নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : বিশ্বজুড়ে মহামারি আকার ধারণ করা করোনা ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স বা জীবন রহস্য নিয়ে কাজ করছে বিভিন্ন দেশ। করোনা মোকাবিলায় সঠিক ব্যবস্থাপনা ঠিক করতে ভাইরাসটির জিনোম সিকোয়েন্স জানা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কোন গবেষণাই নেই বাংলাদেশে। তবে আর্থিক ও যন্ত্রপাতির সক্ষমতা থাকলে এ ভাইরাসের জীবন রহস্য জানাতে পারতেন বলে দাবি চট্টগ্রামের গবেষকদের।
তারা বলছেন, করোনার জীবন রহস্য উন্মোচন করা গেলে ভাইরাসটির আচরণের ওপর নির্ভর করে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে বাঁচানো যাবে করোনায় আক্রান্তদের প্রাণ। সেইসঙ্গে ভাইরাসটির সংক্রমণ রোধও সম্ভব হবে।
জানা গেছে, চট্টগ্রামে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) এবং চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিভাসু) জিনম সিকোয়েন্স নিয়ে কাজ করার মত বিশেষজ্ঞ রয়েছে। তবে বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা সবচেয়ে বেশি সিভাসুর। প্রতিষ্ঠানটির একাধিক বিজ্ঞানী এর আগে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল এবং মাছের জীবন রহস্য উন্মোচন করে সফলতা দেখিয়েছেন।
চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি অ্যান্ড প্যারাসাইটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. জুনায়েদ সিদ্দিকী বলেন, জিনোম সিকোয়েন্স নিয়ে গবেষণা করার জন্য বড় অংকের অর্থের প্রয়োজন। একটা নমুনার সিকোয়েন্সিং করতে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকার মত খরচ পড়বে। যদি একশ নমুনার সিকোয়েন্সিং করতে হয় তাহলে খরচের পরিমাণ দাঁড়াবে ৫০ লাখ টাকার মত।
তিনি আরও বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রকৃতি ও চরিত্র কেমন তা এখনও অজানা। ভাইরাসের প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্যগুলো জানা না গেলে সঠিক চিকিৎসা ও প্রতিরোধমূলক কোন ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয়। এক একটি জায়গায় একেকভাবে আচরণ করছে ভাইরাসটি। বাংলাদেশে যে ভাইরাসটি এসেছে এটি কোন দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ তা জানা দরকার।
জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে প্রতিবন্ধকতা : এ কাজে বড় বাধা আর্থিক সংকট। এছাড়া সিকোয়েন্সিং করার জন্য যে কিট প্রয়োজন তারও অভাব রয়েছে। জিনোম সিকোয়েন্সিং করতে নমুনা সংগ্রহ করার পর ‘ডিএনএ’ বা ‘আরএনএ’ আলাদা করে এরপর সিকোয়েন্সিং করতে হয়। যা নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিং মেশিনের মাধ্যমে করা হয়ে থাকে। তবে চট্টগ্রামে কোন প্রতিষ্ঠানে সিকোয়েন্সিং মেশিন নেই।
জিনোম সিকোয়েন্স জানা গেলে মিলবে সুফল : জীবন রহস্য উন্মোচন হলে করোনার চিকিৎসায় বিশ্বব্যাপি যে টিকাগুলো আবিষ্কার হচ্ছে তা দেশের প্রেক্ষাপটে কতটুকু কার্যকর হবে, সেটি জানা যাবে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। এছাড়া বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের সঠিক উৎস কোন দেশ তা জানা সম্ভব হবে। পূর্ণাঙ্গ তথ্য পেলে চিকিৎসা ব্যবস্থাসহ সংকট মোকাবিলায় সরকার প্রয়োজনীয় নীতি নির্ধারণ করতে পারবে।
দেশের বাহিরে জিনতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আদনান মান্নান বলেন, জিনোম সিকোয়েন্সিং এর কাজ ব্যয়বহুল হলেও এ কাজ করার মত সামর্থ্য রয়েছে চট্টগ্রামে। এ ধরনের গবেষণার বড় বিষয় হলো ডাটা পর্যালোচনা করার সক্ষমতা। আর তা করার মত বিশেষজ্ঞ চট্টগ্রামে আছে। এ পুরো প্রক্রিয়াটা শেষ করতে সময় প্রয়োজন এক থেকে দেড় মাস।
এদিকে করোনার সঠিক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য জানা না থাকায় করোনার চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে অনুমানের ভিত্তিতে। ফলে কোন কোন ক্ষেত্রে রোগী সুস্থ হয়ে গেলেও শতভাগ সফলতা পাওয়া যাচ্ছে না।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আব্দুর রব মাসুম বলেন, করোনার জীবন রহস্য জানতে পারলে শতভাগ কার্যকর চিকিৎসা দেওয়া যাবে। এ ভাইরাসকে প্রতিহত করতে আমরা কোন মেডিসিন ব্যবহার করতে পারবো তা আমাদের জানা থাকবে।
তিনি আরও বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক কোনও ভ্যাকসিন না থাকায় এটার জন্য আলাদা প্রতিরোধ ব্যবস্থাও নেই। রোগের চিকিৎসা সম্পূর্ণ অনুমানের ভিত্তিতে করা হচ্ছে। কোনটাই শতভাগ করোনার চিকিৎসা নয়। রোগের উপসর্গের উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। তবে কিছু কিছু ঔষধ কাজ করার কারণে আমরা সব মিলিয়ে সমন্বয় করে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি। এতেই অনেকে সুস্থ হয়ে উঠছে।