নিজস্ব ডেস্ক প্রতিবেদক : বিশ্বজুড়ে করোনা শনাক্ত ৩০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে আজ মঙ্গলবার সবচেয়ে দুর্দশাগ্রস্ত ফ্রান্স ও স্পেন প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের বিস্তার ঠেকিয়ে লকডাউন থেকে তাদের বের হওয়ার কৌশলগুলো বিশদভাবে প্রকাশ করেছে।
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে জানানো হয়, শাটডাউন থেকে বিভিন্ন দেশ যখন বের হয়ে আসার পথ খুঁজছে, তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছেন। তিনি বলেছেন, চীন এই মহামারির বিস্তার রুখতে উৎসস্থলেই ভাসরাসটিকে থামিয়ে দিতে পারত। যুক্তরাষ্ট্র চীনের কাছে ক্ষতিপূরণ চাইবে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
করোনাভাইরাসে সৃষ্ট কোভিড-১৯ সংক্রমণের শিকার হয়ে বিশ্বের ২ লাখ ৯ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে, যার এক চতুর্থাংশ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।
ডিসেম্বরে চীনের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসটি সম্পর্কে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা চীন নিয়ে খুশি নই … আমরা বিশ্বাস করি, এটি উৎস থেকেই বন্ধ করা যেত। এটি দ্রুত থামানো যেত এবং এটি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ত না।’
এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩০ লাখের চিত্রটি সম্ভবত সংক্রমণের প্রকৃত সংখ্যার একটি অংশকেই প্রতিফলিত করে, কারণ অনেক দেশ কেবলমাত্র সবচেয়ে গুরুতর ক্ষেত্রেই পরীক্ষা করছে।
জার্মান একটি পত্রিকার সম্পাদকীয়তে চীনের কাছে ভাইরাসের কারণে জার্মানির ১৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দাবির বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। বিষয়টি ট্রাম্পকে জানালে তিনি বলেন, ‘চীনকে দায়ী করতে যুক্তরাষ্ট্র নিজস্ব কর্মপন্থা নেবে। জার্মানি যে অংকের অর্থ দাবি করেছে, আমরা তার চেয়ে বেশি অর্থের কথা আলোচনা করছি। আমরা এখনো চূড়ান্ত অঙ্ক নির্ধারণ করতে পারিনি।’
যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অংশে লকডাউন অবস্থা শিথিল হতে শুরু করেছে। অবশ্য এ নিয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সমালোচনা করছেন। তবে কিছু মানুষ এতে খুশি।
করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সাত সপ্তাহ আগে লকডাউন ঘোষণা করেছিল ইউরোপের দেশ ইতালি। এখন সংক্রমণ ও মৃত্যু কমে আসায় বহাল থাকা কঠোর লকডাউন শিথিল করতে যাচ্ছে দেশটির সরকার। সোমবার লকডাউন শিথিল করার বিষয়ে ইতালির প্রধানমন্ত্রী তাঁর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জুসেপ্পে কোন্তে বলেন, ৪ মে থেকে কড়াকড়ি শিথিল করা হবে। সীমিত পরিসরে লোকজনকে তাদের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হবে। চীনের বাইরে ইউরোপ করোনা মহামারির উপকেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। ইউরোপে করোনা মহামারি প্রথম প্রকট হয়ে ওঠে ইতালিতে।
ইউরোপের অপর দেশ স্পেনও কড়াকড়ি শিথিল করতে শুরু করেছে। স্পেনে রোববার থেকে শিশু-কিশোরদের ঘরের বাইরে বের হওয়ার অনুমতি দিয়েছে। এই দেশটিতেও সংক্রমণ ও মৃত্যু কমছে। আজ মঙ্গলবার লকডাউন শিথিল করার ব্যাপারে আরও বিস্তারিত জানাবে স্পেন।
ফ্রান্সের নাগরিকরাও তাঁদের বন্দীজীবন থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করছেন। ১১ মে থেকে লকডাউন শিথিল করে দেবে দেশটি।
