নিজস্ব জেলা প্রতিবেদক : পদ্মায় মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনা হয়। কখনো ফেরি, কখনো লঞ্চ। তবে বেশি দুর্ঘটনার শিকার হয় স্পিডবোট। কিন্তু স্পিডবোট উল্টে এত মানুষের মৃত্যু আগে কখনো কেউ দেখেনি। কথাগুলো বলেছেন মাদারীপুরের বাংলাবাজার ফেরিঘাটের বাসিন্দা হক সাহেব (৩৯)। তাঁর মতো অনেকেই এই মন্তব্য করেছেন। স্থানীয়দের ভাষ্য, বেপরোয়া গতি ও অতিরিক্ত যাত্রী বহনের কারণে স্পিডবোটে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। পদ্মায় স্পিডবোটে যাত্রী বহনে কোনো বৈধতা না থাকলেও এত চোখ এড়িয়ে কীভাবে এটি চলে, সে উত্তর দিতে পারলেন না বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ও নৌপুলিশের কর্তাব্যক্তিরা।
আজ সোমবার সকালে পদ্মায় বালুবাহী বাল্কহেডের সঙ্গে স্পিডবোট দুর্ঘটনায় এই পর্যন্ত ২৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ১৭ জনের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। বাকিদের পরিচয় শনাক্তে কাজ করছে পুলিশের একাধিক দল।
স্পিডবোট দুর্ঘটনার পরই এগিয়ে আসেন স্থানীয়রা। তাঁদের একজন হায়দার আলী। তিনি বলেন, ‘সকালে হঠাৎ বিকট একটা শব্দ শুনেই ঘর থেকে দৌড়ে বাইরে আসি। এসে দেখি স্পিডবোটটি বাল্কহেডের নিচে চলে গেছে। আর যাত্রীরা পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছেন। এর মধ্যেই ঝাঁপিয়ে পড়েন স্থানীয় লোকজন। আমরা ১০ জনের লাশ উদ্ধার করি। পরে আস্তে আস্তে আরও লাশ উঠে আসে। এত বড় ঘটনা আমার জীবনে আমি কখনো দেখিনি।’
দুর্ঘটনায় উদ্ধার লাশ রাখা হয় কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের দোতারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। এখানে আসেন ফরিদপুর অঞ্চলের নৌপুলিশ সুপার মো. আবদুল বারেক। এ সময় তিনি বলেন, ‘লকডাউন কার্যকর থাকায় স্পিডবোট চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ। যে স্পিডবোট চলে তা বাংলাবাজার ঘাট থেকে চলে না। এগুলো চলে শিমুলিয়া ঘাট থেকে। আমাদের এপারের (বাংলাবাজার) ঘাটে লকডাউন কার্যকর আছে।’ তিনি আরও বলেন, পদ্মায় স্পিডবোটে যাত্রী বহনে কোনো বৈধতা নেই। তবু কেন চলাচল করছে, এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তর এড়িয়ে যান।
এ সম্পর্কে বিআইডব্লিউটিএর শিমুলিয়া ঘাটের সহকারী পরিচালক (নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগ) মো. শাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনাস্থল পরিদর্শনে নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, চিফ ইঞ্জিনিয়ার, চিফ সার্ভেয়ার, চিফ পরিদর্শকসহ অনেকেই এসেছেন। লকডাউন চলার সময় এখান থেকে স্পিডবোটটি কীভাবে ছেড়ে গেল, এটা সবারই প্রশ্ন। এত সকালে স্পিডবোট চলার বিষয় আমরা কেউ বলতে পারছি না। স্পিডবোটের কোনো নিবন্ধন নেই। তাই তারা ইচ্ছেমতো চলছে। তবে এই স্পিডবোটগুলো মানুষের সুবিধার্থে চলছে। এগুলো চলাচলে আমাদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া আছে। কিন্তু নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ড এগুলো নিয়ন্ত্রণ করবে। তারা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে আমাদের পক্ষে কী আর করা!’
বিআইডব্লিউটিএর এই কর্মকর্তা বলেন, দুর্ঘটনার শিকার স্পিডবোটটি ২০০ সিসির। এটি ৩২-৩৪ জন যাত্রী বহন করতে পারে। এই নৌপথে চলাচলরত এটাই সবচেয়ে বড় স্পিডবোট। এই স্পিডবোটের মালিকের নাম চান্দু মিয়া ও চালকের নাম শাহ আলম। মালিকের বাড়ি শিমুলিয়া মাওয়া এলাকায়। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা পুলিশের কাছে সুপারিশ করব।’