নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : অনিয়ম ও দুর্নীতি সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের জেরে গত ১৫ মার্চ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হবিগঞ্জে কর্মরত দুই সাংবাদিকসহ সাতজনের বিরুদ্ধে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার (বর্তমানে বানিয়াচং) মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলম। পরে ওই মামলা থেকে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ার ঘটনায় পাঁচজনের নাম বাদ দেওয়া হয়। তবে এখনও গ্রেপ্তারের শঙ্কায় আছেন এজাহারভুক্ত ওই দুই সাংবাদিক। হাইকোর্টের আগাম জামিনের জন্য চেষ্টাও করেছেন তারা। কিন্তু বিদ্যমান ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চে আগাম জামিন চেয়ে আবেদনের কোনো সুযোগ রাখা হয়নি।
জানতে চাইলে অভিযুক্ত বেসরকারি টেলিভিশনের ওই সাংবাদিক বলেন, অনিয়ম ও দুর্নীতি সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের জেরে মামলাটি হয়েছে। যে পাঁচজন গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছেন, তাদেরও আসামি করা হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ প্রাথমিক তদন্তের পর ওই পাঁচজনকে মামলা থেকে বাদ দিয়েছে। এখন আমরা দুই সাংবাদিক গ্রেপ্তারের শঙ্কায় আছি। কারণ বাদী একজন সরকারি কর্মকর্তা।
করোনাকালে ওই দুই সাংবাদিক নন, সারাদেশে ফৌজদারি এবং নারী ও শিশু নির্যাতনসহ অসংখ্য মামলায় হাজারও আগাম জামিন প্রত্যাশীদের এমন বিড়ম্বনা দেখা দিয়েছে।
অনেকে গ্রেপ্তার এড়াতে দিনযাপন করছেন ঘরের বাইরেও। পুলিশের হয়রানির শিকারও হচ্ছেন অনেকে। এমন পরিস্থিতিতে ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চে আগাম জামিনের সুযোগ নিশ্চিত করা অথবা সীমিত পরিসরে হাইকোর্টে নিয়মিত বেঞ্চ চালুর মাধ্যমে আগাম জামিনের ব্যবস্থা রাখার দাবি জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ‘ভার্চুয়াল আদালতে আগাম জামিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থাপনা না থাকায় বিচারপ্রার্থী জনগণ নানাভাবে হয়রানি হচ্ছেন। তারা আইনগত অধিকার থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। এমনকি পুলিশ এই করোনা পরিস্থিতিতেও অনেক আসামিকে হয়রানি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।’ তাই অবিলম্বে বিচারপ্রার্থীর স্বার্থে হাইকোর্টে আগাম জামিনের সুযোগ চালু করার দাবিও জানিয়েছেন তিনি।
বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘আইনত বিচারপ্রার্থীর সব সুযোগ খোলা রাখতে হবে, সেটা যে পরিস্থিতিতেই হোক। এটি তার সাংবিধানিক অধিকার। ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চেও সেটা হতে পারে। প্রথমদিকে কিছু সমস্যা হলেও সমস্যা চিহ্নিত হলে তার সমাধানও আসবে।’ সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ সমকালকে বলেন, ‘আগাম জামিন ব্যবস্থা চালু করা উচিত। এতে কোনো সমস্যা দেখি না। অধস্তন আদালতে যেভাবে আসামিদের আত্মসমর্পণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে, ঠিক একইভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগাম জামিন সংক্রান্ত আবেদন শুনানির ব্যবস্থাও চালু করা যেতে পারে।’
করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে গত ২৬ মার্চ থেকে সরকার টানা সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর দেশের সব আদালতও বন্ধ হয়ে যায়। পরে বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে জরুরি বিষয় শুনানিতে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে আদালতের কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ নেয় সরকার। পরে ভার্চুয়াল কোর্ট চালু করতে গত ৯ মে ‘আদালতে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ ২০২০’ জারি করেন রাষ্ট্রপতি। এরপর ১০ মে ভার্চুয়াল কোর্ট সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। এর আওতায় ১১ মে থেকে গত ২ জুলাই পর্যন্ত সারা দেশে অধস্তন ভার্চুয়াল আদালতে ৯৫ হাজার ৫২৩টি জামিন আদালতের শুনানি নিয়ে ৪৯ হাজার ৭৬২ জনকে জামিন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া একই সময়ে শিশু আদালত থেকে জামিন পেয়েছে ৬০৮ শিশু।
এর মধ্যে উচ্চ আদালতে বর্তমানে ১১টি ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চে মামলা পরিচালনা হচ্ছে। এসব আদালতে বেঞ্চের এখতিয়ার অনুযায়ী অতি জরুরি সব ধরনের ফৌজদারি মোশন ও এ সংক্রান্ত জামিন আবেদন এবং ভ্যাট সংক্রান্ত অতি জরুরি বিষয়, কাস্টমস ও ইনকাম ট্যাক্স সংক্রান্ত রিট মোশন গ্রহণ করা হচ্ছে। তবে ভ্যাট, কাস্টমস, ইনকাম ট্যাক্স, অর্থঋণ আদালত, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মামলার শুনানি হচ্ছে না। এ ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলা, অর্থ পাচার, আগাম জামিনসহ বিভিন্ন ধরনের আবেদন গ্রহণ করা হয় না। তবে ব্যাংক কোম্পানি আইন ও সালিশ আইন, আদিম অধিক্ষেত্রাধীন অতি জরুরি বিষয়, সাকশেসন আইন, বিবাহবিচ্ছেদ আইনের মাকদ্দমা, প্রাইজ কোর্ট বিষয়সহ অ্যাডমিরালিটি কোর্ট আইন, কয়েকটি আইনের অধীনে আবেদনপত্র গ্রহণ করা হচ্ছে। তবে তার পূর্ণাঙ্গ শুনানি আপাতত গ্রহণ করা হচ্ছে না।