নিজস্ব ডেস্ক প্রতিবেদক : ফিলিপাইনের নাগরিক মার্তা (ছদ্মনাম)। ২৯ বছর বয়সে ২০১১ সালে তিনি একমাত্র ছোট্ট মেয়ে ও অসুস্থ বাবাকে দেশে রেখে কাজের জন্য যান হংকংয়ে। তিনি জানতেন, হংকংয়ে বিদেশি গৃহকর্মীরা ভালো বেতন পান। রিক্রুটিং এজেন্সি তাঁকে বাসার হেলপারের কাজের কথা বলে হংকংয়ে পাঠায়। ঘরবাড়ি গোছানো, রান্না করা ও সংসার সামলানোই হেলপারের কাজের মধ্যে পড়ে। তবে আইনগতভাবে নিয়োগকর্তার বাড়িতেই থাকতে তিনি বাধ্য হন। খবর সিএনএনের।
কাজ নেওয়ার পর মার্তার ওপর শুরু হয় অত্যধিক শারীরিক ও মানসিক নিপীড়ন। ছয় মাস সব নির্যাতন সহ্য করার পর অন্যত্র পালিয়ে যান তিনি। মার্তার বয়স এখন ৩৭। তিনি বলেন, ‘তাঁর (নিয়োগকর্তা) জন্য আমার পুরো দেহটাই মরে গেছে। তিনি আমার পুরো জীবন বরবাদ করে দিয়েছেন।’
হংকংয়ে মার্তার মতো ঘটনা বিরল নয়। দেশটিতে এই রকম ঘটনা অহরহ ঘটে। চীনের আধা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হংকংয়ে ৩ লাখ ৯০ হাজারের বেশি গৃহকর্মী কাজ করেন, যাঁদের বেশির ভাগ ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক। শহরটির মোট শ্রমশক্তির প্রায় ১০ শতাংশ তাঁরা। শহরটির অর্থনীতি ও জীবনব্যবস্থার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হলেও তাঁরা সেখানকার সবচেয়ে অরক্ষিত ও নিপীড়িত গোষ্ঠীর একটি।
অধিকার সংগঠন মিশন ফর মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কার্স (এমএফএমডব্লিউ) গত বছর ৫ হাজার ২৩ জন গৃহকর্মীর ওপর সমীক্ষা চালায়। এতে গৃহকর্মীদের ১৫ শতাংশ বলেছেন, কাজ করার জন্য তাঁরা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আর ২ শতাংশের মতো উত্তরদাতা বলেছেন, তাঁরা যৌন হয়রানি বা নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। কর্ম ও থাকার খারাপ পরিবেশ যেন তাঁদের সাধারণ অভিযোগ।
প্রায় চার লাখ গৃহকর্মী রয়েছেন হংকংয়ে।তাঁদের সবাইকে কর্তার বাড়িতে থাকতে বাধ্য করা হয়।মার্তা বলেন, প্রথম মালিকের বাড়ি থেকে পালিয়ে আসার পর তাঁকে গৃহহীন ও কর্মহীন অবস্থায় থাকতে হয়েছে অনেক দিন। তাঁকে গির্জার মেঝেতে ঘুমাতে হয়েছে নতুন কাজ না পাওয়া পর্যন্ত। লিভ ইন রুল আইন পরিবর্তনের জন্য তিনি সোচ্চার। তিনি বিষয়টি আদালতেও তুলেছিলেন।
হংকং বিশ্ববাণিজ্যের কেন্দ্র। হংকংয়ের ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নতি হতে থাকলে সত্তরের দশকে শহরটিতে আসতে শুরু করেন বিদেশি কর্মীরা। স্থানীয় নারীরা অফিস–আদালতে কাজ করায় গৃহস্থালির কাজের জন্য বিদেশি গৃহকর্মীদের চাহিদা বেড়ে যায়। গৃহকর্মীর থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা নিয়োগকর্তাই করবেন বলে আইনে উল্লেখ রয়েছে।
কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই গৃহকর্মীরা ভালো বাসস্থান পান না। তাঁদের শৌচাগার ও মেঝেতে ঘুমাতে হয়। যদি গৃহকর্মীরা নিয়োগকর্তার বাসায় থাকতে না চান, তাহলে তাঁদের হংকংয়ে কাজ করার অনুমতি বাতিল হওয়ার ঝুঁকি থাকে। লিভ ইন রুল আইনের কারণে বিদেশি গৃহকর্মী নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন অভিযোগ করে মার্তা আদালতে যে আবেদন করেছিলেন, ২০১৮ সালে বিচারক তা খারিজ করে দেন। তবে মানবাধিকার কর্মীরা বলেছেন, এই আইনের অবসান হলে গৃহকর্মীদের নিপীড়ন অনেকটা কমে যাবে।