নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : আসামির নাম ও তার পিতার নামের মিল থাকায় এক রুবেলের অপরাধে আরেক রুবেলকে কারাগারে পাঠিয়েছে চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জের পুলিশ। এ ঘটনায় দ্রুত প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নিতে চাপাইনবাবগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা হাইকোর্টকে জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বুধবার স্বপ্রনোদিত হয়ে এ আদেশ দেন।
‘এক রুবেলের বদলে জেলে আরেক রুবেল’ শিরোনামে একটি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন আজ হাইকোর্টের নজরে আনা হলে আদালত এ আদেশ দেন। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ওই প্রতিবেদনটি আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। এ সময় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আদালতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।
পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাঁজা সেবনের অভিযোগে ২০১৮ সালের ৬ এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের চরপাঁকা কদমতলা গ্রামের মন্টু আলীর ছেলে রুবেল আলী ওরফে রুবেল বাবুলকে (২৬) গ্রেপ্তর করে পুলিশ। ওইদিনই এসআই আবদুস সালাম রুবেল বাবুলের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন (মামলা নং-১৫)। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। ৫ দিন পর রুবেল জামিনে মুক্তি পান। তিন দফা আদালতে হাজিরা দেওয়ার পর হঠাৎ উধাও হয়ে যান তিনি। ওই বছর ১০ জুলাই এসআই বাবুল ইসলাম আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রুবেল বাবুলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এরপর পরোয়ানাটি দীর্ঘদিন শিবগঞ্জ থানায় পড়ে ছিল। হঠাৎ করে গত ১০ মার্চ রাতে ওই পরোয়ানামূলে শিবগঞ্জ থানা পুলিশ জামাইপাড়া গ্রামের মো. মন্টুর ছেলে মো. রুবেলকে (২৩) গ্রেপ্তার করে।
নিরপরাধ রুবেলের বাবা মো. মন্টু ও এলাকাবাসী বলেছেন, বন্দি রুবেল কয়েক বছর আগে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে গিয়ে ভবন থেকে পড়ে দুই পা ভেঙে যায়। দুই বছর বিছানায়ই ছিল। দীর্ঘ চিকিৎসার পর কিছুটা হাঁটতে পারলেও বাম পায়ে শক্তি নেই আজও। অভাবের তাড়নায় সে জামাইপাড়ায় পাঁকা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আতাউর রহমানের গ্রামের ফাঁকা বাড়িটি দেখাশোনা করতো। সেখান থেকেই পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। অপরদিকে মামলার মূল আসামি রুবেল আলী বছরখানেক আগে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এলাকা ত্যাগ করেন। প্রকৃত আসামির পিতা মন্টু আলী বলেন, বছরখানেক আগে রুবেল গ্রাম ছেড়ে কোথায় গেছে তা জানি না। তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই।
তবে অনেক চেষ্টার পর মূল আসামি রুবেল আলীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘আমাকে কয়েক পুরিয়া গাঁজাসহ ২০১৮ সালের ৬ এপ্রিল ধরেছিল শিবগঞ্জ থানার এক কনস্টেবল। পরে এসআই আবদুস সালামের কাছে নিয়ে যায়। পরে মামলা হালকা করার জন্য সোনা মিয়া নামের একজন দালালের মাধ্যমে আমার কাছ থেকে ২৬ হাজার টাকা নেয় পুলিশ। পরে ওই সোনা মিয়াই উকিল ধরে আমার জামিন করান। আমাকে বলা হয়েছিল মামলাটি আর নেই। এরপর আর খোঁজ করিনি।’