নিজস্ব জেলা প্রতিবেদক : ‘করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তুলুন। বহিরাগত প্রবেশ নিষেধ।’ এসব কথা বাংলার পাশাপাশি ইংরেজিতে লেখা রয়েছে- ‘স্টে হোম, স্টে সেইফ- লকডাউন।’ একটি পাড়ায় প্রবেশের মূল গেইট বন্ধ করে তাতে বড় বড় ফেস্টুনে লাল কালিতে লিখে রাখা হয়েছে এমন সতর্কবার্তা।
সিলেটের বিভিন্ন জায়গায় যখন সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ মানুষকে ঘরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে; তখন নগরীর এই পাড়ার মানুষ স্বেচ্ছায় ‘লকডাউনে’ গেছেন।
নগরীর আম্বরখানার মণিপুরি পাড়ার প্রায় তিনশ বাসিন্দা প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে সেখানে বহিরাগত প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন।
একইভাবে পাড়ার লোকজনের বাইরে বের হওয়ায় ক্ষেত্রেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাসহ জরুরি প্রয়োজনে কেউ পাড়ার বাইরে যেতে পারেন। তবে ফিরেই রাস্তায় রাখা পানি ও সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করে নিতে হয়।
গত মাসের শেষদিক থেকে পাড়ায় নিয়মিত জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সতর্কতামূলক বিষয়গুলো সবাই যাতে মেনে চলে এজন্য মণিপুরি পাড়ার কিশোর-যুবকরা নিয়মিত স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে টহল দিচ্ছে।
এই পাড়ার বাসিন্দা প্রদীপ সিংহ বলেন, গত ২৬ মার্চ থেকে সরকার দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। এর আগে থেকেই পাড়ার যুবকরা সতর্কতামূলক উদ্যোগ নেয়। মুরব্বীদের সঙ্গে আলোচনা করে পাড়ায় প্রবেশ ও বাইরে যাওয়া সীমিত করা হয়েছে।
এই পাড়ায় মণিপুরি ৩০-৩৫টি পরিবারের পাশাপাশি সবমিলে ৫০-৬০ পরিবার বসবাস করে; যাদের সবাইকে এই নিয়ম মেনে চলতে হয়। এসব নিয়ম মানতে কিছু মানুষের অনীহা থাকলেও স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য তারাও মানতে বাধ্য হচ্ছেন।
এখানে মণিপুরিদের ধর্মীয় মন্দিরে পূজা-অর্চণায়ও সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। সাধারণত সন্ধ্যায় আরতির সময় মণিপুরি সম্প্রদায়ের লোকজন সমবেত হলেও বর্তমানে শুধু ‘ঠাকুর’ (যিনি মন্দির পূজা দেন) ধর্মীয় নিয়মগুলো পালন করেন।
আম্বরখানা মণিপুরি পাড়া সোশাল ফেয়ার এসোসিয়েশনের উদ্যোগে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে পাড়া ‘লকডাউনের’ উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানান লাঙ্গলজাম দীপঙ্কর।
নগরীর মদন মোহন কলেজের শিক্ষার্থী লাঙ্গলজাম দীপঙ্কর বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধের একমাত্র উপায় ঘরে থাকা। এজন্য শুরু থেকেই পাড়ার সবাইকে এই বিষয়টি আমরা বোঝানোর চেষ্টা করেছি। অধিকাংশ তা মানলেও প্রথমে কয়েকজন মানতে চাইনি। তাদেরও আমরা বুঝিয়েছি।
সিলেট মহানগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. জেদান আল মুসা বলেন, আম্বরখানা মণিপুরি পাড়ার এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। এজন্য তাদের সাধুবাদ জানাই। নগরীর প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় যদি সবাই স্বেচ্ছায় এমন উদ্যোগ নেন; তাহলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ সহজ হবে। এজন্য সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।