সুইজারল্যান্ড তিন ধাপে লকডাউন শিথিল করছে। প্রথম ধাপে চিকিৎসা পেশাজীবীসহ জরুরি খাতের কর্মীরা কাজে ফিরেছেন।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, করেনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সর্বাধিক ঝুঁকির মুহূর্তে এখন যুক্তরাজ্য। তিনি জনগণকে লকডাউন নিয়ে অধৈর্য না হওয়ার আহবান জানিয়েছেন।
সোমবার কোভিড–১৯ থেকে সুস্থ হওয়ার পর প্রথমবারের মতো সরকারি বাসভবন ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের বাইরে জনগণের উদ্দেশে বক্তব্য দেন বরিস জনসন। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন এই রোগের জোয়ারের সময় রয়েছি।’
করোনায় সংক্রমিত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বরিস জনসন। শ্বাসকষ্ট হওয়ায় বেশ কয়েকদিন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) থাকতে হয় তাঁকে। কিছুদিন আগে হাসপাতাল ছেড়ে বাসায় যান তিনি। রোববার রাতে সরকারি বাসভবনে ফেরেন। গতকাল সোমবার যোগ দেন দায়িত্বে। সেখানে জনগণের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বরিস বলেন, খুব শিগগিরই লকডাউন শিথিল করা হবে না। আগামী দিনগুলোতে যেকোনও পরিবর্তন সম্পর্কে বিশদ জানানো হবে। তবে স্থগিত করে রাখা জাতীয় স্বাস্থ্য সেবার (এনএইচএস) কিছু সেবা পুনরায় চালু হচ্ছে। যেমন ক্যানসারের সেবা।
বরিসের পরিস্থিতির সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থানে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন। গতকালই তিনি বলেছেন, তাঁর দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে, কিন্তু শনাক্ত হয়নি— এমন একটি ঘটনাও নেই। নিউজিল্যান্ড এই করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে জয়ী হয়েছে। মধ্যরাত থেকেই দেশব্যাপী চালু থাকা লকডাউন কিছু ক্ষেত্রে শিথিল করা হবে।
অস্ট্রেলিয়ায় সংক্রমণের হার গত ১৫ দিনে অনেক কমেছে। দেশটিতে নতুন করে শনাক্ত হওয়া কমেছে। ফলে দেশটির কয়েকটি রাজ্য কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করতে যাচ্ছে। কুইন্সল্যান্ড ও ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া রাজ্য এই সপ্তাহে তাদের কিছু নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে যাচ্ছে। কিন্তু অন্য রাজ্যগুলো এ রকম কিছু এখনো ঘোষণা দেয়নি। তবে নিউসাউথ ওয়েলস রাজ্যের ওয়েবার্ভালি কাউন্সিল তাদের বিখ্যাত বন্ডাই সমুদ্রসৈকতসহ অন্য সৈকতগুলো আবার খুলে দিচ্ছে।
হার্ভার্ডের গবেষকরা এবং স্বাস্থ্য বার্তা সংস্থা স্ট্যাটের এক বিশ্লেষণ অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রে লকডা্উন শিথিল বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য পর্যাপ্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। তবে গতকাল সোমবার ট্রাম্প বলেছেন, পরীক্ষা আরও বাড়ানো হচ্ছে। শিগগিরই স্কুলসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে।
গত সপ্তাহ থেকে জার্মানিতে লকডাউন শিথিল করা হলেও কিছু ক্ষেত্রে কড়াকাড়ি করায় অনেকে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। সোমবার থেকে গণপরিবহন এবং জার্মানির বেশিরভাগ দোকানে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বার্লিন ট্রেনের একজন যাত্রী এমিল বলেন, ‘এটি উষ্ণ, পিচ্ছিল, আপনি ভাল করে শ্বাস নিতে পারবেন না, তবে এটি যদি সংক্রমণ এড়ানোর জন্য হয়, তবে আমি এটি ব্যবহার করব।’