এক বছরে এলসি খোলার হার কমেছে ২৭ শতাংশ

নয়াবার্তা প্রতিবেদক : সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরের (২০২২-২৩) শেষ মাসে লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খোলার পরিমাণ ছিল সবচেয়ে কম। ব্যাংকারদের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরোপিত বিভিন্ন বিধিনিষেধ ও ডলার-সংকটের কারণে এলসি খোলার পরিমাণ কমেছে

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, জুন মাসে ৪ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলারের আমদানি এলসি খোলা হয়েছে। যা ২০২১-২২ অর্থবছরের একই মাসের তুলনায় এলসি খোলার পরিমাণ ৪৪ শতাংশ কম। মে মাসে প্রায় ৪ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলারের আমদানি এলসি খোলা হয়, এপ্রিলে খোলা হয় ৪ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলারের এলসি।

২০২১-২২ অর্থবছরে মোট ৯৪ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬৯ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। অর্থাত্, এলসি খোলার পরিমাণ এক অর্থবছরে প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার বা ২৭ শতাংশ কমেছে।

ব্যাংকাররা জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন বিধিনিষেধের কারণে ব্যবসায়ীদের জন্য পণ্য আমদানির এলসি খোলা কঠিন হয়ে পড়েছে। কিছু পণ্যের আমদানিতে শতভাগ মার্জিন থাকায় ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে নিরুত্সাহিত হচ্ছেন।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, আমদানি এলসি খোলার ক্ষেত্রে সতর্কতা বাড়ানোর কারণে ওভার-ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং কমে গেছে। ফলস্বরূপ, মোট এলসির পরিমাণও কমেছে। তিনি আরো উল্লেখ করেন, ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট আমদানিকৃত পণ্য খুব বেশি কমেনি।

ব্যাংককাররা জানিয়েছেন,সাধারণত একটি অর্থবছরের শেষ মাসে এলসি খোলার চাপ কম থাকে। নতুন অর্থবছরের বাজেটে ব্যবসায়ীরা কোনো সুবিধা পান কি না তার জন্য অপেক্ষা করেন বিধায় এমনটি হয়ে থাকে। অন্যদিকে ডিফার্ড এলসির ক্ষেত্রে ডলার পরিশোধের সময়কাল কমপক্ষে ছয় মাস। সংশ্লিষ্টদের মতে, ব্যাংকগুলো সাইট এলসি খোলার চেয়ে ডিফার্ড এলসি খুলতে বেশি আগ্রহী কারণ তাদেরও ডলারের সংকট রয়েছে।

প্রয়োজন না হলে ব্যবসায়ীরা ডিফার্ড এলসি খুলছেন না উল্লেখ করে একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ডলারের সুদের হার হিসেবে পরিচিত সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট (এসওএফআর) ৫ শতাংশ অতিক্রম করেছে। এটি একসময় ১ শতাংশ এরও কম ছিল। যখন ডিফার্ড এলসি খোলা হয়, তখন সুদের পেমেন্ট ডলারে করতে হয়। সুদের হার বেড়ে যাওয়াও এলসি খোলার পরিমাণ কমার একটি কারণ।

ব্যাংকাররা জানান,ব্যাংকিং খাতে ডিফার্ড পেমেন্টের চাপ কিছুটা কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অবস্থা এখন ভালো। তবে ডলারের সংকট এখনো পুরোপুরি কাটেনি। আশা করা হচ্ছে আগামী দিনে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

অন্যদিকে, ডলার সংকট মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে রেকর্ড ১৩ দশমকি ৫৮ বিলিয়ন ডলার বিক্রি হয়েছে। এ কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও কমছে। ৯ জুলাই পর্যন্ত দেশের রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩০ দমমিক ০২ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, এলসি খোলার হার কমে যাওয়া মানে দেশের অর্থনীতি এখন মন্থরগতির দিকে যাচ্ছে। কাঁচামাল এবং মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি উল্লেখযোগ্য হারে কমছে। অর্থাত্ আমাদের বিনিয়োগ কমবে এবং নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগও কমবে। বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল, সয়াবিনসহ অনেক পণ্যের দাম কমেছে। ফলে একই পরিমাণ পণ্য আমদানিতে আমাদের খরচ কমছে।

Share