জিয়া-বেগ গোপন পত্র ফাঁস ‘মুক্তিযোদ্ধা’ জিয়া ছিলেন পাকিস্তানের সামরিক গুপ্তচর!

নিজস্ব ডেস্ক প্রতিবেদক : দেশবরেণ্য সাংবাদিক আবেদ খান রচিত অনবদ্য ধারাবাহিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ‘ষড়যন্ত্রের জালে বিপন্ন রাজনীতি’র প্রতিটি পরতে পরতে শক্তিমান এই সাংবাদিক উন্মোচিত করেছেন অতীতের বহু জঠরের জঞ্জাল। ইতিহাসের একজন প্রত্যক্ষ রাজসাক্ষীর মত লেখাটির বিভিন্ন পর্বে অত্যন্ত বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতার সঙ্গে তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের নির্মম হত্যাকাণ্ড সংশ্লিষ্ট সেই শাপিত ষড়যন্ত্র, এর সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিটি ব্যক্তি ও ঘটনা এবং তার পরবর্তী সময়ে অবরুদ্ধ বাংলার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ এক অজানা অধ্যায়ের আত্মপ্রকাশ দিয়েছেন। যার প্রেক্ষিতে – ধূর্ত মেজর জিয়ার খোলসে আবৃত বীভৎসতা এবং এর সত্যতা প্রকাশের পাশাপাশি নীতিভ্রষ্ট এই সেনা কর্মকর্তাই যে ১৯৭৫ ও তৎপরবর্তী প্রতিটি কুকর্মের মাস্টার মাইন্ড- সেই বিষয়টিও তুলে ধরেছেন।

• পরস্পর যুদ্ধরত দুটি দলের দুইজন সেনার মাঝে বিশেষ যোগাযোগ ও পত্র বিনিময়।

• বঙ্গবন্ধু স্বাক্ষরিত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠের সময় আকস্মিক নিজেকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান দাবি করেছিলেন মেজর জিয়া।

• বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে ধূর্ততার সঙ্গে জুনিয়র অফিসারদের ব্যবহার করে মসনদ হাসিল।

সম্প্রতি সেই বর্ণিত তথ্যগুলোর সত্যতা জানান দিতেই সামনে এসেছে বেশ কিছু আলোচিত গোপন তথ্য। বিশেষ সূত্রের ভিত্তিতে প্রাপ্ত চাঞ্চল্যকর এই তথ্যাদি ও তাদের যৌক্তিক বিশ্লেষণে প্রাপ্ত দিকনির্দেশনা অন্তত তাই বলছে।

১৯৭১ সালে মুক্তিকামী বাঙালির নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রত্যক্ষ নির্দেশে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে গোটা জাতি। বরাবরই বিভিন্ন প্রসঙ্গে বিতর্কিত একজন সেনা সদস্য হওয়া সত্ত্বেও সেই স্বাধীনতা যুদ্ধে নিজের অবদানের জন্য কিছুটা গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিলেন সাবেক সেনা শাসক, রাজনৈতিক দল বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা- প্রয়াত মেজর জিয়া। কিন্তু এমন ‘দেশপ্রেমিক’ একজন সেনা সদস্য কেন পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট সেনা ক্যু’র মাধ্যমে জাতির পিতাকে সপরিবারে (দুইজন ব্যতীত) নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় ইন্দনদাতা হয়েছিলেন, তা অনেকের কাছেই একটি রহস্য। ধারণা করা হয়, বিদেশি ষড়যন্ত্রের প্রভাবে ক্ষমতালোভী হয়ে ওঠাই ছিল এর মূল কারণ।

সম্প্রতি বেশকিছু স্পর্শকাতর তথ্য ও গোপন নথি প্রকাশের প্রেক্ষিতে দেখা যায়, যুদ্ধ পরবর্তী বা ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গ দোষে নয় বরং পেশাদারিত্বের সঙ্গে শত্রুর সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের নীলনকশা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য নিয়েই তাদের এজেন্ট হিসেবে পুরোদস্তুর একজন দেশপ্রেমিক ও কথিত মুজিব আদর্শের বীরযোদ্ধারূপে আবর্তিত হয়েছিলেন তৎকালীন পাকিস্তান সেনা গোয়েন্দা সংস্থার অন্যতম চৌকস সদস্য মেজর জিয়া। এসকল নথির মধ্যে সবচেয়ে বিস্ময় জাগানিয়া প্রেক্ষাপট সৃষ্টি করছে যুদ্ধকালীন ও তৎপরবর্তী বাংলাদেশের পক্ষে রণাঙ্গণে লড়াই করা, জেড ব্রিগেড কমান্ডার মেজর জিয়ার কাছে লেখা পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্তব্যরত কসাই টিক্কা খানের অন্যতম বিশ্বস্ত অনুসারী কর্নেল বেগের একটি চিঠি। যার প্রেক্ষিতে তৎকালীন নানা ঘটনা ও প্রাসঙ্গিক পরিস্থিতির যৌক্তিক বিশ্লেষণে সামনে আসছে ভয়াবহ তথ্য। যেখানে বলা হচ্ছে, দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা নয় বরং পাকিস্তান ইন্টেলিজেন্সের কুখ্যাত গুপ্তচর হিসেবে মিশনে এসেছিলেন জিয়া। যার লক্ষ্য ছিল, বঙ্গবন্ধুর একান্ত আস্থাভাজন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এবং একান্তই যদি পাকিস্তান যুদ্ধে হেরে যায় সেক্ষেত্রে স্বাধীন বাংলাদেশে যেন সমৃদ্ধির সূর্যোদয় না হয় তা নিশ্চিত করতে বানগালির নিউক্লিওয়াস খ্যাত বঙ্গবন্ধুকে নিস্তব্ধ করে দেয়া!

