নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি : নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কার্যালয় কমপ্লেক্স থেকে ঘুষের ৪২ লাখ টাকা ভর্তি কার্টন উদ্ধারের ঘটনার পর নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এইচ এম সালাউদ্দীন মনজুকে ওএসডি করা হয়েছে। অন্যদিকে এ ঘুষের টাকা কার এ নিয়ে নগরীতে ব্যাপক আলোচনা চলছে। আলোচনায় উঠে আসছে নারায়ণগঞ্জের এক এমপি’র শ্যালকসহ রাঘব বোয়ালদের নাম।
গত ১০ জানুয়ারি রাত ১০টায় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সিদ্ধিরগঞ্জ রাজস্ব সার্কেলের আউটসোর্সিংয়ের সাবেক কর্মচারী মো. জাহিদুল ইসলাম সুমনকে ৪২ লাখ টাকাভর্তি একটি কার্টনসহ আটক করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মীরা। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ওই টাকা জব্দ করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ট্রেজারিতে জমা রাখা হয়। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক অফিস থেকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। জব্দ করা ৪২ লাখ টাকার সঙ্গে দুর্নীতির সম্পৃক্ততা আছে ধারণা করে গত ১৪ জানুয়ারি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) চিঠি দেন। পরে ১৬ জানুয়ারি দুদক তাদের জেলা কার্যালয়ে মানি লন্ডারিং, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে একটি মামলা করে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গত ১৭ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে ডিসি অফিসের সার্ভেয়ার মো. কাওসার আহমেদকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সর্বশেষ এডিসি (রাজস্ব) এইচ এম সালাউদ্দীন মনজুকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা অন সার্ভিস ডিউটি) করা হয়েছে। গত ২২ জানুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে ওএসডি করার (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা অন সার্ভিস ডিউটি) এ আদেশ জারি হয়।
ওএসডির আদেশে বলা হয়, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এইচ এম সালাউদ্দীন মনজুকে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে সংযুক্ত করা হয়েছে। ৩১তম বিসিএস ব্যাচের এই কর্মকর্তা গত ২০২২ সালের ৫ জুন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনে যোগদান করেন।
মামলার অপর আসামি সিদ্ধিরগঞ্জ রাজস্ব সার্কেলের সাবেক আউটসোর্সিং কর্মচারী জাহিদুল ইসলাম সুমন এখন পর্যন্ত পলাতক রয়েছে।
এডিসি (রাজস্ব) এইচ এম সালাউদ্দীন মনজুকে ওএসডি করার ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, ‘তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ওএসডি করা হয়েছে। সেই আদেশ পেয়েছি। তবে ৪২ লাখ টাকার বিষয়ে তাকে ওএসডি করা হয়েছে কিনা তা জানি না। বা কি কারণে তাকে ওএসডি করা হয়েছে তা বলতে পারছি না। মন্ত্রণালয় থেকে যে কোনো কর্মকর্তাকে যে কোনো সময় রদবদল করা হয়। এটা মন্ত্রণালয়ের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তাকে ওএসডি করা হয়ে থাকতে পারে। ৪২ লাখ টাকা উদ্ধারের ব্যাপারে দুদক মামলা করেছে। তারা ঘটনার তদন্ত করছে।’
অন্যদিকে জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, ঘুষের ৪২ লাখ টাকা উদ্ধারের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে রানা নামের এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও মামলায় তাকে আসামি করা হয়নি। বুধবার এ ঘটনার সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সহ-সভাপতি (জুনিয়র) এস এম রানাকে অভিযুক্ত করে তার ছবিসহ সংবাদ ছাপা হয় স্থানীয় একটি দৈনিকে।
এ ব্যাপারে এস এম রানার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, একটি কুচক্রী মহল আমার বিরুদ্ধে এই অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি এর সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নই। স্থানীয় পত্রিকার বিরুদ্ধে আমি আইনগত ব্যবস্থা নেবো। তিনি ঘটনার ব্যাপারে একটি বিস্তারিত বিবৃতি দেবেন বলেও জানান।
এস এম রানা নারায়ণগঞ্জের এক এমপি’র শ্যালকের ঘনিষ্ঠ লোক বলে পরিচিত।