গীতিকবি মো. হাবিবুল্লাহ ও তাঁর সঙ্গীত জীবন

জাকির হোসেন আজাদী : বতর্মান সময়ের একজন আলোচিত গীতিকারের নাম মো. হাবিবুল্লাহ। তিনি অসাধারণ অনবদ্য নান্দনিক অনেক গুলো বাংলা গান রচনা করে আমাদের সঙ্গীত ভূবনকে করেছেন সমৃদ্ধ। খ‍্যাতিমান সব সুরকারগণ তাঁর রচিত গানে সুরারোপ করেছেন। হালের জনপ্রিয় সব কণ্ঠশিল্পীরা তাঁর গানে কণ্ঠ দিয়ে চলেছেন। তাঁর সঙ্গে এই বিষয়ে দীর্ঘ আলাপ হয়। সে সময় তিনি গান রচনা ও তাঁর সঙ্গীত জীবনের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, কৈশোরে বেতারে যখন গান শুনতাম। ঘোষণায় যখন গীতিকারের নাম বলা হতো যেমন ড.আবু হেনা মোস্তফা কামাল, ড. মনিরুজ্জামান আবদুল লতিফ, কুটি মুনসুর, গাজী মাযহারুল আনোয়ার, মো. রফিকুজ্জামান, নজরুল ইসলাম বাবু। তখন আমি ধীরে ধীরে গান লেখার প্রতি অনুপ্রাণিত হতে থাকি”।

তিল তিল করে গড়ে ওঠা উদীয়মান একজন সংস্কৃতিমনা বিশিষ্ট গীতিকবি ও লেখক মো. হাবিবুল্লাহ ১৯৬৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নেত্রকোনা জেলার অন্তর্গত সুসং দুর্গাপুর উপজেলার দেশওয়ালী পাড়ায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। সুসং দুর্গাপুর তখন প্রকৃতির নৈসর্গিক শোভায় সজ্জিত প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলা ভুমি, সবুজে ঘেরা গারো পাহাড়ের কোল ঘেঁষে ঝর্ণার স্বচ্ছ জলধারা সোমেশ্বরী নদীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে অবিরত।

সোমেশ্বরী নদীর স্বচ্ছ পানি আর ধু ধু বালুচর দর্শকদের মন কেড়ে নেয়। দুর্গাপুরের উত্তরে সমতল ভুমির পরেই ভারত সীমান্ত মেঘালয় রাজ্য। দুর থেকে দেখা যায় উঁচু পাহাড় আর পাহাড়। এমন প্রাকৃতিক পরিবেশে মণ্ডিত সুসং দুর্গাপুরে শৈশব কৈশোর জীবনে বেড়ে উঠেন।

তিনি সুসং দুর্গাপুরের পুরানো ঐতিহ্যবাহী মহারাজা কুমুদ চন্দ্র মেমোরিয়াল (এম.কে.সি.এম) উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি পাশ করেন। পরবর্তীতে সুসং ডিগ্রী কলেজে পড়াশুনা শেষ করেন। ছাত্র জীবনে তিনি ছিলেন সংস্কৃতিমনা, প্রকৃতি প্রেমিক। সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড গান, নাটক,আবৃত্তি সবসময় তাঁকে আবেগ তাড়িত করতো।

আশির দশকে তিনি গান লিখে বেতার টেলিভিশনে পাঠাতেন। সেগুলো প্রচার হয়েছিল কীনা তাঁর জানা নেই সেই কৈশোরে লেখা পান্ডুলিপিও সংরক্ষণে নেই। সংস্কৃতিমনকে দাবিয়ে রাখা যায়না। সৃষ্টিকর্তা মানুষের ভিতরে লালিত প্রত্যাশা ও স্বপ্ন অপূর্ণ রাখেন না।