এরই ধারাবাহিকতায় জিয়া হত্যাকাণ্ডেরও একটি যৌক্তিক কারণ নির্ধারণ করা সম্ভব হয়। প্রভুদের মিশন সম্পন্ন করতে আসা জিয়া নিজেই যখন প্রভুত্ব অর্জনের লিপ্সায় নিমজ্জিত হয় তখনই প্রয়োজন ফুরিয়ে আসা মেজর জিয়াকেও নীরব করে দেয়া হয় বলে মনে করা হচ্ছে। আর এই ক্ষমতামুখী লিপ্সাই মেজর জিয়ার বহু অতীত সত্যের পর্দা উন্মোচিত করছে বর্তমানে। তার প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল বিএনপি অবশ্য বরাবরই তাকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে দাবি করলেও, এই দাবি যে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন তা প্রমাণ হয়েছে বহু আগেই।

সম্প্রতি দুর্লভ এই চিঠি, সংশ্লিষ্ট উইকিলিকসের গোপন তথ্য ও সাবেক এক আইএসআই সদস্যের দেয়া তথ্যের প্রেক্ষিতে স্বাধীনতা যুদ্ধ ও তৎপরবর্তী নানা প্রসঙ্গে অজানা সত্যের সমারোহ ঘটতে শুরু করে মেজর জিয়াকে ঘিরে। যার মধ্যে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য হচ্ছে পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্যের কারণেই জিয়ার প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল বিএনপিকে আইএসআই-এর পর্যায়ক্রমে অর্থায়ন প্রসঙ্গটিও। বেশকিছু দিন আগে লন্ডনে পলাতক তারেকের মোটা অংকের সঞ্চিত অর্থের হিসেব এবং উৎস জানতে চাইলে ব্রিটিশ তদন্তকারী সংস্থাকে জানানো হয় যে, তার টাকা জুয়ায় উপার্জিত। কিন্তু এখন বোঝা যাচ্ছে আসলে দেশবিরোধী কত বড় জুয়ার আসরে তিনি মজেছেন।

বাবা মেজর জিয়ার উত্তরসূরি, আইএসআই এজেন্ট তালিকায় নাম ওঠানো তারেক জিয়া কোন সূত্রে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক নিরবছিন্ন রেখেছেন এবং মা খালেদা জিয়া কেন জামাতপন্থী রাজনীতির চর্চায় নিবেদিত ছিলেন, তার উত্তর মেলে সে সময় মেজর জিয়াকে লেখা পাকিস্তানি কর্নেল বেগের একটি চিঠির মাধ্যমে। সে সময় জিয়া-বেগ দ্বৈরথ চলার কথা ধুন্ধুমার, যেহেতু মেজর জিয়া ছিলেন একজন বাঙালি মুক্তিযোদ্ধা আর বেগ ছিলেন খুনি পাকিস্তানি জেনারেল টিক্কার ভৃত্য। অথচ বিস্ময়করভাবে তাদের মাঝে সে সময় অবিশ্বাস্যভাবে গড়ে ওঠা সমঝোতার ক্ষেত্রটিই অনেকাংশে স্পষ্ট করে তোলে জিয়ার মূল ভূমিকা ও প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো।

চিঠিটি ১৯৭১ এর ২৯ মে লেখা। চিঠিতে তৎকালীন কর্ণেল বেগ, লিখেছেন, মেজর জিয়াউর রহমানকে। প্রথমেই চিঠির ভাষ্য পাঠকদের জন্য উপস্থাপন করছি:-

Major Ziaur Rahman, Pak Army, Dacca
We all happy with your job. We must say, good job. you will get new job soon.
Don’t worry about your family. Your wife and kids are fine you have to be more careful about major Jalil.

