমিকদের কর্মস্থলে থাকতে হবে। শ্রমিকদের ছুটি পাওনা থাকলে কারখানা পর্যায়ে মালিক-শ্রমিক সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত নেবেন।
এদিকে ঈদের আর বাকি দুই বা তিন দিন। তবে আজ পর্যন্ত অনেক কারখানাই বেতন-ভাতা পরিশোধ করেনি। যদিও গত ২৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় পরামর্শক কমিটির ৬৭তম সভায় শ্রম প্রতিমন্ত্রী মালিকদের ১০ মের মধ্যে বেতন–ভাতা পরিশোধ করতে আহ্বান জানান।
বিজিএমইএ দাবি করেছে, বর্তমানে তাদের সচল কারখানা ১ হাজার ৯১৩টি। এগুলোর মধ্যে ৮৯ শতাংশ বা ১ হাজার ৭০৮টি কারখানা বেতন দিয়েছে। বোনাস দিয়েছে ৯২ শতাংশ বা ১ হাজার ৭৪৬ কারখানা। বেতন-ভাতা নিয়ে সমস্যা হতে পারে এমন ৪৪টি কারখানা কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে বিকেএমইএ দাবি করেছে, ৯৫ শতাংশ কারখানা বেতন-ভাতা দিয়েছে। নারায়ণগঞ্জের পুলিশ লাইনস এলাকার কটন পাওয়ার এক্সএল নামের একটি কারখানার মালিক এক সপ্তাহ আগে তালা দিয়ে পালিয়ে যান। এতে করে শতাধিক শ্রমিকের বেতন–ভাতা পরিশোধে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। মালিককে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে পুলিশ।
শিল্প পুলিশ জানায়, গাজীপুরের ভবানীপুরের কমফোর্ট গার্মেন্টস, সাইনবোর্ডের ইস্ট ওয়েষ্ট ইন্ডাস্ট্রিয়াল লিমিটেড ও টঙ্গীর তামিশনা গ্রুপের শ্রমিকেরা আজ বেতন-ভাতার দাবিতে আন্দোলন করেন। তা ছাড়া গাজীপুরের কালিয়াকৈরের স্টারলিং ডিজাইন ও কোনাবাড়ীর স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের শ্রমিকেরা ঈদের ছুটি বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলন করেন।
বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান আজ এক ভিডিও বার্তায় বলেন, পোশাকশিল্প কঠিন সময় পার করছে। করোনার প্রথম ঢেউয়ের বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে এখনো হিমশিম খাচ্ছেন পোশাকমালিকেরা। বিশ্বের অনেক দেশে এখনো পোশাকের খুচরা বিক্রি বন্ধ। তাই ক্রয়াদেশ ক্রমে গেছে। তারপরও ঈদের আগে হাজারো সমস্যা সত্ত্বেও ৯০ শতাংশ কারখানার মালিক শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিয়েছেন। ৯২ শতাংশ কারখানা ইতিমধ্যে বোনাস দিয়েছে। কিছু কারখানায় বেতন-ভাতা পরিশোধ নিয়ে সমস্যা রয়েছে। সেগুলো সমাধানের চেষ্টা চলছে।