নয়াবার্তা প্রতিবেদক : জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের রাজস্ব কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম এবং তার স্ত্রীর প্রায় কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
যেখানে নজরুলের সম্পদের মধ্যে রয়েছে নিজ নামে যশোরে ১১৭.২৫ শতাংশ জমি, তার স্ত্রী সানজিদা আক্তারে নামে ঢাকায় দুটি ফ্ল্যাট, যশোরে একটি একতলা বাড়ি, একটি দোকান ও ৪৭.৫ শতক জমি। স্ত্রী গৃহিণী হলেও অঢেল সম্পদ তার।
সংস্থাটির অনুসন্ধানে দালিলিকভাবে কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পাওয়ায় এরই মধ্যে মামলা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যদিও বাস্তব ওই অবৈধ সম্পদের মূল্য অনেক বেশি হবে। যে কোনো সময়ে তাদের বিরুদ্ধে দুদকের যশোর অফিস থেকে মামলা দায়ের করা হবে বলে জানা গেছে।
শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) মুহাম্মদ আরিফ সাদেক বলেন, গত ২১ সেপ্টেম্বর কমিশন থেকে একটি মামলা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। দুদকের যশোর অফিস থেকে মামলাটি দায়ের করা হবে।
এ বিষয় দুদক সূত্রে জানা যায়, রাজস্ব কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বর্তমানে চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের, কাপ্তাই সার্কেলে কর্মরত রয়েছেন। তিনি ১৯৯৪ সালে অফিস সহকারী কাম-মুদ্রাক্ষরিক পদে নিয়োগ পেয়ে কাস্টমস, এক্মসাইজ ও ভ্যাট, যশোর অফিসে যোগদান করেন। পরে তিনি ২০১২ সালে পরিদর্শক পদে চলতি দায়িত্ব লাভ করে বেনাপোলে কাস্টম হাউজে, খুলনা মোংলা কাস্টম হাউজ ও ঢাকা দপ্তরে কর্মরত ছিলেন। ২০১৭ সালের মার্চ মাসে রাজস্ব কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি পেয়ে রাজশাহী কাস্টমস, এক্মসাইজ ও ভ্যাট এবং সোনামসজিদ স্থল বন্দরে কর্মরত ছিলেন। নজরুল ইসলাম ১৯৯৮ সালে সানজিদা আক্তারের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। যিনি একজন গৃহিণী।
অবৈধ সম্পদের বিষয়ে জানা যায়, নজরুল ইসলাম ও সানজিদা আক্তারের বিরুদ্ধে দুদকের রাজশাহী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে সম্পদ বিবরণী নোটিশ জারি হয়। এরপর ২০২০ সালের ৬ ডিসেম্বরে তারা সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন।
সম্পদের বিবরণী যাচাই-বাছাই করে দেখা যায়, নজরুল ইসলামের নামে যশোর সদর ও অভয়নগর এলাকায় ১০টি দলিলের মাধ্যমে ১১৭.২৫ শতাংশ বাগান/ধানী জমি। যার দালিলিক মূল্য ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৯৯২ টাকা। এছাড়া ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট ১৪ লাখ ১১ হাজার ৯৯২ টাকার সম্পদ থাকার তথ্য দুদকের সম্পদ বিবরণ দাখিল করেন তিনি।
অন্যদিকে তার স্ত্রী সানজিদা আক্তারে নামে ঢাকায় দুটি ফ্ল্যাট, যশোরে একটি একতলা বাড়ি, একটি দোকান ও ৩টি দলিলমূলে যশোরে ক্রয়কৃত ৪৭.৫ শতক জমিসহ মোট ১ কোটি ৩২ লাখ ৪৩ হাজার ৫০০ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ১৪ লাখ ২৭ হাজার ৬৭৩ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট ১ কোটি ৪৬ লাখ ৭১ হাজার ১৭৩ টাকার সম্পদের বিবরণ দাখিল করেন।
অর্থাৎ তারা উভয়ে দুদকে ১ কোটি ৪১ লাখ ৮০ হাজার ৪৯২ টাকার স্থাবর সম্পদ ও ১৯ লাখ ২ হাজার ৬৭৩ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট ১ কোটি ৬০ লাখ ৮৩ হাজার ১৬৫ টাকার সম্পদ থাকার ঘোষণা দিয়েছেন।
কিন্তু দুদকের যাচাই-বাছাইয়ে তাদের নামে ১ কোটি ৪১ লাখ ৮০ হাজার ৪৯২ টাকার স্থাবর সম্পদ ও ৬১ লাখ ১৯ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট ২ কোটি ২ লাখ ৯৯ হাজার ৪৯৭ টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। সে হিসেবে ৪২ লাখ ১৬ হাজার ৩৩২ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করেছেন। দুদকের অনুসন্ধানে নজরুলের স্ত্রী সানজিদা আক্তার ৩৪ লাখ ৭১ হাজার ৩৯৮ টাকার ঋণের তথ্য পাওয়া যায়।
অনুসন্ধানে নজরুল ইসলামের মোট আয় পাওয়া যায় ৬১ লাখ ৪৮ হাজার ৬৬ টাকা। আর পারিবারিক ব্যয় পাওয়া যায় ৩৩ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। অপরদিকে তার স্ত্রী সানজিদা আক্তারের মোট আয় পাওয়া যায় ৬৫ লাখ ৬ হাজার ৬৯৯ টাকা। একই সময়ে তার পারিবারিক ব্যয় পাওয়া যায় ১৭ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। অর্থাৎ তাদের উভয়ের মোট বৈধ আয় পাওয়া যায় ১ কোটি ২৬ লাখ ৫৪ হাজার ৭৬৫ টাকা এবং মোট পারিবারিক ব্যয় পাওয়া যায় ৫১ লাখ ১০ হাজার টাকা।
সবমিলিয়ে তাদের নামে ২ কোটি ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ১৩৩ টাকার সম্পদ পাওয়া যায়। যার মধ্যে ১ কোটি ২৬ লাখ ৫৪ হাজার ৭৬৫ টাকার সম্পদের বৈধ উৎস পাওয়া গেছে। অর্থাৎ ৯২ লাখ ৮৩ হাজার ৩৬৮ টাকার সম্পদের বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি।
সে কারণে রাজস্ব কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী সানজিদা আক্তারের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পাওয়ায় দুদক আইন ২০০৪ ২৬(২) ও ২৭(১) ধারায় পৃথক দুই মামলা অনুমোদন দিয়েছে কমিশন। শিগগিরই দুদকের যশোর জেলা কার্যালয় থেকে মামলাটি দায়ের করা হবে বলে জানা গেছে।