জনস্বাস্থ্যের নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে প্রতারণামূলক বিয়ের অভিযোগ তৃতীয় স্ত্রীর

নয়াবার্ত‍া প্রতিবেদক : আগের দুই বিয়ের তথ্য গোপন করে নোয়াখালী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিবের বিরুদ্ধে প্রতারণামূলক বহুবিবাহের অভিযোগ তুলেছেন তৃতীয় স্ত্রী ডাক্তার সুমনা ইসলাম। স্ত্রীর স্বীকৃতি, সন্তানের পিতৃপরিচয় অস্বীকার করে উল্টো নানা অপপ্রচার, সামাজিকভাবে সম্মানহানিরও অভিযোগ তুলেছেন তিনি।

বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী সুমনা। সামাজিকভাবে হেয়-প্রতিপন্ন করা থেকে বিরত থেকে স্ত্রী হিসেবে নিজের স্বীকৃতি ও সন্তানের পিতৃপরিচয়ের নিশ্চয়তা দাবি করেছেন তিনি। এজন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপও কামনা করেন সুমনা ইসলাম।

ডা. সুমনা ইসলাম বলেন, আমি রাশিয়া থেকে এমবিবিএস পাসের পর ২০১৯ সালে পাবনা মেডিকেলে ইন্টার্নশিপ করি। ২০১৯ সালে পাবনায় থাকার সময় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও নোয়াখালী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আহসান হাবিবের (৩৮) সঙ্গে পরিচয় হয়।

২০১৯ সালের ২ মার্চ সাক্ষাৎ করে আহসান হাবিব বিয়ের প্রস্তাব দেন। কথোপকথনের এক পর্যায়ে পরিবারের সম্মতিতে দ্বিতীয় বিবাহের ডিভোর্সের কাগজ দেখিয়ে ২০২১ সালের ২৫ জানুয়ারি তাকে বিয়ে করি। কিন্তু আহসান হাবিব তার প্রথম বিয়ের তথ্য গোপন করেন, যা আমি জানতাম না। আমাদের বিবাহিত জীবনে কিছুদিন পর আহসান হাবিবের আচার-আচরণ সন্দেহ হয়। আমি তার বাড়িতে যেতে চাইলে বিভিন্ন ধরনের তালবাহানা করেন আহসান হাবিব। তার নেত্রকোণার বাসভবনে আমি স্থায়ীভাবে বসবাস করতে চাইলে তিনি এটা সম্ভব না বলে জানান।

পরে খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পারি, আহসান হাবীবের আগে আরিফা পারভীন নামে আরও একজন বিবাহিত স্ত্রী আছেন। সেখানে একটি ছেলে সন্তান এবং দ্বিতীয় স্ত্রী হুমায়রার রহমানের সঙ্গে সংসার জীবন চলমান ও দুটি সন্তান রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে আহসান হাবীবের কাছে জানতে চাইলে তিনি ক্ষীপ্ত হয়ে আমাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করেন। আমি, আমার মা ও ভাই নওগাঁর মহাদেবপুরে তার গ্রামের বাড়ী গেলে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আমাদের হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করেন। এ ঘটনায় মহাদেবপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করি। মামলার পর তিনি আরও হিংস্র হয়ে ওঠেন। পরে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবর একটি অভিযোগ দিই। পরে আহসান হাবীব আমার সাথে আপোষ করেন। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সংসার করার উদ্দেশ্যে মামলাটি প্রত্যাহার করি।

কিছুদিন পর সন্তানসম্ভবা হওয়ার খবরে আহসান হাবিব আমার সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ দিতে থাকে। নষ্ট না করলে ডিভোর্স দেয়ার হুমকি দেন আহসান হাবীব। সব যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। তার তখনকার কর্মস্থল নেত্রকোণায় গেলে আমাকে ও আমার মাকে তালাবদ্ধ করে রাখেন। পরে পুলিশের সহায়তায় নিজেদের উদ্ধার করি। ২০২২ সালের ২৭ মার্চ ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সি.আর মামলা করি।

ডাক্তার সুমনা দাবি করে বলেন, শুধু আমি নই, আমার আগে আহসান হাবীবের বিরুদ্ধে তার প্রথম স্ত্রী আরিফা পারভীন বিভিন্ন সময়ে মামলা দায়ের করেছিলেন। বর্তমানে আমার ১৪ মাসের কন্যা সন্তান আছে এবং আহসান হাবীব সন্তানের পিতৃ পরিচয় ও ভরণপোষণ হতে বিরত রয়েছেন। আহসান হাবীব সামাজিকভাবে শুধুমাত্র দ্বিতীয় স্ত্রী ও সন্তানদের কথা স্বীকার করেন। তিনি বিভিন্ন সময় আমার বাসায় সন্ত্রাসী পাঠিয়ে আমাকে ও আমার সন্তানকে প্রাণনাশের চেষ্টাও করেছেন। ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আমাকে ও আমার সন্তানকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে তার সন্ত্রাসীরা।

আমি সংসার টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করলেও তিনি আমাকে নানাভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেছেন। আমার ডাক্তারি লাইসেন্স বাতিল করার জন্য মালিহা মাহজাবিন নামে তার এক বান্ধবীকে দিয়ে ভিত্তিহীন ও বানোয়াট তথ্যে বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার বরাবর আবেদন করায়।

তিনি আরও বলেন, আহসান হাবীব বাসুকা কর্পোরেশন নামে প্রতিষ্ঠান খুলে নেত্রকোণার আটপাড়া উপজেলায় ৯৩টি টিউবওয়েল বসানোর কাজ দেন। এর সব কাগজপত্র করেন আমার নামে। যার টেন্ডার আইডি- ৫১০২৬২। দরপত্রের বিপরীতে বাসুকা কর্পোরেশন পারফরম্যান্স সিকিউরিটি বাবদ ৬ লাখ ৫৬ হাজার ৫৬৬ টাকা ব্যাংক জামানত রাখেন। জামানতকৃত টাকা এখনও অসংগৃহিত রয়েছে। ঠিকাদারি কাজটি সম্পন্ন করার জন্য মালামাল কেনার উদ্দেশ্যে আহসান হাবীব আমার কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা বিভিন্ন সময়ে পর্যায়ক্রমে নিয়েছে। অথচ বিল না দিয়ে কাজটি বাতিল করে ২০২১ সালের ৯ জুন আবার দরপত্র আহ্বান করেন। এমন প্রতারণার বিষয়ে জানতে চাইলেও তিনি নানাভাবে হুমকি দেন। একইভাবে দ্বিতীয় স্ত্রী, শ্যালিকা ও অন্যান্য আত্মীয় স্বজনের নামে ট্রেড লাইসেন্স করে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজে কাজ করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। আমি সংসার করতে চাই, নিজের স্ত্রীর স্বীকৃতি ও সন্তানের স্বীকৃতি চাই। তার নানামুখী অসম্মানজনক তৎপরতা বন্ধ চাই। মিথ্যাচার, সামাজিক সম্মানহানি থেকে রেহাই পেতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

Share