চালকের ঘুমে নয়, বাসের সামনের চাকা ফেটে মাদারীপুরের দুর্ঘটনা

নয়াবার্তা প্রতিবেদক : চালকের ঘুমে নয় সামনের চাকা ফেটে গত ১৯ মার্চ মাদারীপুরের শিবচরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এক্সপ্রেসওয়ে থেকে খাদে পড়েছিল ইমাদ পরিবহনের বাস (ঢাকা মেট্রো-ব-১৫-৩৩৪৮)। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) তদন্তে এ তথ্য এসেছে। ১৯ জন নিহত এবং ২৬ জন আহত হন ওই দুর্ঘটনায়।

রোববার বুয়েটে সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে জানানো হয়, ৯টি কারণ ধরে দুর্ঘটনার তদন্ত করা হয়। অনুসন্ধানী বিশ্লেষণে পাওয়া গেছে, ‘দুর্ঘটনাস্থলে রাস্তায় বাসের চাকার স্কিড মার্ক পাওয়া যায়নি। তা ইঙ্গিত করে দুর্ঘটনাটি আকস্মিকভাবে ঘটেছিল। যা টায়ার ফেটে যাওয়ার কারণে হতে পারে। ব্রেকের ত্রুটির কারণে এটি ঘটেনি। ডিউটি রোস্টার অনুযায়ী চালকের যথেষ্ট বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ ছিল। তাই চালকের ক্লান্তি দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না। স্পিড ট্র্যাকিং ডাটার ভিত্তিতে বলা যায়, চালক অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালাননি। টায়ার ফেটে যাওয়া দুর্ঘটনার সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত কারণ হিসেবে ধারণা করা যাচ্ছে।’

সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নোত্তরের আগে দুর্ঘটনার বিষয়ে উপস্থাপনা দেন এআরআইয়ের পরিচালক অধ্যাপক ড. সামছুল হক। এসময় উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের পরিচালক রোড সেফটি শেখ মো. মাহবুব-ই-রাব্বানী, মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মোঃ মাসুদ আলম।

এর আগে গত ২২ মার্চ মাদারীপুর জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে জানিয়েছিল, অতিরিক্ত গতি, চালকের দক্ষতায় ঘাটতি এবং মাত্র চার মাস পৃথক দুর্ঘটনায় দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া বাসটি এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচলের উপযোগী ছিল না। ওই কমিটি বাসের চাকা ফেটে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেনি। তাদের ভাষ্য ছিল, দুর্ঘটনার আগে নাকি পরে চাকা ফেটেছে তা নিশ্চিত নয়। তবে বুয়েটের প্রতিবেদন বলছে, চাকা ফাটার কারণেই ঘটেছে দুর্ঘটনা।

ইমাদ পরিবহনের বাসটি খুলনা থেকে ঢাকায় আসছিল। পদ্মা সেতুর পশ্চিমপ্রান্তে সংযোগ সড়কে দুর্ঘটনায় পড়ে। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের নভেম্বরে আরেকটি দুর্ঘটনায় পড়লেও ১৯ মার্চের দুর্ঘটনার সময়ে বাসটির বাইরের ও ভেতরের অবস্থা ভালো ছিল। দুর্ঘটনাস্থলের রাস্তা ২১ ফুট উঁচু। রাস্তার রুপরেখা ছিল অসঙ্গতিপূর্ণ। তবে সড়কের মান ছিল সর্বোচ্চ। মসৃণ এবং স্কিড রেজিস্টেন্স রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্কিড ট্র্যাকিং ডাটা অনুযায়ী বাসটি খুলনা থেকে যাত্রার পর ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটারের কম গতিতে চলছিল। কখনো আকস্মিক গতি বৃদ্ধি বা কমায়নি। এতে প্রতীয়মান হয়, চালক মনোযোগী ছিলেন। রাস্তায় থেকে খাদে পড়ার আগে গতি ছিল ৭৯ কিলোমিটার। এক্সপ্রেসওয়েতে গতিসীমা ৮০ কিলোমিটার। ফলে বাসটি বেপরোয়া বা অতিরিক্ত গতিতে চলছিল না। দুর্ঘটনার পরপরই অতিরিক্ত গতিকে দায়ী করা হয়েছিল। কিন্তু এর সরাসরি যোগসূত্র পাওয়া যায়নি তদন্তে।

চাকা ফাটার মতো সাধারণ ঘটনায় এত বেশি প্রাণহানির বিষয়ে ড. সামছুল হক বলেছেন, বাসটি একটি কালভার্টে উঠছিল। ওইখানে সড়কের দুই পাশে নিরাপত্তা বেস্টনী ছিল না। তাই বাসটি রাস্তা থেকে ছিটকে নিচে পড়ে কালভার্টের উইংওয়ালের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে বাসের চালক, হেলপারসহ ১৪ জনের তাৎক্ষনিক মৃত্যু হয়।

সড়কের নিরাপত্তা অডিট, এক্সপ্রেসওয়েতে নিরাপত্তা বেস্টনী স্থাপন, আমদানি করা টায়ারের মান পরীক্ষাসহ দুর্ঘটনা রোধে ১৩টি সুপারিশ করা হয়েছে।

Share