‘ট্রলের শিকার’ এনবিআর সদস্য মতিউর রহমান সাইবার ক্রাইমে যাচ্ছেন

নয়াবার্তা প্রতিবেদক : কোরবানি উপলক্ষে ১৫ লাখ টাকায় ছাগল কেনার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘ট্রলের শিকার’ হওয়া জাতীয় রাজস্ববোর্ড এনবিআর এর সদস্য মতিউর রহমান পুলিশের দ্বারস্ত হচ্ছেন। তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রলকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটে যাচ্ছেন তিনি।

বুধবার (১৯ ‍জুন) বিকালে গণমাধ্যমকে মতিউর রহমান নিজেই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে কোরবানি উপলক্ষে ১৫ লাখ টাকায় ছাগল কিনে আলোচনার জন্ম দেন ইফাত নামের এক তরুণ। ফেসবুকে সেই ছাগলসহ ওই তরুণের বক্তব্য ভাইরাল হয়। ওই সময় গুঞ্জন উঠেছিল তিনি এনবিআর এর সদস্য মতিউর রহমানের ছেলে।

এই ব্যাপারে ভুক্তভোগী এনবিআর সদস্য মতিউর বলেন, এই সন্তান আমার না, এটা রহস্যজনক। ‘আমার এক ছেলে ও এক মেয়ে। তিনি বলেন, ‘আমার একমাত্র ছেলের নাম আহমেদ তৌফিকুর রহমান আর মেয়ে ফারহানা রহমান। আমার বাসা রাজধানীর বসুন্ধরায়। একটি গোষ্ঠী আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। কেউ কেউ সামাজিক মাধ্যমে আমার ছবি ও নাম ব্যবহার করায় আমি বিব্রত।’যে ছাগল নিয়ে এত তুলকালাম ঘটল সেটাও বিক্রি হয়নি। সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাকে জড়িয়ে যেসব ট্রল হচ্ছে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমি পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের দ্বারস্ত হচ্ছি।

প্রসঙ্গত, ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে দেখা যায়, আলোচিত ছাগলটি সঙ্গে নিয়ে ওই তরুণ উচ্ছ্বসিত ভঙ্গিতে কথা বলছেন। ওই তরুণকে অন ক্যামেরায় বলতে শোনা যায়, ১১ জুন এটি ধানমন্ডি-৮ এ ডেলিভারি দেওয়া হবে। এরকম একটি খাসি কেনা আমার স্বপ্ন ছিল। এরকম খাসি আমরা সামনাসামনি দেখিনি। আমার জীবনে প্রথম দেখা এটা। এটা আমার হবে, জানা ছিল না। আল্লাহ নসিবে রাখছেন, তাই হইছে। এর থেকে বেশি কিছু আর কী বলব।

এদিকে, ঢাকার মোহাম্মদপুরে অবস্থিত ‘সাদিক এগ্রো’ ফার্ম এর কর্ণধার মো. ইমরান হোসেন বলেন, ‘১২ লাখ টাকায় ছাগলটি কেনার জন্য এক তরুণ ১ লাখ টাকা দিয়ে বুক করেছিলেন। ১২ জুন বাকি টাকা পরিশোধ করে ছাগলটি নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল; কিন্তু এর পর আমরা তাঁকে আর খুঁজে পাইনি। ছাগলটি আমাদের কাছ থেকে অনেকে কিনতে চেয়েছিল। বুকিং ছিল বলে আমরা সেটি বিক্রি করতে পারিনি। মুশফিকুর রহমান ইফাত নামের ওই তরুণকে আমরা খুঁজছি।’ ইমরান আরও বলেন, ‘ছেলেটি বলেছে, তার বাসা ধানমন্ডিতে। এর চেয়ে বেশি কিছু জানি না। কারণ, গ্রাহকের পারিবারিক ইতিহাস জানার অধিকার আমাদের নেই।’

ছাগলটির এই অস্বাভাবিক দাম কোরবানির পশুর বাজারে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করেছে। এ বিষয়ে সাদেক এগ্রোর মালিক ইমরান হোসেন বলেন, ‘কথাটি সঠিক নয়। কারণ, কোরবানি উপলক্ষে ১ হাজার ২০০ ছাগল ও ২ হাজার ১০০ গরু খামারে তুলেছি। এর মধ্যে কেবল একটি ছাগলের দাম ছিল ১২ লাখ টাকা; বাকিগুলোর ১৫-২০ হাজার। আর কেবল একটি গরুর দাম ছিল কোটি টাকা; বাকিগুলোর ৭০-৮০ হাজার বা দেড় লাখ।’ যে ছাগলের দাম নিয়ে এত কথা, সেটি ‘বিটল’ জাতের এবং বাংলাদেশে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ছাগল বলে জানান তিনি। ধূসর বাদামি ছাগলটির ওজন ১৭৫ কেজি, উচ্চতা ৬২ ইঞ্চি। যশোরের একটি হাট থেকে ১০ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় ছাগলটি কেনেন বলে জানান ইমরান হোসেন। ‘ছাগলটি কিনে ইফাত ১ লাখ টাকা অগ্রিমও দিয়েছে। তার রিসিট আমাদের কাছে আছে। ছাগলটি কিনে সে নিজেই ভিডিওতে বক্তব্য দিয়েছে। সে যদি সেলিব্রিটি হতো তাহলে (না হয়) তাকে আমরা ব্যবহার করতাম। তাকে তো কেউ চেনেই না। ছাগলটি অবিক্রীত থাকায় আমাদেরই লোকসান হয়েছে।’

একটি সূত্র জানায়, ছাগলটির ক্রেতা ইফাতের বাবা থাকেন বিদেশে এবং মা দেশে। তবে এই তথ্যের সত্যতা যাচাই করা যায়নি। ইফাত বলেন, ‘আমি সাদেক এগ্রোতে গরু দেখতে গিয়েছিলাম। আমি তখন ছাগলটির সঙ্গে ছবি তুলেছি, সবাইকে বলেছি, আমি ছাগলটি কিনেছি। আসলে ছাগলটি কেনা হয়নি।  

Share