এনআইডির দায়িত্ব যাচ্ছে স্বরাষ্ট্রের হাতে

নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম আর নির্বাচন কমিশনের (ইসি) হাতে থাকছে না। এ-সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগকে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো এক চিঠিতে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০১০’ সংশোধন করে ‘নির্বাচন কমিশন’-এর স্থলে ‘সরকার’ শব্দ অন্তর্ভুক্ত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।

সোমবার চিঠিটি পাঠানো হয়। এর অনুলিপি নির্বাচন কমিশন সচিবকেও দেওয়া হয়েছে। তবে এ সিদ্ধান্তে ইসির কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। সংশ্নিষ্ট একাধিক সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
গতকাল বুধবার কমিশন সভা শেষে ইসি কার্যালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকারের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চিঠিটি তিনি পেয়েছেন। সভার আলোচ্য সূচিতে বিষয়টি না থাকায় আলোচনা হয়নি। চিঠি নিয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনাও হয়নি।

ইসি সচিবালয়ের অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নুরুজ্জামান আহমেদ জানিয়েছেন, ২০০৭ সাল থেকে ইসি সচিবালয় জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা দিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে পাঁচ হাজারের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী এ কাজে নিয়োজিত রয়েছেন।

তিনি বলেন, দায়িত্ব চলে যাওয়ার তথ্য জানতে পেরে কমিশনে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। সিইসি আশ্বস্ত করেছেন, এটা ইসির কাছেই থাকবে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে গত ১৭ মে পাঠানো চিঠিতে সুরক্ষা সেবা বিভাগ কর্তৃক জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিদ্যমান অবকাঠামো ও জনবল নির্বাচন কমিশন থেকে সুরক্ষা সেবা বিভাগে হস্তান্তরের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়।

চিঠিতে বলা হয়, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম নির্বাহী বিভাগের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় বিভিন্ন দেশের উদাহরণের আলোকে সুরক্ষা সেবা বিভাগ ওই দায়িত্ব পালনে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বিবেচিত বলে উল্লেখ করা হয়।

জানা গেছে, পাসপোর্ট ইস্যু, বিভিন্ন ব্যক্তির পরিচয় (বিশেষ করে অপরাধী যেমন- দুর্নীতিবাজ সন্ত্রাসী, জঙ্গি) উদ্ধারসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) তথ্যভান্ডার থেকে জনগণের তথ্য সংগ্রহ করার দরকার পড়ে। বিদ্যমান ব্যবস্থায় নির্বাচন কমিশনের এনআইডি উইং থেকে তারা এ তথ্য সংগ্রহ করে আসছিল। অন্যের তথ্যভান্ডার থেকে সহায়তা পেতে বেশি সময় ব্যয়সহ আরও কিছু বিষয়ে তাদের বেগ পেতে হচ্ছিল। এরই মধ্যে গত বছর করোনার নমুনা পরীক্ষার জালিয়াতির ঘটনায় ডা. সাবরিনা আরিফ গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার দুটি পরিচয়পত্র এনআইডি সার্ভারে পাওয়ার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি আরও জোরালো হয়। পরে এনআইডির নিয়ন্ত্রণ চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত বছর জুলাইয়ের শেষ দিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রস্তাব পাঠায়। ৬ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এ বিষয়ে মতামত চেয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে চিঠি দেয়।

চিঠি পেয়ে একটি কমিটি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সেই কমিটি পরিচয় নিবন্ধনের কাজটি মন্ত্রিপরিষদের নিয়ন্ত্রণাধীন সিভিল রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকসকে (সিআরভিএস) দেওয়ার সুপারিশ করে। কমিটি মত দেয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে থেকে সব মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে। নাগরিকের ঠিকানা, জন্ম, মৃত্যুসহ অন্য তথ্যাদির বিষয়ে সিআরভিএস কার্যক্রম পরিচালনা করে। জাতীয় পরিচয়পত্রও এক ধরনের সিভিল রেজিস্ট্রেশন। সুতরাং জাতীয় পরিচয়পত্রসহ অন্যান্য সিভিল রেজিস্ট্রেশনের সব কার্যক্রম নির্বাহী কর্মকা হিসেবে বিদ্যমান আইন, নীতি ও বিধি সংশোধনক্রমে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অধীনে একটি কর্তৃপক্ষের আওতায় ন্যস্ত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বলা হয়, ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন তথ্যভান্ডার নাগরিকদের পরিচয়পত্র প্রস্তুতসহ ১২৭টি চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানসহ অনেক প্রতিষ্ঠানকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহায়তা প্রদান করছে। এখন পর্যন্ত জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে ২২ ধরনের সেবা দেওয়া হয়, যার বেশিরভাগই নির্বাহী ধরনের। ভবিষ্যতে এর কর্মপরিধি আরও বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। এনআইডি নিবন্ধন কার্যক্রম আরও নিরাপদ ও জনবান্ধব করার জন্য উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের বিবেচনার প্রয়োজন রয়েছে।’ তবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সুপারিশ আমলে না নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেই এনআইডি কার্যক্রম পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের পক্ষে মত দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।

বিদ্যমান জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইনে নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার ক্ষমতা ইসির হাতে। এ ছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা তথ্য-উপাত্ত সংশোধন, সংযোজন ও বিয়োজনের কাজও ইসির অধীনস্থ জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা করে আসছেন।

পরিচয় নিবন্ধনের কাজ স্বরাষ্ট্রের হাতে গেলেও ‘ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯’ অনুসারে নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্ত বা মৃতদের নাম বাদ দেওয়ার এখতিয়ার ইসির হাতেই থাকবে। যদিও নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্তি ও জাতীয় পরিচয়-সংক্রান্ত সেবা একই সার্ভার থেকে দিয়ে আসছে ইসি।

এদিকে নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ও ইতোমধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্রের নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা তাদের দায়িত্বে পেতে চেয়েছে।

Share