বর্তমানে তিনি একধারে বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত নাট্যভিনেতা, গীতিকার । বাংলাদেশ টেলিভিশনের বিভিন্ন ম্যাগাজিন ও নাটকে বিভিন্ন চরিত্রে অংশগ্রহণ করেছেন। অসংখ্য কমিডিয়ান স্ক্রীপট রচনা করেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টে নিহত শহীদ শেখ রাসেলের স্মৃতি ছোটবেলা থেকেই তাঁকে আলোড়িত করে। সে থেকে তিনি শহীদ শেখ রাসেলের স্মৃতি ঘিরে শুভজন্মদিন উপলক্ষে কিছু গান রচনা করেন :

(১) কথা: হাজারো তারার মাঝে…ফুটেছিল সন্ধ্যার আকাশে…ভোর না হতেই হারিয়ে গেলে অজানায়। শিল্পী: রুমানা ইসলাম, সুর: নবীন কিশোর গৌতম।

(২) তারায় ঝলমলে আকাশ…হঠাৎ হলো মলিন…জোছনা ভরা চাঁদ তুমি….। কণ্ঠ দিয়েছেন: শিল্পী বিশ্বাস, সুর: সজিব দাস।

(৩) বছর ঘুরে…আসে ফিরে…অক্টোবরে জন্মদিন…শিশু রাসেলের শুভ জন্মদিন। কণ্ঠশিল্পী: শিল্পী বিশ্বাস, সুর: ফয়সাল আহমেদ। এ গানগুলো বাংলাদেশ টেলিভিশন, ইউটিউবসহ বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রচার হয়েছে।

বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি ঘিরে তিনি কয়েকটি থিম সং রচনা করেন। একটি থিম সং বিটিভি নিয়মিত পরিবেশনা করেছেঃ

(১) গানের কথা: জাতির পিতা…মহান নেতা…বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর…বিশ্বলোকে তোমারই নাম লইবো জীবনভর। শিল্পী: শিল্পী বিশ্বাস সুর: সাহাবুদ্দীন মজুমদার। এ গানটি পল্লীর শ্রোতাদের কাছে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

(২) বিশ্বসেরা মহান নেতা…বাঙ্গালি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান…ইতিহাসের মহানায়ক তুমি, সুর করেছেন উপমহাদের প্রখ্যাত সংগীত ব্যক্তিত্ব: শেখ সাদী খান কন্ঠ দিয়েছেন-প্রফেসর ইফ্‌ফাত আরা নার্গিস।

গত ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে একুশের স্মৃতি ঘিরে ভাষার ওপর একটি গান রচনা করেন। ‘পলাশের পাঁপড়িতে একুশের রক্তের দাগ, ম্লান হবেনা কোনদিন’ গানটি বাংলাদেশ টেলিভিশন, ইউটিউবসহ বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রচারে সারাদেশে ব্যাপক আলোচিত হয়েছে। কণ্ঠশিল্পী : শিল্পী বিশ্বাস, সুর : ফয়সাল আহমেদ।

এছাড়া তিনি দেশের গান লিখেছেন : হাজার তারার মাঝে… জ্বলছে একটি তারা, সে যেনো ডাকছে আমায়… বাংলা মায়ের নামটি ধরে, সুর করেছেন উপমহাদের প্রখ্যাত সংগীত ব্যক্তিত্ব: শেখ সাদী খান কন্ঠ দিয়েছেন কণ্ঠ দিয়েছেন, শিল্পী বিশ্বাস।

বিশেষ দিবসের গানের পাশাপাশি শতাধিক বাংলা আধুনিকসহ লোকজ গান রচনা করেছেন। যে গানগুলো বাংলাদেশ টেলিভিশনে ও কিছুগান বাংলাদেশ বেতারে প্রচার হয়েছে।

