‘ছাত্রাবাসে নয়, স্বামীর গাড়িতেই করা হয় ধর্ষণ’

নিজস্ব জেলা প্রতিবেদক : সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গৃহবধূ গণধর্ষণের ঘটনার জন্য ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি। প্রতিষ্ঠানটির নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি ও তদারকির অভাব ছিলো বলে উল্লেখ করা হয়। ঘটনাটি ছাত্রাবাসের কক্ষে নয়, ধর্ষিতা ও তার স্বামীর গাড়িতে ঘটেছে।

তদন্তে কোনো সুপারিশ না করা হলেও ১৫টির মতো পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়েছে। ১ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার কমিটি প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। পরে আরো বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) মো. শাহেদুল খবীর চৌধুরীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র এই তথ্য জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, কলেজের নিরাপত্তায় জনবলের ঘাটতির বিষয়টি তদন্ত কমিটির কাছে ধরা পড়েছে। ১৪৪ একর এলাকা নিয়ে বিশাল ক্যাম্পাসের কোনো সীমানা প্রাচীর নেই। গাছগাছালি ও টিলা ঘেরা ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা না থাকার বিষয়টিও নজরে এসেছে তদন্ত কমিটির।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রের ধারণা, যেখানে এই ঘটনাটি ঘটেছে সেখানে ভবন নির্মাণাধীন থাকায় শ্রমিকদের অবাধ আনাগোনা ছিলো। ফলে লোকজনের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। এছাড়াও ছাত্রাবাস এলাকায় কলেজের অনেক কর্মচারী স্বপরিবারে থাকেন বলেও জানান তারা।

সূত্র আরো জানায়, কমিটি সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করেনি। তবে বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে। করোনা মহামারীর কারণে নজরদারির অনেক ঘাটতি ছিলো। এখন নজরদারি আরো বাড়ানো দরকার বলেও মনে করে তদন্ত কমিটি।

তদন্ত কমিটি আরো জানায়, হোস্টেল বন্ধ থাকালেও যেকোনো স্থান দিয়ে যে কেউ প্রবেশ করতে পারে। কোথাও কোথাও সীমানা প্রচীর নেই। কোথাও সীমানা প্রচীর থাকলেও তা অনেক নিচু। কোথাও তারকাটা দেয়া থাকলেও তা কাটা। ফলে খোলা থাকুক আর না থাকুক যে কেউ ছাত্রাবাসের ভেতরে ঢুকতে পারে।

ধর্ষকদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন উল্লেখ করে ওই তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ধর্ষকদের নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। এছাড়াও নিরাপত্তার জন্য সেখানে পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করে স্থায়ী একটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা যেতে পারে বলেও উল্লেখ করা হয়।

তদন্ত কমিটির অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, গণধর্ষণের ঘটনাটি ছাত্রাবাসের কোনো কক্ষে ঘটেনি। এটা ভুক্তভোগী নারী ও তার স্বামীর গাড়িতে ঘটেছে। যেহেতু এ ঘটনাটি কলেজ ক্যাম্পাসে হয়েছে তাই কর্তৃপক্ষ এর দায় এড়াতে পারে না বলেও মনে করে তদন্ত কমিটি।

ভুক্তভোগী নারী মানসিক ট্রমার মধ্যে থাকায় তার সঙ্গে কথা বলেনি তদন্ত কমিটি। তবে তার স্বামীর সঙ্গে কথা হয় বলেও জানান সংশ্লিষ্ট সূত্র।

প্রসঙ্গত, গত ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় স্বামীর সঙ্গে এমসি কলেজে ঘুরতে এসেছিলেন ওই নারী। এ সময় কলেজ ক্যাম্পাস থেকে মহানগর ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী তাদের জোরপূর্বক কলেজের ছাত্রাবাসে নিয়ে যায়। এরপর একটি কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে তাকে গণধর্ষণ করেন তারা। রাত ১১টায় শাহপরাণ থানা পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। বর্তমানে ওই তরুণী সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

সূত্র : সময় টিভি

Share