আনোয়ারা পারভীন : ঈদুল আজহায় ব্যাংকিং চ্যানেলে বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহে সুনামি সৃষ্টি হয়েছে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা চলতি জুন মাসের প্রথম ১৪দিনে ১ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন বা ১৬৪ কোটি ৬৭ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় দেশে পাঠিয়েছেন। দেশীয় মুদ্রায় প্রতি ডলার সমান ১১৭ টাকা ধরে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ১৯ হাজার ২৬৬ কোটি ৮৫ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। প্রতিদিন গড়ে রেমিটেন্স এসেছে ১১ কোটি ৭৬ লাখ ২৪ হাজার মার্কিন ২৮৫ ডলার। ১৯ জুন বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, সাধারণত রোজা, ঈদ, বাংলা নববর্ষকে ঘিরে প্রবাসীরা অন্য সময়ের চেয়ে বেশি অর্থ দেশে পাঠিয়ে থাকেন। তবে জুন মাসে রেমিটেন্সের এই উল্লম্ফনের পেছনে ঈদ ছাড়াও ‘অন্য কারণ’ রয়েছে। এবার গত মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে রোজা শুরু হলে এপ্রিলের মাঝামাঝি ঈদ পালিত হয়। এপ্রিলে রেমিটেন্সে ২১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পরে মে মাসে আরো বাড়ার পেছনে টাকার অবমূল্যায়ন কাজ করে বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা। গত ৮ মে একদিনে ৭ টাকা বাড়ে ডলারের দাম। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ এর শর্ত বাস্তবায়নে বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালুর অংশ হিসেবে ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেদিন ডলারের বিপরীতে টাকার মান ১১০ টাকা থেকে নির্ধারণ হয় ১১৭ টাকা। খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে রেমিট্যান্স প্রবাহে জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, জুন মাসের প্রথম ১৪দিনে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৩৯ কোটি ৪০ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ৪ কোটি ৩ লাখ মার্কিন ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১২০ কোটি ৮১ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৪২ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। একক ব্যাংক হিসাবে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৩৭ কোটি ৫১ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার প্রবাসী আয় এসেছে। বিদেশি উরি ব্যাংক, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান ও হাবিব ব্যাংকের মাধ্যমে কোনো প্রবাসী আয় আসেনি। আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, সিটিজেন ব্যাংক, কমিউনিটি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি ব্যাংক ও বিডিবিএল ব্যাংকের মাধ্যমেও কোন প্রবাসী আয় আসেনি।
উল্লেখ্য, প্রবাসী বাংলাদেশি রেমিট্যান্স যোদ্ধারা গত মে মাসে ২২৫ কোটি ৩৮ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় দেশে পাঠিয়েছেন। আর এপ্রিলে দেশে ২০৪ কোটি ৪২ লাখ ৩০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় পাঠায়। গত মার্চ মাসের পুরো সময়ে বিভিন্ন দেশে কর্মরত প্রবাসীরা মোট ১৯৯ কোটি ৭০ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার, ফেব্রুয়ারি মাসে ২১৬ কোটি ৪৫ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার, জানুয়ারি মাসে ২১১ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার, ডিসেম্বর মাসে ১৯৯ কোটি ১২ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার, নভেম্বর মাসে ১৯৩ কোটি ৪০ হাজার মার্কিন ডলার, অক্টোবর মাসে ১৯৭ কোটি ১৪ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার, সেপ্টেম্বর মাসে ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার, আগস্ট মাসে ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার, এবং জুলাই মাসে ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন।
বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ১৬১ কোটি ৭ লাখ ৩০ হাজার বা ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৬ লাখ ৮০ হাজার বা ২১ দশমিক ০৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ ১০ হাজার বা ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ হাজার ৮২০ কোটি ৫০ লাখ ১০ হাজার বা ১ দশমিক ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে মহামারী করোনার কারণে হুন্ডি বন্ধ থাকায় ব্যাংকিং চ্যানেলে সর্বোচ্চ সংখ্যক রেমিট্যান্স এসেছিল।
এদিকে বিএমইটির সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ তিন মাসে কাজ নিয়ে দেশের বাইরে গিয়েছেন দুই লাখ ৩৬ হাজার ৮৩৭ জন। অর্থাৎ তিন মাসের গড়ে দেশের বাইরে গিয়েছেন ৭৮ হাজার ৯৪৫ জন। আগের বছর ২০২৩ সালে বৈধপথে কাজ নিয়ে বিদেশ গিয়েছেন ১৩ লাখ পাঁচ হাজার ৪৫৩ জন। এ বছর প্রতিমাসে দেশের বাইরে গিয়েছেন একলাখ আট হাজার ৭৮৭ জন। তার আগের বছর ২০২২ সালের প্রতি মাসে বিদেশে গিয়েছেন ৯৪ হাজার ৬৫৬ জন। এ জনশক্তি রপ্তানি ধারা আগের বছর ২০২৩ সাল ছাড়া অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।