তাঁর লেখা গানসমূহে কন্ঠ দিয়েছেন সামিনা চৌধুরী, রুমানা ইসলাম, সুমন রাহাত, সেখ জসিম, চম্পা বণিক, হৈমন্তি রক্ষিত দাস, এনামুল হক টিংকু, খালেদ মুন্না, শাহনাজ রহমান স্বীকৃতি, মমতাজ রহমান লাবনী, রীনা আমিন, রুকসানা মুমতাজ,মরিয়ম মারিয়া, শাহিনা আক্তার পাপিয়া, বিন্দিয়া খান, ইউসুফ আহমেদ খান, ফায়রুজ ‍ইয়াসমীন বাঁধন, জান্নাতে রুম্মান তিথী, ফারাবী ইসলাম, শিখা সাউ, হিমাদ্রী বিশ্বাস, প্রিয়াংকা ভট্টাচার্য, আবদু্ল্লাহ খান, সুজন আরিফ, এইচ এম রাকিব, কমল আনোয়ারসহ আরোও অনেকে পরিবেশনা করেছেন।

গীতিকার মো: হাবিবুল্লাহ’র গানে যারা সুরারোপ করেছেন তারা হলেন, প্রবীণ খ্যাতিমান সংগীত পরিচালক শেখ সাদী খান, লোকমান হাকিম, মোঃ ইসহাক, শহীদুজ্জামান স্বপন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক খোকন, পার্থ মজুমদার, সেলিম রেজা, রিচার্ড কিশোর, ইফতেখার হোসেন সোহেল, মনির হোসেন, স.ম খাইরুল ইসলাম, ফয়সাল আহমেদ, এজাজ ফারাহ্‌, আরো অনেকে। তিনি দেশের একজন জনপ্রিয় বিশিষ্ট গীতিকার হিসেবে দেশে বিদেশে ভুঁয়শী প্রশংসাসহ অনেকগুলো গুণীজন সম্মাননা ক্রেস্ট অর্জন করেন।

তাঁর উল্লেখযোগ্য কিছু গানের কথা : সময়কে বলে দিও, সে যেনো চলে না যায়, কিছুটা সময় থাকে যেনো আমার অপেক্ষায়
*পুরানো সেই স্মৃতিটা, যদি আমায় ভুলিয়ে দিতে
*আমার এ চোখ কেন যে কাঁদে না অশ্রু ঝরে ঝরে
*জীবনের আকাশে কত মেঘ আসে, বৃষ্টি হয়ে ঝরে যায়
*পৃথিবীটাকে ভালবাসি বলে ভালোবেসে যাই,

নিজেকে লুকিয়ে …রেখে কি সুখ তুমি পাও
*দু’টি নয়নে কি আছে যদি দেখে নিতে/
*জীবন নয়তো পুতুল খেলা-ইচ্ছে হলো সাজিয়ে দেবে, ক্ষণিকপরে ভেঙ্গে দেবে, সাজানো মেলা,
*আমাকে খুঁজে নিও, চন্দ্রনিশির আলোতে, ভালবেসে সঁপে দিও আমার মনে তোমার মন
*আমি যদি শিল্পী হতাম, হৃদয়ে আঁকা তোমার ছবি, ক্যানভাসে এঁকে দিতাম
*জানি চাঁদটাকে ছুঁতে পারবো না, তাই স্বপ্নটাকে বড় করবো না
*তোমাকে খুব মনে পড়ে, যদিও থাকি অনেক দুরে, মন চায় ছুটে এসে, একটু বসি তোমার পাশে
*মনের ভিতরে আজ, বাঁশি বাজে ভৈরবী রাগে, আমাকে ভালবাস জানলে, মনকে উজার করে দিতাম তুমি চাওয়ার আগে,
*দেখতে চাইনা আর, কান্না ভেজা চোখের পাতা,
*ঘুমহীন সেই রাতে, নীরব ও নিশিতে, খুব মনে পড়ে, যদি থাকতে পাশে,
*এ মন এ আকাশ যদি, এক হয়ে যেতো, সাতটি রঙে বাধা রঙধনুর মত,
*ভালবাসা এমনি কিছু, লুকিয়ে রাখার মত নয়, রাখো যদি লুকিয়ে থাকে হারাবার ভয়,
*আকাশে যখন বিজলি চমকায়, অনেক বেদনায় মন ভরে যায়,
*পূর্ণিমার চাঁদ মেঘের আড়ালে ঢেকে যায়না, কিছু মন আছে কখনো এক হয়না,

Share