নয়াবার্তা প্রতিবেদক : বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রায়শই সতর্কবার্তা ও গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে সরকারি তদারকি প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। কিন্তু এ বার্তা কোনোভাবেই আমলে নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ফলে যা হবার তাই হচ্ছে। অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনায় ভর করেই শিক্ষার্থী ভর্তি করছে, দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন স্তরের ডিগ্রি-সনদ । নানা অনিয়মের কারণে গত কয়েকবছর ধরে নির্দিষ্ট কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে সতর্কবার্তা জারি হয়। কিন্তু ঐ সব বিশ্ববিদ্যালয় ঐ বিজ্ঞপ্তি আমলেই নেয়নি।
তবে ইউজিসির সচিব ফেরদৌস জামান বলেন, গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা অন্তত সতর্ক হয়। শিক্ষার্থীরা জানতে পারে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের কী পরিস্থিতি, কারা নিয়ম মানছে, কারা মানছে না। আমরা বোঝাতে পেরেছি যে, যারা নিয়ম মানছে না সেখানে ভর্তি হলে শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত্ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কেন অনিয়ম থেকে সরে আসছে না এমন প্রশ্নের জবাবে ইউজিসির এক কর্মকর্তা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার ইউজিসির নেই। ব্যবস্থা নিতে পারে মন্ত্রণালয়। ইউজিসির কাছে ক্ষমতা থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেত।
ইউজিসির একাধিক কর্মকর্তার সাথে এ বিষয়ে কথা হলে তারা জানান, অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়মের প্রমাণের তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হলেও কোনো কাজ হয় না। অনেক দুর্নীতির প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে ফাইলবন্দি। তা হলে ইউজিসি কী করবে?
টানা কয়েকবছর ধরে অনুমোদন ছাড়া বেশ কয়েকটি ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি, সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটি। বারবার সতর্ক করা হলেও তারা অবৈধ ক্যাম্পাস কার্যক্রম থেকে সরে আসেনি।
ইউজিসি জানিয়েছে, ইউডা আটটি অনুমোদনহীন ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আর ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির আশুলিয়ায় স্থায়ী ক্যাম্পাস থাকলেও তারা শুক্রবাদের তিনটি ক্যাম্পাসে অবৈধভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি শুক্রবাদে দুইটি আর সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটি বনানীর চারটি ক্যাম্পাসে অবৈধভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সম্প্রতি এসব তথ্য উল্লেখ করে সতর্কবার্তা ও গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে ইউজিসি।
বোর্ড অব ট্রাস্টিজ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছে ইবাইস ইউনিভার্সিটি, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, কুমিল্লার ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এবং কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। মালিকানা দ্বন্দ্বের কারণে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। আর ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছে। বারবার তাগিদ দেওয়া হলেও ট্রাস্টি বোর্ডের দ্বন্দ্ব মেটেনি। ফলে ট্রাস্টিদের কোন্দলে শুধু শিক্ষার্থী নয়, কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারিরাও এখন বিপাকে। বর্তমানে ইবাইস বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত কোনো ঠিকানা নেই। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টিতে রাষ্ট্রপতির নিয়োগ করা উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নেই।
এশিয়ান ইউনিভার্সিটিতে দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রপতির নিয়োগ করা উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষ নেই। বারবার তাগাদা দিলেও কোনো লাভ হয়নি। প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটিতে রাষ্ট্রপতির নিয়োগ করা উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নেই। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সাবেক চেয়ারম্যানের অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠানো হয়েছে।
অননুমোদিত প্রোগ্রাম পরিচালনা করছে জেড এইচ সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পুন্ড্র ইউনিভার্সিটি। এই তালিকায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নামও আছে। তবে এ বিষয়ে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এখানে অনুমোদিত বিবিএ প্রোগ্রামে মেজর বিষয় হিসেবে এসব কোর্স পড়ানো হয়; যা ইউজিসির অনুমোদন আছে। তারপরও এখন এই প্রোগ্রামগুলোর আলাদা অনুমোদন নেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে।
শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা ৯৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৯টিতে রাষ্ট্রপতির নিয়োগ করা উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষ সবাই রয়েছেন। এ ছাড়া ৬৯ টিতে উপাচার্য, ২২টি উপ-উপাচার্য এবং ৫৬টিতে রাষ্ট্রপতির নিয়োগ করা কোষাধ্যক্ষ রয়েছে। ১৮টিতে রাষ্ট্রপতির নিয়োগ করা শীর্ষ তিন পদে কোনো ব্যক্তি নেই। অথচ এ বিষয়ে ইউজিসি থেকে প্রতিনিয়তই তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। ইউজিসি বলছে, যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয় মাসের বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োজিত উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নেই সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তি না হতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।