Col. Baig Pak Army
May 29. 1971

মেজর জিয়াউর রহমান, পাক আর্মি, ঢাকা
তোমার কাজে আমরা সবাই খুশি। আমাদের অবশ্যই বলতে হবে তুমি ভালো কাজ করছো। খুব শীঘ্রই তুমি নতুন কাজ পাবে।
তোমার পরিবার নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ো না। তোমার স্ত্রী ও বাচ্চারা ভালো আছে। তোমাকে মেজর জলিল সম্পর্কে আরো সতর্ক থাকতে হবে।

কর্নেল বেগ, পাক আর্মি
মে ২৯, ১৯৭৭।

এক্ষেত্রে ১৯৭১ সালের প্রেক্ষাপটের দিকে ফিরে তাকালে দেখা যাবে, চিঠি লেখার সময়কাল বলছে, সে সময় হানাদার পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে প্রাণপণ যুদ্ধে লিপ্ত বাঙালিরা। বাঙালি জাতি স্বাধীনতার জন্য মরণপণ সংগ্রাম করছে, চারদিকে অস্ত্রের ঝনঝনানি আর মৃত্যু। যেখানে মেজর জিয়া অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি সেক্টরের কমান্ডার, একজন মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছেন। আর কর্নেল বেগ, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অন্যতম কর্তা। সকাল-সন্ধ্যা বাঙালি নিধনের নির্দেশ দিচ্ছেন, ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করছেন। দুইজন সমর ক্ষেত্রে চরম প্রতিপক্ষ। অথচ কর্ণেল বেগ বলছেন ‘তোমার কাজে আমরা খুশী।’ মুক্তিযোদ্ধা মেজর জিয়াকে শত্রু সেনাদের অন্যতম কর্তা কি এমন কাজ দিয়েছেন যে এত রক্তক্ষরণ আর সম্ভাব্য পরাজায়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েও খুশি ছিলেন কর্নেল?

এ অংশ থেকে মুক্তিযুদ্ধকালীন অকথিত অধ্যায়ের একটি বিশাল অংশ আলোতে আসে। এর মানে কি এই যে, দৃশ্যত জিয়া মুক্তিযুদ্ধ করলেও আসলে তিনি ছিলেন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন? আর তাতে তিনি সফল হচ্ছিলেন? আর সেটা যে অনেকাংশেই বাস্তব তা বোঝাতে বলা যায়, মুক্তিযুদ্ধের সময়ই তিলে তিলে খন্দকার মোশতাকদের ষড়যন্ত্রের জাল বোনা শুরু হবার কথা আজ জাতি কিন্তু জানে। সে সময় পাকিস্তান সম্পূর্ণভাবেই মার্কিন কিসিঞ্জারের জাদুর কাঠির ইশারায় চলতো। আর শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয়ে গুপ্তচর ও আততায়ী ব্যবহারের ঘৃণ্য ও কাপুরুষোচিত রণকৌশলের জন্যে মার্কিনিরা সারা দুনিয়াতেই বেশ পরিচিত। যা থেকে বোঝা যায়, আন্তর্জাতিক চাপের কারণে, বিশেষ করে ভারত ও রাশিয়ার প্রত্যক্ষ সমর্থনের ফলে উৎকণ্ঠিত ও দোসরদের যুদ্ধজয়ে মরিয়া কিসিঞ্জারের আত্মমর্যাদা যখন বিবস্ত্র প্রায় তখনই এমন গুপ্তচর প্রেরণের মাধ্যমে নোংরা ষড়যন্ত্রের চাল শুরু হয়। যার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিশনে ছিলেন সম্ভবত জিয়া।

১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট ষড়যন্ত্রে মোশতাক চক্রের সংগে জিয়ার যোগাযোগের কথাও জাতি জানে। কিন্তু যেটি এই চিঠি স্পষ্ট করে দিয়েছে তা হলো ‘মুক্তিযোদ্ধা’ জিয়া আসলে ছিলেন স্বাধীনতাবিরোধী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এজেন্ট। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি ষড়যন্ত্রের অন্যতম অংশ ছিলেন মেজর জিয়া। মুক্তিযুদ্ধের সময়ই তাকে পাকিস্তানিরা ‘বিশেষ দায়িত্ব’ দিয়েছিল, যে দায়িত্ব তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে পালন করেছিলেন। ৭৫ এ জিয়ার ভূমিকায় যারা হিসেব মিলাতে পারেন না, তাদের জন্য এই চিঠি একটি বড় উন্মোচন।

