নিজস্ব ডেস্ক প্রতিবেদক : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকবিলায় যে দেশগুলো সবচেয়ে ভালো অবস্থানে ছিল, সেই দেশগুলোর অন্যতম সিঙ্গাপুর। এই সংক্রমণ মোকাবিলায় কঠোরতর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দেশটির প্রশংসা করেছিল। এ ছাড়া সিঙ্গাপুরকে রোলমডেল হিসেবে উপস্থাপন করেছিল। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে সিঙ্গাপুরের সেই সাফল্য ম্লান হয়ে গেছে। ৭৫ লাখ জনসংখ্যার দেশটিতে এখন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ১৯ হাজার। এ ছাড়া দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার যে দেশগুলোয় সংক্রমণ কম ছিল, সেগুলোতেও সংক্রমণ বেড়েছে।
চীন থেকে প্রথম যে দেশগুলোয় করোনার সংক্রমণ ছড়িয়েছিল, সেগুলো মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন। এপ্রিলের শুরুর দিকে সিঙ্গাপুরে করোনা রোগী ছিল ছয় শর বেশি। এ ছাড়া ইউরোপের তুলনায় মালয়েশিয়া ও ফিলিপাইনেও রোগীর সংখ্যা ছিল একেবারে নগণ্য। কিন্তু এপ্রিলের শেষ দিকে এই দেশগুলোয় রোগী ব্যাপক হারে বেড়েছে। করোনা মহামারির সার্বক্ষণিক তথ্য প্রকাশকারী ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারস ডট ইনফোর তথ্য অনুসারে, গতকাল পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে মারা গেছেন ১৮ জন। সুস্থ হয়েছেন প্রায় ১ হাজার ৪০০ জন।
সিঙ্গাপুরের এই সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি অভিবাসী শ্রমিকদের মধ্যে। সেখানকার স্থানীয় গণমাধ্যম ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, অভিবাসী শ্রমিকেরা যেসব ডরমেটরিতে থাকেন, সেখানে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নেই। এ ছাড়া গাদাগাদি করে থাকতে হয়ে তাঁদের। এই ডরমেটরিতে সব কক্ষের ধারণক্ষমতা প্রায় তিন লাখ লোকের। কিন্তু সেখানে শ্রমিক থাকেন প্রায় ১০ লাখ। বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, অভিবাসী শ্রমিকেরা যেসব এলাকায় থাকেন, সেসব এলাকা নিকটতম সময়ে সংক্রমণ আরও বাড়বে।
ভিয়েতমানে এখনো মৃত্যু শূন্য
মালয়েশিয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে
রোগী কম থাইল্যান্ডেও
বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, সিঙ্গাপুরে সংক্রমণ বাড়তে থাকায় জনসাধারণের চলাচলের ওপর যে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে, তার মেয়াদ আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে দেশটির জাতীয় উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রী লরেন্স অং বলেন, এখনো নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সময় আসেনি।
সিঙ্গাপুরে একটি ব্যবসায়িক সম্মেলন থেকে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়েছিল মালয়েশিয়ায়। এরপরও পরিস্থিতি মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু পরে একটি মসজিদে তাবলিগ জামায়াতের মাধ্যমে করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকে মালয়েশিয়ায়। পরে বিভিন্ন কঠোর পদক্ষেপের মাধ্যমে দেশটিতে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তারপরও দেশটিতে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ৬ হাজার ছাড়িয়েছে। মারা গেছেন ১০০–এর বেশি। আর সুস্থ হয়েছেন প্রায় সাড়ে চার হাজার। ফলে সেখানকার বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার বিষয়টিতে এখনো গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
ইন্দোনেশিয়ায় রোগী রয়েছেন প্রায় সাড়ে ১১ হাজার। এই দেশে অন্যান্য দেশের তুলনায় মৃত্যুর হার বেশি। দেশটিতে এ পর্যন্ত মারা গেছেন সাড়ে ৮০০ জনের বেশি। সুস্থতার হারও কম দেশটিতে। দেশটিতে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন প্রায় ২ হাজার রোগী।
চীনের বাইরে গত ফেব্রুয়ারিতে প্রথম করোনা রোগী মারা গিয়েছিল ফিলিপাইনে। এরপর কঠোর পদক্ষেপ নেয় সরকার। দেশটিতে সংক্রমণ প্রথম দিকে নিয়ন্ত্রণে থাকলেও পরে বেড়ে যায়। দেশটিতে বর্তমানে রোগীর সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। মারা গেছেন ছয় শর বেশি। ফিলিপাইনে সম্প্রতি সংক্রমণ বাড়ছে।
প্রথম দিকে সংক্রমিত দেশের তালিকায় থাইল্যান্ডও ছিল। তবে দেশটিতে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা খুবই কম। দেশটিতে এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার। তবে অধিকাংশ রোগী সুস্থ হয়েছেন। মারা গেছেন ৫০ জনের বেশি।
করোনা মোকাবিলায় এ অঞ্চলের সফল দেশ ভিয়েতনাম। দেশটিতে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপে ফলে এখন পর্যন্ত কেউ মারা যাননি। দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ২৭১। এ ছাড়া কম্বোডিয়ায় রোগী রয়েছেন ১২২ জন। এর মধ্যে ১২০ সুস্থ হয়েছেন। মারা যাননি কেউ। লাওসে রোগী রয়েছেন ১৯ জন। সুস্থ হয়েছেন ৯ জন।