নিজস্ব ডেস্ক প্রতিবেদক : ডেঙ্গ জিয়ানপিং ও তার উত্তরসূরীরা মাঝ সত্তরের মাও সাংস্কৃতিক বিপ্লব উত্তর বিভিন্ন ঘৃণ্য আচরণের সুপারিশ ও বাণিজ্য সমঝতা প্রত্যাশা করেছিল পশ্চিমাদের কাছে। একটি স্বর্ণযুগ ছিল যখন একদলীয় রাষ্ট্রটিও আলোচনা নির্ভর ব্যবস্থায় উপনীত হয়েছিল। কিন্তু ১৯৮৯ সালের ৪ জুন তিয়েনআনমেন স্কোয়ারে সামরিক ট্যাংকের উপস্থিতি তা মর্মান্তিকভাবে বিচূর্ণ করেছিল।
যদিও এটা বাণিজ্য পুঁজিবাদের এবং সাম্যবাদী পার্টি কর্তাদের ওপর পরিসীমাসহ তৎপরতার গণ্ডি ছিল। বিপরীতে শি জিনপিং মাও- এর ঐতিহ্যের এক নিখুঁত বাহক সম্রাট হিসাবেই স্বীকৃত। বিশ্ব এখন শুধু বাস্তববাদী একদলীয় রাষ্ট্রের মুখোমুখি নয় বরং একজন ‘ডট্রেইনার’ এক নায়কতন্ত্রের মুখোমুখি। এ স্বৈরাচার তার ক্ষমতার দ্বিতীয় দশকের মধ্যে পশ্চিমা বাণিজ্য ও সহযোগিতার মূল্যে সুপ্তও প্রকৃত ভিন্নমতকে ধ্বংস করার জন্য সংকল্পবদ্ধ।
শি এর জুন মাসে প্রকাশিত হংকংয়ের জন্য রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা আইন ১৯৮৪ সালের চীন-বৃটিশ ঘোষণার সুস্পষ্ট ও ইচ্ছাকৃত লঙ্ঘন; যা এ বাণিজ্য শহরকে গত ৫০ বছর যাবৎ রাজনৈতিক স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দিয়েছিল। এখন বৃটেন এ ঘোষণার গ্যারান্টার হিসেবে হংকংয়ের গণতন্ত্রীদের ওপর দমন নিপীড়ন প্রসূত রাজনৈতিক আশ্রয় প্রদানের দাযিত্ব এড়াতে পারে না। হংকং হতে পারে নতুন পশ্চিম বার্লিন, একটি কোল্ড ওয়ার সময়ের সংজ্ঞায়িত লড়াই; যা পাশ্চাত্য মূল্যবোধ, সমৃদ্ধি ও শক্তি হ্রাস করা না হলে লড়াই অবশ্যম্ভাবী।
পশ্চিম বার্লিনের মতো হংকংও উদ্ধারযোগ্য এবং প্রতিরক্ষামূলক হতে পারে এর বৈশ্বিক অবস্থানের কারণে। ১৯৪৮ সালের সেপ্টেম্বরে স্টালিনের পশ্চিম বার্লিনকে সাফ করার চেষ্টার পরের পশ্চিম যদি আর্নি বেভিন ও জর্জ মার্শালের শক্তি নিয়ে এগিয়ে যায় তবেই সেটা সম্ভব।
চীনের পশ্চিমাঞ্চলে জিনজিয়াংয়ের জাতিগত সংখ্যালঘুদের যে দমনপীড়ন যে শুরু হয়েছিল তা প্রতিমাসে মাসে নতুন সংস্কৃতিক বিপ্লব হিসেবে পরিণত হচ্ছে। দাবি করা হচ্ছে, প্রায় এক মিলিয়ন কিংবা তিন মিলিয়ন উইঘুর, কাজাখ এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের ‘রি-এডুকেশন’ শিবিরে পাঠানো হয়েছে। হিউমান রাইটস ওয়াচের মতো সংস্থা এই তথ্য জানিয়েছে।
স্যাটেলাইটের ছবিগুলোতে ক্যাম্পগুলোর যে ছবি দেখা গেছে এবং জিনজিয়াং সফর করে ব্রিটিশ কূটনীতিকরা যা বলছেন তাতে ধরে নেওয়া যায় ওই তথ্যগুলো ‘ব্যাপকভাবে’ সঠিক।
চীনের জিনজিয়াং অঞ্চলটিকে নির্জন জায়গায় গোপন ক্যাম্প এবং নো রাইট জোন হিসেবে বর্ণনা করেছে জাতিসংঘের জাতিগত বৈষম্য দূরীকরণ সম্পর্কিত কমিটি। জিনজিয়াংয়ের উইঘুর সংখ্যালঘু সদস্য এবং মুসলমান হিসেবে চিহ্নিত অন্যানদের সঙ্গে জাতিগত-ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে রাষ্ট্রের শত্রু হিসেবে দেখা হয়।
মামুলি ব্যাপারেই উইঘুর সংখ্যালঘুদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের মোবাইলে যদি হোয়াটসঅ্যাপ থাকে তাহলেই তাদের আটক করা হয়। এ ছাড়াও তাদের পরিবারের কেউ যদি বিদেশে থাকে কিংবা অনলাইনে ধর্মীয় বিষয়ে জানতে চেয়ে ব্রাউজিং করে তাহলেই গ্রেপ্তার করা হয়।
কোনো কারণ ছাড়াই উইঘুরদের আটক করা হয়। আইনজীবীদের দারস্ত হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয় না। আপিলের সুযোগও কপালে জুটে না। প্রায়ই তাদের পরিবারকে জানানো হয় না তাদের কোথায় আটকে রাখা হয়েছে কিংবা কবে আটকদের ছাড়া হবে। তবে এখন তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।
জার্মানির প্রখ্যাত নৃবিজ্ঞানী অ্যাড্রিয়ান জেনজের একটি গবেষণা বলা হয়, জিনজিয়াংয়ের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে নাটকীয়ভাবে জন্মহার কমে গেছে। এটি এমন ইঙ্গিত দেয় যে সেখানে জন্ম নিয়ন্ত্রণের কৌশল অবল্বন করা হয়েছে। কবরস্থানের ধ্বংসের পাশাপাশি গণবন্দি, দমন, বিচারবহির্ভূত আটক, আক্রমণাত্মক নজরদারি, জোরপূর্বক শ্রম এবং অন্যান্য অপরাধ ‘গণহত্যার’ মতো অপরাধের দিকে ইঙ্গিত করে।
সূত্র: দ্য সিঙ্গাপুর পোস্ট।