এই চিঠি প্রামাণ করে, জিয়া কখনও বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন না, তিনি ছিলেন পাকিস্তানের ‘গুপ্তচর’। আর একারণেই ৭৫ এর ১৫ আগস্ট জিয়া মোশতাক চক্রকে সঙ্গে নিয়ে ইতিহাসের বর্বরোচিত এই ঘটনা ঘটান। একারণেই, ৭৫ এর পর জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করেছিলেন। যুদ্ধাপরাধে আটকদের মুক্তি দিয়েছিলেন। একারণেই, জিয়া গোলাম আযমকে দেশে ফিরিয়ে এনেছিলেন। একারণেই জিয়া আবার জামাতকে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছিলেন। একারণেই জিয়া, চিহ্নিত স্বাধীনতা বিরোধীদের প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছিলেন। যুদ্ধাপরাধী, স্বাধীনতা বিরোধীদের মন্ত্রী বানিয়েছিলেন, দলে নিয়েছিলেন। একারণেই জিয়া রক্তে ভেজা আমাদের সংবিধান কাঁটাছেড়া করে রক্তাক্ত করেছিলেন। একারণেই, জিয়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধুলিসাৎ করেছিলেন।

একারণেই, জিয়ার মৃত্যুর পরও ১৯৯১ এ ক্ষমতায় এসে বিএনপি ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করেনি, একারণেই বেগম জিয়া স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি জামাতকে নিয়ে জোট করেছেন। একারণেই, ক্ষমতায় এসে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানিয়েছিলেন। একারণেই বেগমজিয়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। প্রকাশ্যেই যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। একারণেই তিনি জঙ্গী, মৌলবাদী সন্ত্রাসীদের মদদ ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন।

এই চিঠির যোগসূত্র আমরা পাই, পাকিস্তানের আদালতে দেয়া আইএসআই প্রধানের বক্তব্যে। কিছু দিন আগে আইএসআই প্রধান আদালতে এক লিখিত জবানবন্দিতে বলেছিলেন ‘বিএনপিকে আইএসআই নিয়মিত অর্থ দেয়।’

খালেদা জিয়ার একটি নিবন্ধ ‘ওয়াশিংটন টাইমস’ নামে একটি মৌলবাদী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। ঐ নিবন্ধে তিনি যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে অবস্থান প্রকাশ্যে ঘোষণা করে, এব্যাপারে তিনি মার্কিন হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। অর্থাৎ জিয়া ‘গুপ্তচর’ হয়ে পাকিস্তানি আনুগত্যের যে বীজ বপন করেছিলেন, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে তা তখন মহিরুহে পরিণত হয়েছিল এবং তারেকের হাত ধরে সেটা অব্যাহত রয়েছে। এই জন্যই জামাত-শিবিরের তাণ্ডব আর খালেদা-তারেকের হাহাকারের সঙ্গে চলেছিল মার্কিন তোড়জোড়- যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকালে। এই চিঠির সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার নিবন্ধের যোগসূত্রও পাওয়া যায়। খালেদা জিয়া তার নিবন্ধের শুরুতে বলেছেন ‘১৯৭১ সালে প্রথম সারির জাতিগুলোর মাঝে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের আত্ম-সংকল্পের অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়।’ ৭১ এর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা আমরা সবাই জানি। অনেকে মনে করতে পারেন বেগম জিয়া কিভাবে এই মারাত্মক ভুল করলেন। কিন্তু জিয়ার কাছে লেখা কর্নেল বেগের ৭১ এর চিঠি বলে দেয়, বেগম জিয়া যা লিখেছেন তা জেনে বুঝেই। ৭১ এ পাকিস্তানি হানাদারদের পক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিল ইয়াহিয়ার নির্দেশে। ইয়াহিয়া খানের গুপ্তচর জিয়ার গড়া দলের নেত্রী, বেগম জিয়া তাই মার্কিন ভূমিকার প্রশংসা তো করবেনই। একই কায়দায় তিনিও তো মার্কিন আগ্রাসনের আমন্ত্রণও জানাবেন।

এই একটি চিঠিই দিচ্ছে অনেক প্রশ্নের উত্তর, অনেক অমীমাংসিত বিষয়ের সমাধান। আর সেটাই বাস্তবতা। এরই ধারাবাহিকতায় হয়তো একদিন নিজ তাগিদেই এদেশের আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা বুঝে নেবে, খালেদা জিয়ারা কখনো গণতন্ত্রের জননী হতে পারেন না, সেটা গণতন্ত্রের জন্য লাঞ্ছনা। তেমনি জামাত কখনও নাম বদলে নিলেও আমার বাংলাদেশের আপন হতে পারে না। আর তারেকরাও পারে না পূর্বসূরির পাপাচারের অনুসরণ না করে তা বন্ধ করতে। সেজন্যেই এদের দ্বারা পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্ট পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ জাতির পিতাকে হত্যা করা সম্ভব হয়েছিল। সম্ভব হয়েছিলো ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় জনকের শেষ রক্তবিন্দুটুকু বাংলার মাটি থেকে নিঃশেষ করে দেয়ার মত ঘৃণ্য অপচেষ্টা চালানোর।

Share