গাজী আবু বকর : আইএমএফ এর শর্তানুযায়ী ঘোষিত মুদ্রানীতি’র ‘স্মার্ট’ সুদহার করিডোর নতুন অর্থবছরের প্রথম কর্মদিবস থেকেই কার্যকর হল। অর্থাৎ সিক্স মান্থস মুভিং এভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল ‘স্মার্ট’ এর আওতায় ব্যাংক ঋণে সুদ হারের ৯ শতাংশের সীমা উঠে গেলো। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতি অনুসরণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল রোববার জুন মাসের ৭ দশমিক ১০ শতাংশ ‘স্মার্ট’ সুদহার ঘোষণা করেছে, যা জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের জন্য কার্যকর হবে।
নতুন মুদ্রানীতির নিয়ম অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি মাসের ১ তারিখে আগের মাসের ‘স্মার্ট’ রেট ঘোষণা করবে, যা ওই মাসের গ্রাহকদের ক্ষেত্রে ৬ মাসের জন্য কার্যকর থাকবে। এর ফলে বড় ঋণে সর্বোচ্চ সুদহার হবে ১০ দশমিক ১০ শতাংশ। পুরনো ঋণের পাশাপাশি জুলাই মাসে আসা নতুন গ্রাহকের বড় ঋণের ক্ষেত্রে এই সুদ হার প্রযোজ্য হবে, যা আগামী ডিসেম্বরের আগে বদলাবে না। একইভাবে আগামী অগাস্ট মাসে নতুন ঋণ বিতরণের সময়ে জুলাই মাসের ঘোষিত ‘স্মার্ট’ রেট প্রযোজ্য হবে। তখন সুদহার বাড়লে বা কমলে পুরনো গ্রাহকের ক্ষেত্রে সুদ হারে কোনো পরিবর্তন আসবে না। নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি মাসের ১ তারিখে আগের মাসের ‘স্মার্ট’ রেট ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা ওই মাসের গ্রাহকদের ক্ষেত্রে ৬ মাসের জন্য কার্যকর থাকবে। সকল বানিজ্যিক ব্যাংক বড় অংকের ঋণের ক্ষেত্রে এই স্মার্ট সুদ হারের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ সুদ যোগ করে ঋণ দিতে পারবে। আর ব্যাংক বাহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ হারে মার্জিন যোগ করে ঋণের বিপরীতে সুদ নিতে পারবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ মেনে এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) আর্থিক খাত সংস্কারের শর্তের অংশ হিসেবে এমন পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘মুদ্রানীতি রিভিউ’ প্রতিবেদনে এর আগে বলা হয়, মুদ্রা সংকোচনের নীতিতে সুদহার বাড়িয়ে অনেক দেশে মূল্যস্ফীতি প্রত্যাশার চেয়েও কমেছে। গত ১৮ জুন ঘোষিত নতুন মুদ্রানীতিতে সুদ হারের সর্বোচ্চ ৯ শতাংশের সীমা উঠিয়ে ‘রেফারেন্স রেট’ পদ্ধতিতে সুদহার নির্ধারণের কথা জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক। যা গতকাল রোববার থেকে তা কার্যকর হল। এর ফলে ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ‘রাজনৈতিক’ সিদ্ধান্তে স্বল্প সুদ সর্বোচ্চ ৯ শতাংশে ঋণ নেওয়ার যে সুযোগ এতদিন ব্যবসায়ীরা ভোগ করে আসছিলেন, তা বন্ধ হলো। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ব্যাংকের বড় ঋণে সুদ হবে ১০ দশমিক ১০ শতাংশের ঘরে। ছোট ঋণে তা হবে ১১ দশমিক ১০ শতাংশ এবং এনবিএফআই এর বেলায় ১২ দশমিক ১০ শতাংশ। গতকাল রোববার থেকেই নতুন এবং পুরনো ঋণের ওপর এই সুদহার কার্যকর হয়েছে। ব্যাংকগুলো আগামী ছয় মাসের জন্য ‘স্মার্ট’ রেট এর সঙ্গে সুদহার সমন্বয় করে নেবে। ঋণ সুদহারের সঙ্গে বাড়বে আমানতের সুদহারও। বর্তমানে আমানতের বিপরীতে গড় সুদ ৬ শতাংশের ঘরে রয়েছে। তারল্য সংকটে ভুগতে থাকা ব্যাংকগুলো ৮ শতাংশ সুদেও আমানত সংগ্রহ করছে। গত মে মাসের স্মার্ট সুদহার ছিল ৭ দশমিত ১৩ শতাংশ।
কৃষি ও পল্লী ঋণের সুদহার সাধারণ ঋণের চেয়ে ১ শতাংশ কম হবে। সেক্ষেত্রে ‘স্মার্ট’ রেটের সঙ্গে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ মার্জিন যোগ হবে। এতে এ খাতের সুদহার আগামী ৬ মাসের জন্য হবে ৯ দশমিক ১০ শতাংশ।
নতুন সিদ্ধান্তে গ্রাহক পর্যায়ে বড় ঋণের চেয়ে ছোট ও মাঝারি ঋণের সুদহার বাড়বে। ব্যক্তি ক্ষেত্রে জমি-ফ্ল্যাট ক্রয়ের গৃহ ঋণ, গাড়ি, আসবাব, মোটরসাইকেলসহ কিস্তিতে যে কোনো পণ্য ক্রয়ে নেওয়া ভোক্তা ঋণ এর সুদ ব্যয় আগের চেয়ে বাড়বে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) খাত এবং ভোক্তা ঋণের আওতায় ব্যক্তিগত ঋণ ও গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে ব্যাংক আরো ১ শতাংশ সুপারভিশন চার্জ যোগ করতে পারবে। এই সুপারভিশন চার্জ বছরে সর্বোচ্চ একবার যোগ হবে। এসব খাতে ব্যাংক ঋণের সুদহার দাঁড়াবে ১১ দশমিক ১০ শতাংশ। গ্রাহকের সম্মতির ভিত্তিতে ব্যাংক স্থির বা পরিবর্তনশীল যে কোনো একটি সুদহার ঠিক করতে পারবে। অর্থাৎ ব্যাংক চাইলে সর্বোচ্চ মার্জিনের মধ্যে যে কোনো একটি অঙ্কে সুদহার নির্ধারণ করে দিতে পারে। তবে কোনো ব্যাংক ৬ মাসের আগে কোনো গ্রাহকের সুদহার বদলাতে পারবে না। সুদহার বদলের আগে গ্রাহককে অবশ্যই জানাতে হবে।
নতুন মুদ্রানীতি‘র ‘স্মার্ট’ সুদহার করিডোর এর সঙ্গে বিনিময় হার বাজারের উপর ছেড়ে দেওয়া এবং বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভের হিসাব করার আইএমএফ স্বীকৃত বিপিএম-৬ পদ্ধতি চালুর সিদ্ধান্তও গতকাল রোববার থেকে কার্যকর হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র দৈনিক জবাবদিহিকে জানিয়েছেন, বিপিএম- ৬ অনুযায়ী এখন থেকে রিজার্ভের পরিমাণ প্রকাশ করা হবে না। এখনকার মত মোট রিজার্ভ প্রকাশ করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র জানান, বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারের উপর ছেড়ে দিতে আরও একটু সময়ের প্রয়োজন হবে।
