খালেদা জিয়া দেখে আসার পরই আইভি রহমানকে মৃত ঘোষণা করা হয় : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মৃত্যু শয্যায় থাকা নারী নেত্রী আইভি রহমানকে খালেদা জিয়া সিএমএইচ-এ (ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল) দেখতে যাবেন বলে তার ছেলে-মেয়েদের ৩/৪ ঘণ্টা অন্য একটি রুমে আটকে রাখা হয়। খালেদা জিয়া আইভি রহমানকে দেখে আসার পরপরই তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

আইভি রহমানের ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী তাকে স্মরণ করে এ কথা বলেন।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হন আওয়ামী লীগের সাবেক মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা এবং প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী আইভি রহমান। তিন দিনের মাথায় ওই বছরের ২৪ আগস্ট ঢাকার সিএমএইচ-এ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছিল তার।

প্রধানমন্ত্রী সকালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় সভাপতিত্ব করেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রের পরিকল্পনা বিভাগে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় ভার্চুয়ালি অংশ নেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকের দিনে আমার আইভি চাচীর কথাই বেশি মনে হচ্ছে। আর একটা অবাক কাণ্ড আপনারা হয়তো জানেন না, তাকে যখন সিএমএইচ-এ নিয়ে যাওয়া হয় আমরা ঠিক জানি না কখন কোন মুহূর্তে তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। তার ছেলে-মেয়েরা তার কাছে ছিল। সে সময় তখনকার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া তাকে দেখতে যাবেন বলে তার (আইভি রহমানের) ছেলে-মেয়েরা যারা বেডের কাছে ছিল তাদের একটা কামরার মধ্যে নিয়ে তালা মেরে রাখা হয়। প্রায় ৩/৪ ঘণ্টা নাজমুল হাসান পাপন, বোন তানিয়া, ময়না এদের সবাইকে একটা রুমে তালা দিয়ে রেখে তারপর খালেদা জিয়া যান আইভি রহমানকে দেখতে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আর খালেদা জিয়া যখন দেখে ফিরে আসেন তার পরই তাকে (আইভি রহমান) মৃত ঘোষণা করা হয়। এ কথাটা অনেকেরই জানা নেই, আমি এটা জানিয়ে রাখলাম, যে কতবড় নৃশংসতা এরা করতে পারে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘শুধু হত্যার চেষ্টাই না, হত্যার পর লাশ নিয়েও তারা যে কাণ্ড করেছিল তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। মারা যাওয়ার পর অনেকের লাশ তারা দিতে চায়নি। লাশ আত্মীয়-স্বজনের কাছে তারা দেয়নি। পারলে লাশটা গুম করে ফেলতো, এই ছিল অবস্থা। ঢাকা মেডিকেল কলেজে দলের সমর্থক ও যারা জীবিত তারা যেহেতু সাহায্য করতে যায়, সারারাত তাদের চেষ্টার পর একে একে সেই লাশগুলো হস্তান্তর করা হয়।’

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহতদের দেশে-বিদেশে চিকৎসা প্রদানসহ তাদের সুবিধা-অসুবিধায় পাশে দাঁড়িয়েছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আহতদের আমি দেশে, ভারতে এবং অন্য দেশে পাঠিয়েও চিকিৎসা করিয়েছি। একে একে যাদের অনেকেই আজ ছেড়ে চলে গেছেন। অনেকেই পঙ্গু হয়ে দুর্বিসহ জীবন যাপন করছেন।’

সরকার প্রধান বলেন, ‘আহতদের আমরা বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট থেকে সহায়তা দিয়েছি এবং সে সময় একটা আলাদা অ্যাকাউন্ট খুলে যে ফান্ড এসেছে তা থেকে চিকিৎসাধীন প্রত্যেককে আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছি। এখনও আমরা তা দিয়ে যাচ্ছি। বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের পক্ষ থেকে আহত যাদের চিকিৎসার প্রয়োজন তাদের সহায়তা দিচ্ছি। মাসোহারা দিচ্ছি, তাদের ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা, বিয়ে-শাদী যত রকমের সহযোগিতা দরকার আমি এখনও তা করে যাচ্ছি। যাদের খুব খারাপ অবস্থা ছিল আর্থিকভাবে তাদের সাহায্য এখনও অব্যাহত আছে।’

এ সময় প্রধানমন্ত্রী ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত আইভি রহমানসহ সবার জন্য দেশবাসীর দোয়া কামনা করেন। তিনি বলেন, ‘আমি আইভি চাচিসহ যারা মারা গেছেন তাদের সবার জন্য দোয়া চাই।’

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী শান্তি সমাবেশে এক ডজনেরও বেশি গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। এই হামলায় শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেলেও তার শ্রবণেন্দ্রিয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হামলায় দলের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ও নারী নেত্রী আইভি রহমানসহ দলের ২২ নেতা-কর্মী নিহত এবং অন্তত ৫০০ নেতা-কর্মী, পথচারী ও সাংবাদিক আহত হন।

Share